Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

যাঁর অস্ত্রে বর্মা-বিদায় সেই কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনার নিজেই বিতর্কে!

সব সময়েই কপালে একটা দীর্ঘ লাল তিলক। তিনি যে উচ্চবর্ণের তেলুগু, ওই তিলকই তার প্রমাণ। নাম কোসারাজু ভিরাইয়া চৌদারি। সংক্ষেপে কে ভি চৌদারি। দেশের কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনার বা সিভিসি।

কোসারাজু ভিরাইয়া চৌদারি।

কোসারাজু ভিরাইয়া চৌদারি।

প্রেমাংশু চৌধুরী 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৯
Share: Save:

সব সময়েই কপালে একটা দীর্ঘ লাল তিলক। তিনি যে উচ্চবর্ণের তেলুগু, ওই তিলকই তার প্রমাণ। নাম কোসারাজু ভিরাইয়া চৌদারি। সংক্ষেপে কে ভি চৌদারি। দেশের কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনার বা সিভিসি।

এই চৌদারির রিপোর্টকে হাতিয়ার করেই নরেন্দ্র মোদী সরকার সিবিআই অধিকর্তার পদ থেকে অলোক বর্মাকে সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সেই চৌদারির ভূমিকাই এখন আতসকাচের তলায়। ২০১৫-য় মোদী সরকার যখন চৌদারিকে সিভিসি পদে নিয়োগ করে, তখনই প্রশ্ন উঠেছিল যে, যাঁর নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাঁকে কেন ভিজিল্যান্স কমিশনার করা হচ্ছে? আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ অভিযোগ তুলেছিলেন, কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের (সিবিডিটি)-র কর্তা হিসেবে সহারা-বিড়লা ডায়েরিতে ঘুষ নেওয়ার তালিকায় থাকা মোদীর নাম বাদ দিয়েছিলেন বলেই চৌদারিকে সিভিসি-র পদে বসানো হচ্ছে।

এ বার বর্মা-কাণ্ডে নতুন করে চৌদারির ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, বর্মাকে সরাতে কে ভি চৌদারি তথা সিভিসি-র দফতরের অপব্যবহার করছে মোদী সরকার। চৌদারিও ‘কৃতজ্ঞতাবশত’ সরকারকে সাহায্য করছেন। কারণ তাঁর নিজের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও মোদী সরকার তাঁকে সিভিসি পদে বসিয়েছে।

বর্মার ঘনিষ্ঠ মহলের অভিযোগ, বর্মার বিরুদ্ধে তদন্ত করার সময়ই চৌদারি তাঁর বাড়িতে গিয়ে প্রস্তাব দেন, রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তুলে নিলে, বর্মার কোনও চিন্তা থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন বলে পরিচিত আস্থানার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে চাননি বলেই বর্মার বিরুদ্ধে বিরূপ রিপোর্ট দেন চৌদারি।

আরও পড়ুন: ঘুম ছোটাব, টিপুকে নিয়ে হুঙ্কার মায়ার

কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির অভিযোগ, ‘‘বর্মাকে সরাতে মোদী সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে সিভিসি। সরকার সিভিসি-র ঘাড়ে বন্দুক রেখে গুলি ছুড়ছে।’’ গত ২৩ অক্টোবর মধ্যরাতে বর্মাকে ছুটিতে পাঠানোর সময়ও ভিজিল্যান্স কমিশনার চৌদারিকে কাজে লাগানো হয়েছিল বলে কংগ্রেসের অভিযোগ। ওই দিনই চৌদারির বিদেশ সফরে যাওয়ার কথা ছিল। আচমকা তিনি তা বাতিল করে জরুরি বৈঠক করেন। তার পরেই বর্মাকে সরানোর নির্দেশ জারি করেন। যে নির্দেশ খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, নিয়ম মেনে বর্মাকে ছুটিতে পাঠানো হয়নি।

সরকারি সূত্র বলছে, ভিজিল্যান্স কমিশনার পদে সাধারণত অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসারদের নিয়োগ করা হয়। চৌদারিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি আইএএস না হয়েও মোদী জমানায় ২০১৫-র জুনে সিভিসি-র শীর্ষপদে বসেন। তার আগে তিনি সিবিডিটি-র চেয়ারপার্সন ছিলেন। মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে কালো টাকার তদন্তে যে এসআইটি গঠন করে, তাতে নিয়োগ করা হয় চৌদারিকে। তা সত্ত্বেও তিনি সিবিডিটি-র তদন্ত বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য হিসেবে থেকে যান। এই সময়ই আয়কর দফতর দিল্লিতে সহারা-বিড়লার দফতরে তল্লাশি চালায়। সে সময় একটি ডায়েরিতে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ৫৫ কোটি টাকা ঘুষ দেওয়ার কথা ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তা নিয়ে তদন্ত ধামাচাপা পড়ার পিছনে এই চৌদারির ভূমিকা ছিল বলেও অভিযোগ।

এখানেই শেষ নয়। রঞ্জিত সিন্হা সিবিআই অধিকর্তা থাকাকালীন স্টকগুরু কেলেঙ্কারিতে চৌদারির নাম উঠে আসে। আবার বিতর্কিত মাংস ব্যবসায়ী মইন কুরেশির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তেও চৌদারি নাক গলানোর চেষ্টা করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ জানিয়েছেন সিবিআই-এর ডিআইজি মনীশ সিন্হা। এত অভিযোগ সত্ত্বেও তাঁকে ভিজিল্যান্স কমিশনার নিয়োগ করার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রশান্ত ভূষণ সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন। কিন্তু বিচারপতি অরুণ মিশ্রর বেঞ্চ তা খারিজ করে দেয়।

বর্মা সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ তুলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন আস্থানাকে সিবিআইয়ের স্পেশাল ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ করাতেও চৌদারির ভূমিকা ছিল। আস্থানার বিরুদ্ধে ছ’টি দুর্নীতির মামলা থাকায় আপ়ত্তি তুলেছিলেন বর্মা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং কর্মিবর্গ দফতরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সিভিসি সেই আপত্তি খারিজ করে দেয়।

যাঁকে নিয়ে এত বিতর্ক, সেই কে ভি চৌদারি কিন্তু নীরবই। দিল্লির সতর্কতা ভবনে কপালে লাল তিলক কেটে রুটিন মেনেই অফিস করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE