Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

উঠছে কার্ফু, ভূস্বর্গের মন জয়ের চেষ্টা

অবশেষে! ৫২ দিনের মাথায় কাল থেকে কার্ফুর চাদর উঠছে অশান্ত উপত্যকা থেকে। পুলওয়ামা জেলা ও শ্রীনগরের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় অবশ্য কার্ফু এখনই তোলা যাচ্ছে না। থাকছে ১৪৪ ধারার নিয়ন্ত্রণও। অর্থাৎ ১০ জন বা তার বেশি লোকের জমায়েত নিষিদ্ধই থাকছে কাশ্মীরে।

উঠছে কার্ফু, ছন্দে ফেরার অপেক্ষায় কাশ্মীর। ছবি: এএফপি।

উঠছে কার্ফু, ছন্দে ফেরার অপেক্ষায় কাশ্মীর। ছবি: এএফপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৫
Share: Save:

অবশেষে! ৫২ দিনের মাথায় কাল থেকে কার্ফুর চাদর উঠছে অশান্ত উপত্যকা থেকে। পুলওয়ামা জেলা ও শ্রীনগরের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় অবশ্য কার্ফু এখনই তোলা যাচ্ছে না। থাকছে ১৪৪ ধারার নিয়ন্ত্রণও। অর্থাৎ ১০ জন বা তার বেশি লোকের জমায়েত নিষিদ্ধই থাকছে কাশ্মীরে।

গত ৮ জুলাই হিজবুল জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকে কড়া হাতে বিক্ষোভ মোকাবিলার চেষ্টায় ফল তেমন মেলেনি। বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনী— রক্ত ঝরেছে দু’পক্ষেই। অন্তত ৬৮ জনের প্রাণ গিয়েছে সংঘর্ষে। এ বার তাই অন্য পথে কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার। অশান্ত কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে বিচ্ছিন্নতাকামী হুরিয়ত কনফারেন্সের সঙ্গেও এখন কথা বলতে রাজি কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী ও রাজ্যের মেহবুবা মুফতি সরকার। সে চেষ্টা শুরুও হয়েছে ইতিমধ্যে। পাশাপাশি ভূস্বর্গবাসীর আস্থা অর্জনে, সরকার ও প্রশাসনের মানবিক মুখ তুলে ধরার চেষ্টাও শুরু হল কার্ফু প্রত্যাহারের মাধ্যমে। এমন কিছু যে ঘটতে যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নিজেই আজ সকালে তাঁর আভাষ দিয়েছিলেন তাঁর মন কি বাত-এ। ওই রেডিও অনুষ্ঠানে তিনি আজ ‘একতা’র সঙ্গে ‘মমতা’র বার্তাও দেন জোরালো ভাবে। যে ভাবে কাশ্মীরে যুবকদের মৃত্যু হয়েছে তাতে গোটা দেশ যে চিন্তিত তা বুঝিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘কাশ্মীরে একটি জীবন যাওয়া মানে সেটা গোটা দেশের ক্ষতি, সকল দেশবাসীর ক্ষতি। গ্রামপ্রধান থেকে প্রধানমন্ত্রী, দেশের ১২৫ কোটি মানুষ এ ভাবেই দেখেন।’’ জানিয়েছেন, বিরোধী দলগুলির সঙ্গে কথা বলে সরকারও একমত যে একতা ও ভালবাসা— এই দুই মন্ত্রের মাধ্যমেই কাশ্মীর সমস্যার সমাধান সম্ভব।’’ এর সঙ্গে তিনি এটাও ঘোষণা করেছেন, এ-পারে বা ও-পারে, কাশ্মীর নিয়ে যারা ঘোঁট পাকাচ্ছে, দিল্লি তাদের রেয়াত করবে না।

কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার, উভয়েই এটা বুঝতে পারছে যে, বিচ্ছিন্নতাকামী হলেও হুরিয়ত নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার দরজা খুলতে না পারলে উপত্যকার অশান্ত তরুণদের শান্তির পথে ফেরানো যাবে না। যে কারণে মোদী ও মুফতি উভয়েই এখন ‘ট্র্যাক ২’ আলোচনার উপরেও জোর দিতে চাইছেন। যে তরুণ হিজবুল জঙ্গি নেতার মৃত্যুর জেরে অশান্ত হয়ে রয়েছে ভূস্বর্গ, সেই বুরহান ওয়ানির বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন শ্রীশ্রী রবিশঙ্কর। মেহবুবা দেখা করেছেন ছররা বন্দুকের গুলিতে জখম কিশোরীর সঙ্গে। তবে এ সবে নরম হতে নারাজ বিচ্ছিন্নতাকামী হুরিয়ত কনফারেন্স। কাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর মাত্র দু’মাস ক্ষমতায় আসা মেহবুবা ‘একটা সুযোগ’ চেয়েছিলেন তাদের কাছে। এর প্রতিক্রিয়ায় হুরিয়ত কনফারেন্সের মুখপাত্র আজ বলেছেন, ‘‘প্রভুদের খুশি করতে ও তুচ্ছ ক্ষমতার লোভে কাশ্মীরিদের হত্যা নিয়ে মেহবুবা দু’মুখো অবস্থান নিয়ে চলছেন। ক্ষতি করছেন কাশ্মীরিদের।’’ এ সব বন্ধ করে মেহবুবাকে মানুষের ‘ন্যায্য’ লড়াইয়ে সামিল হওয়ারও ডাক দিয়েছে হুরিয়ত।

হুরিয়ত এ ভাবে চাপে রাখতে চাইছে মেহবুবাকে। আর ইসলামবাদ নয়াদিল্লিকে। রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ দেশে দেশে কাশ্মীর সমস্যার কথা তুলে ধরতে ইতিমধ্যেই ২২ সদস্যের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল গড়েছে পাকিস্তান। যাদের কাজই হবে, কী ভাবে কাশ্মীরে ভারতীয় সেনা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে সেই বিষয়টি আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরে নয়াদিল্লির উপর চাপ বাড়ানো। কিন্তু বালুচিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সরব হয়ে পাকিস্তানকে পাল্টা চাপে ফেলার কৌশল নিয়েছেন মোদীও। তারই অঙ্গ হিসেবে এ বার পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে যাঁরা ভিটেমাটি ছেড়ে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁদের জন্য ২০০০ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ তৈরি করছে কেন্দ্র। সরকারি সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই এটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে মোদী আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে আলোচনা করেন। এর পরই সামনে আসে প্যাকেজের কথা।

এরই পাশাপাশি আজ ২৩তম মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘যারা কাশ্মীরের যুবকদের প্ররোচিত করছে তাদের ছেড়ে কথা বলে হবে না। কিশোরদের ঢাল বানিয়ে যারা পিছন থেকে অশান্তি সৃষ্টি করে যাচ্ছে, এক দিন তাদের সেই কিশোরদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’’ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার যে পথে এগোচ্ছে, তাতে বিরোধীদের সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের বক্তব্য, পাকিস্তানের প্রচ্ছন্ন মদত ছাড়া টানা ৫১ দিন ধরে বিক্ষোভ চালানো সম্ভব নয়। এই কাজে বিদেশ থেকে টাকাও পাঠানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই উপত্যকায় এ ধরনের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করেছেন গোয়েন্দারা, যেগুলির মাধ্যমে গত দেড় মাসে বিদেশ থেকে বড় অঙ্কের টাকা পাঠানো হয়েছে। আজও বারামুলা জেলায় সুলতানপুর এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জঙ্গি-নিরাপত্তাবাহিনী সংঘর্ষে। এই পরিস্থিতিতেও কাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এসে দেখা করে কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে তিন দফা কর্মসূচি হাতে নিয়ে এগোনোর জন্য কেন্দ্রকে সুপারিশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা। বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসা তার অন্যতম। মেহবুবা আজ এ নিয়ে জানান, হিংসার পথ ছাড়লে যে কারও সঙ্গেই কথা বলতে প্রস্তুত তাঁর সরকার। কংগ্রেসের মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি আজ বলেন, ‘‘দু’পক্ষে যত দ্রুত বৈঠক শুরু হবে তত তাড়াতাড়ি পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’’

কত দিনে হুরিয়তকে আলোচনার টেবিলে আনা যাবে তা নিয়ে সংশয় থাকলেও ট্র্যক ২ আলোচনার আবহ তৈরির চেষ্টা শুরু হয়েছে। নিহত জঙ্গি বুরহানের বাবা মুজফ্‌ফর ওয়ানি আজ শ্রীনগরে জানান, গত সপ্তাহে তিনি রবিশঙ্করের সঙ্গে উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন তাঁর বেঙ্গালুরুর আশ্রমে গিয়ে। রবিশঙ্করকে কাশ্মীরে এসে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর প্রভাব খাটানোর আর্জি জানিয়েছেন তিনি। মুজফ্‌ফর ওয়ানির কাছে রবিশঙ্কর জানতে চান, কাশ্মীরের মানুষ ঠিক কী চান। জবাবে মুজাফ্ফর বলেছেন, কাশ্মীরে এসে নিজেই তা বুঝে নিন।’’

কাশ্মীর নিয়ে এই জটিল পরিস্থিতির মধ্যে গণভোটের দাবি নিয়ে আজ মুখ খুলে বিতর্ক বাড়িয়েছেন গোবর্ধনপীঠের শঙ্করাচার্য অধোক্ষানন্দ দেবতীর্থ। তাঁর বক্তব্য, রাষ্ট্রপুঞ্জর নজরদারিতে এ-পার ও-পার— দুই কাশ্মীরেই গণভোট নেওয়া হোক। তাতেই আসতে পারে স্থায়ী শান্তি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE