বারাসতে পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কর্মশালায় অনুরাধা ভাসিন জামওয়াল। —নিজস্ব চিত্র।
বন্দুক আছে। পাথর আছে। আবার তুলি আছে, কলমও আছে!
কাশ্মীরে কচি হাতও যখন পাথর তুলে নিচ্ছে ছোড়ার জন্য, কিশোর মন গ্রহণ করে নিচ্ছে বন্দুকের নীতি, তারই মধ্যে দানা বাঁধছে গান-কবিতা-ছবি-কনসার্টের মাধ্যমে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা। সেই বার্তা কখনও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে, কখনও রাষ্ট্রের রূ়ঢ়়তার বিরুদ্ধে। যাকে বলা হচ্ছে ‘সৃষ্টিশীল প্রতিরোধ’ (ক্রিয়েটিভ রেসিস্ট্যান্স)। পাথর-বন্দুকের হিংসাত্মক প্রতিবাদ যে হেতু সঙ্গে সঙ্গে প্রভাব ফেলে, তার খবরও বাকি দুনিয়ার কাছে পৌঁছয় দ্রুত। কিন্তু তার পাশাপাশি ধীরে ধীরে উপত্যকায় তৈরি হচ্ছে অন্য রকম প্রতিবাদের প্রবণতাও। সাংবাদিক শুজাত বুখারির হত্যাকাণ্ড এবং রাজ্য সরকার থেকে বিজেপির সমর্থন প্রত্যাহার-জনিত অস্থিরতার মধ্যে থাকা কাশ্মীর থেকে বাংলায় এসে অন্য রকম প্রতিবাদের কাহিনি শুনিয়ে গেলেন অনুরাধা ভাসিন জামওয়াল।
বারাসতে পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ‘রোজা লুক্সেমবার্গ স্টিফটাং’-এর সহায়তায় ‘ক্যালকাটা রিসার্চ গ্রুপে’র আয়োজনে প্রতিরোধ ও তার নানা পদ্ধতি সংক্রান্ত একটি কর্মশালায় শুক্রবার এসেছিলেন কাশ্মীরের সাংবাদিক অনুরাধা। তাঁর মতে, দশকের পর দশক ধরে যে কাশ্মীর নীতি নিয়ে চলেছে নানা সরকার, তারই পরিণতিতে উপত্যকায় তরুণ মন এখনও অশান্ত। এক দল মনে করে, অন্যায়-অবিচারের জবাব দিতে বন্দুক তুলে নেওয়াই উপযুক্ত রাস্তা। রাষ্ট্রের আচরণের প্রতিবাদ জানাতে পাথর বৃষ্টি হয়। আর এরই পাশাপাশি ইদানীং অন্য এক দল ছবি-কবিতা বা কনসার্টে প্রতিবাদের ভাষা ফুটিয়ে তুলতে শুরু করছে। অনুরাধার কথায়, ‘‘সৃষ্টিশীল প্রতিরোধের ছাপ যে হেতু থেকে যায়, তাই এই প্রতিবাদকে রাষ্ট্র ভয়ও পায় বেশি। অন্য দিকে আবার উন্নয়নের লক্ষ্যে হয়তো সৃষ্টিশীল বার্তা দেওয়া হল, সেখানে আসে সন্ত্রাসবাদীদের চাপ। ফলে, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই সৃষ্টিশীল প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে।’’
একান্ত আলাপচারিতায় অনুরাধা বলছিলেন এক কিশোরীর গল্প, যে অন্ধকার পরিস্থিতি বোঝাতে গভীর রঙের চমৎকার ব্যবহার করে ছবি এঁকেছে। সরকার যখন জুবিন মেটার কনসার্ট করে বোঝাতে চেয়েছে কাশ্মীরে সব ঠিক আছে, তখনই আবার ‘হকিকত-এ-কাশ্মীর’ নামে পাল্টা কনসার্ট করে বাস্তবের বার্তা দেওয়ারও চেষ্টা হয়েছে। অনুরাধার সংযোজন, ‘‘পাথর তো আপনি তুলে নিয়ে ছুড়ে দিলেই হল! কিন্তু এই ধরনের প্রতিবাদে অনেক অসুবিধা আছে। শেষ মুহূর্তে হয়তো কনসার্টের অনুমতিই বাতিল করে দেওয়া হল!’’
যে কাগজে অনুরাধা কর্মরত, শ্রীনগর, জম্মু-সহ একাধিক জায়গায় এবং একাধিক ভাষায় সংস্করণ আছে তাদের। গত প্রায় দু’দশক সরকারি বি়জ্ঞাপন তাদের বন্ধ। শুজাতের হত্যার পরে গোটা পরিস্থিতি আরও অস্বাভাবিক। কথা শেষ করার আগে কাশ্মীরি সাংবাদিক বলছিলেন, ‘‘কারা খুন করেছে, আমরা জানি না। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে যে কোনও মুহূর্তে সব শেষ হয়ে যেতে পারে, এই ভয়ঙ্কর বাস্তবটা এখন তাড়া করছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy