তুলি, পেন্সিল নিয়ে পোর্ট্রেট শিল্পী পার্থ রায়। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।
ছোট একটি ব্যাগে কয়েকটা তুলি, পেন্সিল আর ছবি আঁকার চার্ট পেপার। তার সঙ্গেই কয়েকটা জামা-প্যান্ট আর টুথ ব্রাশ, সাবান। এই নিয়েই বেরিয়ে পড়েছেন বারাসতের বাসিন্দা, বছর চল্লিশের মূক-বধির পোর্ট্রেট শিল্পী পার্থ রায়। শীতের শুরু থেকেই ঘুরতে শুরু করেছেন বিভিন্ন বইমেলায়। এখন তাঁর ঠিকানা জামশেদপুর বইমেলা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই তিনি একা ঘুরে বেড়াচ্ছেন একের পর এক বইমেলায়। বইমেলার মাঠে বসে ৩০০ টাকার বিনিময়ে দশ মিনিটে এঁকে দিচ্ছেন পোর্ট্রেট।
কলকাতা বইমেলা থেকে শুরু করে দিল্লি বইমেলা, ঢাকা বইমেলা থেকে শুরু করে গুয়াহাটি বইমেলা, আগরতলা বইমেলা। ফি বছর বইমেলা-সফরে বেড়িয়ে পড়েন পার্থবাবু। বিভিন্ন প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করে লোটাকম্বল (পড়ুন, ছোট ব্যাগ) নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। জামশেদপুর বইমেলায় পার্থকে ঘিরে ভিড় জমে যাছিল দুপুর থেকেই। মূক ও বধির এই শিল্পীর সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হল ইশারা, লিখে লিখে কথা বলা ও এসএমএস। পোর্ট্রেট আঁকার শেষে কাগজের নিচে লিখে দিচ্ছেন তাঁর মোবাইল নম্বরটি। আর লিখছেন, ‘প্লিজ এসএমএস’।
এই এসএমএস রুজির বাইরেও পার্থকে জোগায় বাড়তি মনোবল। পার্থ লিখে জানালেন, ‘‘দিনের শেষে মোবাইল খুলে এসএমএসগুলো পড়ি। অনেকে খুশি হয়ে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সবার পোর্ট্রেট আঁকার অনুরোধ করেন। এই এসএমএসগুলোই আমার পরের দিনের কাজ করার শক্তি জোগায়।’’ তবে পোর্ট্রেট আঁকাচ্ছেন যাঁরা, শুধু তাঁদের ধন্যবাদ সূচক এসএমএসই নয়। এসএমএস আসে বারাসত থেকে, পার্থর দশ বছরের মেয়ের। ব্যাগের ভিতর থেকে মোবাইল বের করে পার্থ দেখায় মেয়ের পাঠানো সেই সব এসএমএস। ‘‘বাবা তুমি কেমন আছ।’’ ‘‘কবে বাড়ি আসবে?’’ ‘‘আজ তুমি কী খেয়েছ?’’ চোখ চিকচিক করে ওঠে শিল্পীর।
কিন্তু এখন পার্থর বাড়ি যাওয়ার সময় কোথায়? সারা বছর তো সে ভাবে কাজ জোটে না। বইমেলাগুলোই উপার্জনের ভরসাস্থল। একমাত্র কলকাতা বইমেলা থেকেই তিনি দিনের শেষে বারাসতের বাড়ি ফিরতে পারেন। তা ছাড়া সব বইমেলাই তো দূরে দূরে। তাই বাড়ি ফেরা হয় না। কিন্তু এসএমএসের জবাব দেন নিয়ম করে। জানতে চান দশ বছরের শিশুটির সেদিনের স্কুলের কথা, বাড়ির কথা।
জামশেদপুরের বইমেলা শেষ। ফের প্রকাশকদের সঙ্গে ‘লোটাকম্বল’ বেঁধে পরের বইমেলার জন্য প্রস্তুত পার্থ রায়। জামশেদপুরের বইমেলার আয়োজক টেগোর সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আশিস চৌধুরীর কথায়, ‘‘পার্থ গত পাঁচ বছর ধরে এখানে আসছেন। ওর মনের জোর দেখে অবাক হয়ে যাই। পার্থ মূক ও বধির তো কী হয়েছে, ওর আঁকা ছবিগুলো তো কথা বলছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy