Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পরিবেশে ত্রাস ছড়াচ্ছে গোমাতার অন্ত্রের গ্যাস

বৈদিক গ্রন্থে শাস্ত্রকারেরা বলছেন, ‘অপ্সরা ও গন্ধর্বের শোভনগন্ধা গাভীর ন্যায় মেধা যেন আমার সঙ্গে যুক্ত হয়’ ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:১১
Share: Save:

বৈদিক গ্রন্থে শাস্ত্রকারেরা বলছেন, ‘অপ্সরা ও গন্ধর্বের শোভনগন্ধা গাভীর ন্যায় মেধা যেন আমার সঙ্গে যুক্ত হয়’ ।

যুগ যুগ ধরে জনহিতে জড়িয়ে থাকা এই উপকারী প্রাণীটির সর্বাঙ্গই উপমাস্থল। কিন্তু ভারত তথা গোটা বিশ্ব জুড়ে ত্রাস ছড়াচ্ছে এই ‘শোভনগন্ধা’ গাভীর বাতকর্ম এবং উদ্গার। বিজ্ঞানীরা বলছেন— গরুর অন্ত্রে এমন কিছু জীবাণুর উপস্থিতি যার ক্রিয়ায় খাদ্যবিয়োজনের পর পায়ুপথে যে বায়ু নিঃসরণ হয় (এবং উদ্গারে) তা মিথেন গ্যাসে ভরপুর। উষ্ণায়নে যার ক্ষতিকর ভূমিকা কার্বন ডাইঅক্সাইডের থেকে অন্তত কুড়ি গুণ বেশি।

গোটা বিষয়টিকে অবশ্য মানুষের ‘কুকর্মের পরিণাম’ বলে দাবি করছেন আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবারের নেতারা। ভারত রক্ষা মঞ্চের মুখপাত্র সূর্যকান্ত কেলকারের যুক্তি, ‘‘গরুর উপর অত্যাচারের পরিণাম এই বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণ। যে গোমাতার চার দিকে এক পাক ঘুরলে মানুষের বিকাশ হয়, তাকে কেটে খাওয়া হচ্ছে। এর ফল মানুষকে পেতেই হবে। এ বার নিজেদের সংযত করার সময় এসেছে। নয় তো পরিবেশ ছারখার করে মানুষকে শাস্তি দেবেন গোমাতা।’’

একমত নন বিজ্ঞানীরা। বরং আমেরিকা, ব্রিটেনের পর ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরিবেশ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে চলছে নিরন্তর গবেষণা। খোঁজা হচ্ছে মিথেন মুক্তির উপায়। বলা হচ্ছে শুধুমাত্র গরু নয়, মোষ বা ছাগলের মতো বেশ কিছু গবাদি পশুর ক্ষেত্রেও এই ঘটনাটি কমবেশি ঘটে থাকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের বিভাগের প্রধান পুনর্বসু চৌধুরীর মতে, ‘‘জাবর কাটার সময় থেকেই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। মিথেন গ্যাস নির্গমন অবশ্যই পরিবেশবিদদের কাছে বিরাট চ্যালেঞ্জ। গরুর অন্ত্রে অক্সিজেনবিহীন পরিস্থিতিতে অর্থাৎ অবাত বিয়োজনের সময়ই মিথেন তৈরি হতে থাকে। তা বেরিয়ে আসে তাদের বাতকর্মে।’’

সম্প্রতি আমদাবাদের ‘স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার’-এর গবেষকরা হিসেব কষে জানিয়েছেন, ভারতে গবাদি পশু থেকে প্রতি বছরে ১ কোটি ৬০ লক্ষ টন মিথেন নিঃসরণ হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান বিপুল জনসংখ্যার চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে ভারত ২০২২-এর মধ্যে দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৮ কোটি টন। গরু, মোষ, ছাগল, ভেড়া গ্রামীণ অর্থনীতির সঙ্গেও অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। কৃষি মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৭ শতাংশই আসে এই গবাদি পশু থেকে। কার্নালে ‘ন্যাশনাল ডেয়ারি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর কর্ণধার কে কে সিঙ্গাল বলেন, ‘‘দেশের অর্থনীতিতে গবাদি পশুর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবার উষ্ণায়ন এবং পরিবেশ দূষণও বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা দেশজ প্রক্রিয়ায় দুয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছি। কারণ পশ্চিমের থেকে আমাদের সমস্যার ধরন আলাদা।’’ তাঁর মতে, উন্নত দেশগুলির তুলনায় ভারতের অধিকাংশ গবাদি পশু রুগ্ণ এবং পুষ্টিহীন। অপুষ্টিতে ভোগা গরু মোষ থেকে মিথেন নিঃসরণের সম্ভাবনাও বেশি। আমেরিকায় মোনেনসিন নামে একটি অ্যান্টিবায়োটিক গরুকে দেওয়া হয়, যার ফলে মিথেন নিঃসরণ কমে আসে। কিন্তু ভারতে তার এত দাম যে পড়তায় পোষায় না।

সিঙ্গালের কথায়, ‘‘ইউরিয়া, গুড় আর মিনারেলের ব্লক ওই বিদেশি অ্যান্টিবায়োটিকের মতোই কাজ করে। গ্রামের কৃষক অথবা গোশালার মালিক, উষ্ণায়ন নিয়ে যাঁদের কোনও ধারণাই নেই তাদের কাছেও সস্তায় এটি পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে এর পুষ্টিগুণের প্রচার করে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Methane Cow Global warming মিথেন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE