Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সিপিএমে শতবর্ষের ডাকে ফিরল সেই ইতিহাসের বিতর্ক

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৩১
Share: Save:

চার বছর আগেই সুবর্ণ জয়ন্তী হয়েছে। কিছু দিন পরেই শুরু হচ্ছে শতবর্ষের প্রস্তুতি! তার বছরপাঁচেকের মধ্যে আবার এক বার শতবর্ষ!

কোনও পুজো কমিটির গোলমেলে বয়সের হিসেব মনে হচ্ছে? নাহ্! এই খতিয়ান সিপিএমের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর। অঙ্কে তারা মোটেও কাঁচা নয়। তা হলে এমন অদ্ভুত হিসেব কেন? টানাপড়েনটা আসলে রয়ে গিয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার ইতিহাসেই। যে বিতর্ককে আবার সামনে এনে ফেলেছে সিপিএমের সাম্প্রতিক একটি সিদ্ধান্ত।

পুজোর মুখে সিপিএমের রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠকে বলে দেওয়া হয়েছে, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পালনের সিদ্ধান্ত বিগত রাজ্য সম্মেলন এবং পার্টি কংগ্রেসেই হয়েছে। সেই অনুসারে সব জেলা কমিটিকে প্রস্তুতি নিতে হবে। কী ভাবে শতবর্ষ পালন হবে, তার বিশদ পরিকল্পনা অবশ্য এখনও হয়নি। সব রাজ্যেই দলকে ওই কর্মসূচি নিতে বলেছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে পরিকল্পনা চূড়ান্ত আকার নেবে লোকসভা ভোটের পরে। বাম রাজনীতিতে কোনও নেতা বা চিন্তাবিদের জন্মশতবর্ষ যেমন এক বছর ধরে পালিত হয়, এ ক্ষেত্রে পার্টি প্রতিষ্ঠার শতবর্ষও ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত উদযাপন হবে।

তবে পার্টির বয়স আর পার্টি প্রতিষ্ঠার বয়স এক নয়! ধাঁধাঁ এবং বিতর্ক সেখানেই! কলকাতার ত্যাগরাজ হলে ১৯৬৪ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বরের সম্মেলনে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে তৈরি হয়েছিল পৃথক দল সিপিএম। সোজা হিসেবে সেই ৭ নভেম্বরই (ঘটনাচক্রে, নভেম্বর বিপ্লবেরও দিন) সিপিএমের প্রতিষ্ঠার দিন। সেই হিসেবেই সিপিএমের বয়স এখন ৫৪। কিন্তু তারাই আবার দলের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করে ১৭ অক্টোবর! কারণ তারা মনে করে, ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর তাসখন্দে এ দেশের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এম এন রায়েরা। এ বার যদিও দুর্গাপুজোর অষ্টমী ছিল বলে ১৭ অক্টোবর কলকাতায় সিপিএমের প্রতিষ্ঠা দিবসের কোনও কর্মসূচি হয়নি। এই হিসেব মেনেই সামনে তাদের শতবর্ষ পালনের ডাক।

কিন্তু সেই হিসেবকেও অনেক আগেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসে আছে সিপিআই! তারা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করে ১৯২৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর কানপুরে প্রথম সম্মেলনের দিনটিকে ধরে। সিপিআইয়ের যুক্তি, ভারত যখন ব্রিটিশ শাসনাধীন, তখন বাইরে নানা জায়গাতেই কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে বিশ্বাসীদের গোষ্ঠী ছিল। তার মধ্যে তাসখন্দেরটাকে প্রতিষ্ঠাতা ধরা হবে কেন? তার চেয়ে মুজফ্ফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গেরা কানপুর ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত থাকাকালীন যখন প্রথম সম্মেলন হল, তখন থেকেই দেশে কমিউনিস্ট পার্টির সূচনা হল ধরা ভাল। এবং সিপিএমের শতবর্ষ পালনের তোড়জোড় শুনে সিপিআই নেতা মঞ্জুকুমার মজুমদার (যিনি বাংলায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস সংক্রান্ত বই সংকলন করেছেন) বলছেন, ‘‘এখন এক বার একশো বছর হবে। আবার পাঁচ বছর পরে সেই একই কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষ হবে! তার চেয়ে দেশের অর্থনীতি এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিপদের সময়ে সব কমিউনিস্ট এবং বামপন্থী আন্দোলনকে এক জায়গায় আনতে পারলে মানুষের উপকার হয়।’’

সাল-তারিখের বিতর্ক অস্বীকার না করেই সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘একটা প্রবাসে, একটা দেশে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার বার্ষিকী। দু’টোই আছে। নিজেদের পরম্পরা তো অস্বীকার করতে পারব না। তৃণমূল বলে কংগ্রেসে থেকে ভুল করেছিল। সে রকম বলতে পারব না মুজফ্ফর আহমেদ ভুল করেছিলেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPIM centenary observance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE