ফণীর তান্ডব। ছবি সৌজন্যে টুইটার।
এ রকম ঝড় জীবনে দেখিনি। এই প্রথম দেখলাম।এ এক বীভৎসতা! বিভীষিকা!
প্রবল তর্জন-গর্জন। বাড়ির চৌহদ্দির সব ক’টা গাছ অর্ধেক হয়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল চোখের সামনে। বাড়ির পাঁচিলের পাশে চার-পাঁচটা দেবদারু সেপাইয়ের মতো সকাল থেকে হাওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। হঠাৎ করেই পপাত চ মমার চ হল। বাড়ির পাঁচিল পুরো ন্যাড়া হয়ে গিয়েছে। কোনও গাছ আর দাঁড়িয়ে নেই। মনে হচ্ছে, ভুবনেশ্বরের একটা গাছও আর থাকবে না!
সাত দিন আগে থেকেই শুনছিলাম ফণী আসছে। এর আগে অসমে ছিলাম যখন, সেখানে ঝড়, বন্যা, রাস্তা ভেসে যাওয়া— সব রকমের অভিজ্ঞতাই ছিল। তাই ফণীকে একটু খাটো করেই দেখেছিলাম আমি। সকাল ৭টা নাগাদ মেঘলা আবহাওয়া আর ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যে বেশ মজা করে ছবি তুলছিলাম। হাওয়াটা বাড়ছিল।ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই গাছের মাথা উথালপাথাল হওয়া শুরু। বিদ্যুৎ চলে গেল আচমকা। ওটা আসলে বিপদের আশঙ্কায় ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়।১০টা বাজার আগেই হাওয়ার ধরনটা কেমন পাল্টে গেল। প্রবল বেগে ঘূর্ণির মতো হাওয়া বইছে। গাছগুলো অসম্ভব বেগে দুলছে। সঙ্গে সোঁ সোঁ আওয়াজ। বিশাল বিশাল দুটো শব্দ। আমাদের বাংলোর দরজা পেরিয়ে যে উঠোন, তখনও সেখানে দাঁড়ানো যাচ্ছিল। দেখলাম, দেওয়ালের পাশে একটা গাছের কাণ্ড মাঝ বরাবর মড় মড়করে ভেঙে গেল। ওটা তারই শব্দ ছিল।
অন্য জায়গায় কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না। কারেন্ট নেই বলে টিভি দেখতে পারছি না। মোবাইলের নেটওয়ার্ক মাঝে মাঝে চলে যাচ্ছে। কলকাতায় ফোন করে জানলাম, টিভিতে দেখাচ্ছে, কটকে টিনের ছাত উড়ে যাচ্ছে। ভুবনেশ্বরের বিভিন্ন জায়গার ছবি আসছে মাঝে মাঝে হোয়াট্সঅ্যাপে। আমাদের কলোনিতে একের পর এক বাড়ির দরজা-জানলার কাচ ভেঙে যাচ্ছে। তারই মধ্যে পুরীতে ল্যান্ড ফল হয়েছে বলে জানতে পারলাম। তখনও অনেক ভিডিও পাচ্ছিলাম। কারণ, তখনও বিএসএনএল-এর লাইনটা ছিল। তাইওয়াইফাই-টাওকাজ করছিল। আচমকাই সে সব গেল।
১১টা থেকে সওয়া ১১টা— এই ১৫ মিনিট ঝড়ের তাণ্ডব সবচেয়ে বেশি ছিল। উন্মত্ত আক্রোশে হাওয়া এসে গোটা তিনেক ঝাঁকড়া মাথাওয়ালা গাছের কোমর ভেঙে দিল। আমার বাংলোর তিন দিকের তিনটে বড় গাছ আধাআধি ভাঙা।বাড়ির পেছনের আমগাছের বড় বড় ডাল ভেঙে পড়ল। ঠিক ১২টা নাগাদআচমকা ঝড় থেমে গেল। আকাশ কালো। বৃষ্টি হবে? ঝড় কি আর আসবে না? ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফের প্রবলবেগে হাওয়া ফিরেএল।বিপুল তাণ্ডব এ বার। সব ভেঙেচুরে গেল যেন!
"Extensive damage to structure of AIIMS Bhubaneswar reported due to #CycloneFani . All patients,staff, students safe.Many water tanks have blown off,lighting poles are down, airconditioners damaged. We have enough supplies, ready to support the state" - Health Secy Preeti Sudan pic.twitter.com/Me1WHqZimY
— K.S. Dhatwalia (@DG_PIB) May 3, 2019
কাল রাতে শুতে যাওয়ার আগে এর কোনও আভাসই ছিল না। শুধু হালকা হাওয়া আরকয়েক পশলা বৃষ্টি ছিল। বাড়ির প্রতিটা আনাচকানাচ ঘুরে দেখে নিয়েছিলাম। অনেকগুলো জানলার ছিটকিনি ভাঙা ছিল। দড়িদিয়ে বাঁধাছাঁদা হল। বারোটার পর ঘুমিয়েছিলাম। বাইরে তাকিয়ে দেখেছিলাম, সব কেমন থমথমে আর শান্ত!
আর আজ,কিছুই ভাবতে পারছি না।শুধু এটুকু জানি, এরকম ঝড় জীবনে দেখিনি। আন্ডার এস্টিমেট করেছিলাম ফণীকে।
আরও পড়ুন: উড়ে যাচ্ছে স্কুলবাস, গাড়ি, বাড়ির চাল, দেখুন ফণীর ভয়ঙ্কর সব ভিডিয়ো
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy