শাহজাহানের লাল কেল্লার দেখভাল করবে সিমেন্ট কোম্পানি! প্রিয় বেগমের স্মৃতিতে তৈরি মুঘল সম্রাটের তৈরি তাজমহল হয়তো চলে যাবে সিগারেট কোম্পানির দখলে!
ডালমিয়া ভারত গোষ্ঠীর হাতে লাল কেল্লার মতো ঐতিহাসিক সৌধ দেখভালের দায়িত্ব তুলে দেওয়ায় এ বার প্রশ্ন উঠে গেল নরেন্দ্র মোদী সরকারের জাতীয়তাবাদ নিয়েই। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের কোষাগারে কি লাল কেল্লা, তাজমহলের মতো সৌধ দেখভালের অর্থও নেই?
শুধু লাল কেল্লা বা তাজমহলই শেষ নয়। কোণার্কের সূর্য মন্দির, অজন্তা গুহা বা চার মিনারের মতো ঐতিহাসিক সৌধও বেসরকারি সংস্থাকে ‘দত্তক’ দেওয়ার নীতি নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। গত সেপ্টেম্বরেই চালু হয়েছিল ঐতিহাসিক সৌধ দত্তক (অ্যাডপ্ট এ হেরিটেজ) প্রকল্প। পর্যটন মন্ত্রক সম্প্রতি চুক্তি সই করেছে ডালমিয়া ভারত গোষ্ঠীর সঙ্গে। বছরে ৫ কোটি টাকা— এই হিসেবে আগামী পাঁচ বছর ধরে ২৫ কোটি টাকা খরচ করে ডালমিয়া গোষ্ঠী লাল কেল্লায় পর্যটকদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা, রাতের আলোকসজ্জা, পানীয় জল, শৌচালয়ের বন্দোবস্ত করবে বলে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। বিনিময়ে ‘দত্তক’ নেওয়া সৌধে এবং পর্যটন মন্ত্রকের ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া’-র ওয়েবসাইটে সংস্থার নাম ভাল ভাবে চোখে পড়ার বন্দোবস্ত হবে।
ঐতিহাসিক সৌধের সঙ্গে নাম জুড়ে যাওয়া এবং সেই সুযোগে প্রচারের এ হেন সুযোগ নিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কর্পোরেট সংস্থাগুলি। লাল কেল্লার বরাত জিতে নিয়েছে সিমেন্ট সংস্থা ডালমিয়া ভারত। তাজমহল-কে ‘দত্তক’ নিতে আগ্রহী জিএমআর, আইটিসি-র মতো কর্পোরেট সংস্থা।
কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সূরজেওয়ালার প্রশ্ন, ‘‘ঝুটো জাতীয়তাবাদের বুলি আওড়ানো নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ কি লাল কেল্লাকে বন্ধক রাখার আগে স্বাধীনতার ইতিহাসে তার গুরুত্বের কথা জানেন? এই লাল কেল্লার র্যামপার্ট থেকেই ১৮৫৭-র স্বাধীনতার যুদ্ধের ডাক দেওয়া হয়েছিল। এখানেই আইএনএ-র ঐতিহাসিক বিচারপর্ব হয়েছিল। সেই লাল কেল্লার দেওয়ালে এ বার কর্পোরেট সংস্থার সাইনবোর্ড ঝুলবে!’’ একই সঙ্গে মোদী সরকারকে বিদ্রুপ করে কংগ্রেসের খোঁচা, ‘‘এ বারে কি তালিকায় সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনও থাকবে?’’
প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী মহেশ শর্মা জানান, ঐতিহাসিক সৌধের প্রযুক্তিগত সংরক্ষণের দায়িত্ব থাকবে ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ (আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া)-এর হাতেই। শুধু পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা, সাজসজ্জার কাজ সরকারি-বেসরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে হবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সামনে এ দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভাল ভাবে তুলে ধরতেই এই সিদ্ধান্ত। যদিও ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিম্পল বলেন, ‘‘দত্তক না দিয়েও ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ সৌধগুলিকে রক্ষণাবেক্ষণের অনেক উপায় আছে।’’
সমালোচনায় সরব অন্যরাও। সিপিএম নেতৃত্বের যুক্তি, হেরিটেজ সৌধ দেখভালের দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব সর্বসম্মত ভাবে খারিজ করেছিল সংসদীয় কমিটি। মোদী সরকারকে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বলেছে দল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদী সরকারকে তুলোধনা করে বলেছেন, ‘‘লাল কেল্লা আমাদের দেশের একটা প্রতীক। স্বাধীনতা দিবসে এখানেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এটা কেন ভাড়া দেওয়া হবে? ইতিহাসের একটা কালো এবং অন্ধকার দিন।’’
সর্বভারতীয় ইমাম অ্যাসোয়িয়েশনের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ রশিদির প্রশ্ন, ‘‘হাল কি এতই খারাপ যে এই সব ইসলামিক সৌধ রক্ষণাবেক্ষণে সরকার বছরে পাঁচ কোটি টাকাও খরচ করতে পারে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy