Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গাঁধী-হত্যায় সঙ্ঘের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ শুরু রাহুলের

উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের মুখে নাটকীয় ভাবে কৌশল বদলে আরএসএসের সঙ্গে প্রকাশ্য লড়াইয়ে নেমে পড়লেন রাহুল গাঁধী।লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় মহারাষ্ট্রের এক জনসভায় রাহুল বলেছিলেন, আরএসএসের লোকেরাই মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীকে হত্যা করেছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:১২
Share: Save:

উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের মুখে নাটকীয় ভাবে কৌশল বদলে আরএসএসের সঙ্গে প্রকাশ্য লড়াইয়ে নেমে পড়লেন রাহুল গাঁধী।

লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় মহারাষ্ট্রের এক জনসভায় রাহুল বলেছিলেন, আরএসএসের লোকেরাই মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীকে হত্যা করেছিলেন। আরএসএস এই মন্তব্য নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে। মামলা খারিজের দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন রাহুল। কোর্টে রাহুল বলেছিলেন, তিনি গাঁধী-হত্যার জন্য গোটা আরএসএসকে দায়ী করেননি। কিন্তু সেই মন্তব্যের জেরে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে আজ ফের অবস্থান বদল করে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি জানালেন, আরএসএসের ‘লোকেরা’ গাঁধী-হত্যা করেছেন বলে করা মন্তব্যে তিনি অনড়। সুপ্রিম কোর্টে মামলা প্রত্যাহার করে মহারাষ্ট্রের ভিওয়ান্ডি আদালতে শুনানির মুখোমুখি হতেও তিনি রাজি।

আজ সুপ্রিম কোর্টে রাহুলের আইনজীবী কপিল সিব্বল অনুরোধ করেন, কংগ্রেসের সহ-সভাপতির সশরীর হাজিরা যদি রদ করা যায়। কিন্তু শীর্ষ আদালত তা খারিজ করে দেয়। ফলে পরবর্তী শুনানিতে রাহুলকে সশরীর হাজির থেকেই মামলার মুখোমুখি হতে হবে।

প্রশ্ন হল, দু’বছর ধরে মামলা থেকে নিষ্কৃতি চাওয়ার পরেএখন রাহুল কেন কৌশল বদলে আরএসএসের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে নামলেন?

কংগ্রেসের শীর্ষ সূত্রের খবর, প্রতিষ্ঠান হিসেবে আরএসএস যে গাঁধীকে হত্যা করেনি, আদালতে এ কথা বলে পার পেয়ে যাওয়ার পরামর্শ রাহুলকে গোড়ায় দেওয়া হয়েছিল। রাহুলও আদালতে সে কথাই বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই মন্তব্য নিয়েই প্রচারে নেমে আরএসএস-এর তরফে বলা শুরু হয়, রাহুল পিছু হটেছেন। শুধু এই প্রচার চালানো নয়, চাপ বাড়িয়ে রাহুলকে দিয়ে ক্ষমা চাওয়ানোর কৌশলও নিয়েছিল আরএসএস। ফলে অস্বস্তি বাড়ছিল কংগ্রেসের। তা ছাড়া উত্তরপ্রদেশে ভোটের মুখে মুখ পুড়ছিল। এই পরিস্থিতিতে রাহুল নিজেই ঘনিষ্ঠ কয়েক জনের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন, ক্ষমা না চেয়ে তিনি নিজের বক্তব্যে অনড় থাকবেন। কংগ্রেস সূত্রে বলা হয়, ইতিহাসের পাতায়, বিভিন্ন বই এমনকী সরকারি নথিতেও বারবার লেখা হয়েছে, গাঁধী-হত্যাকারী নাথুরাম গডসে সরাসরি আরএসএসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই পটেলেরও একাধিক চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, সঙ্ঘ সাম্প্রদায়িক কাজে লিপ্ত। গাঁধী-হত্যার পর আরএসএস মিষ্টি বিতরণ করেছিল বলেও সে সময় খবর হয়েছিল। ফলে এই ধরনের মন্তব্য রাহুল প্রথম করেননি। সুতরাং মন্তব্যেই অনড় থাকা উচিত রাহুলের।

কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, শুনানি শেষে রাহুলের যদি সাজাও হয়, তা হলেও আরএসএসের মতো ‘বিভাজনকারী’ শক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক ও আদর্শগত লড়াই করে শহিদের তকমা পেতে পারেন দলের সহ-সভাপতি। এই মামলার সূত্র ধরে স্বাধীনতার ইতিহাসে নেহরু-গাঁধী পরিবারের ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করা যাবে। অন্য দিকে, উত্তরপ্রদেশে ভোটের আগে দলের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা হবে। ফলে সংখ্যালঘু ভোট টানা যাবে, আধুনিক হিন্দুদেরও কাছে টানা সম্ভব। যে কারণে সিব্বল বলেছেন, ‘‘আসল লড়াই হল, আরএসএসকে বলতে হবে নাথুরাম গডসে প্রকৃত হিন্দু ছিলেন কি না। আসল হিন্দু কখনও গাঁধীকে মারতে পারে না। আমিও হিন্দু, কিন্তু আরএসএসের বিচারধারা আমি মানি না।’’

আরএসএস নেতৃত্ব মনে করছেন, রাহুলের এই সাম্প্রতিক ভোল বদলের পিছনে রয়েছে গত কাল হরিয়ানায় ধিংড়া কমিশনের রিপোর্ট। গাঁধী পরিবার আশঙ্কা করছে, রবার্ট বঢরার জমি কেলেঙ্কারি সামনে আসতে পারে। তাই মোড় ঘোরাতে রাহুল সাহসী মুখ দেখাতে চাইছেন। এ বারে প্রথম শুনানিতেই তাঁকে জামিন নিতে হবে। সঙ্ঘের নেতা মনমোহন বৈদ্য এ দিন বলেন, ‘‘তা হলে রাহুল গাঁধী কোনও না কোনও অজুহাতে গত দু’বছর ধরে কেন শুনানি এড়ালেন? তিনি কি সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছিলেন?’’ রাহুলের এই মত বদলের পরে বিজেপি শিবির আজ বলতে শুরু করেছে, রাহুল ইতিহাস জানেন না। সঙ্ঘের উপর এক সময় যেমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, তেমনই জওহরলাল নেহরু আমলেই সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে তাদের কুচকাওয়াজে ডাকা হয়েছিল।

বিজেপি নেতা শ্রীকান্ত শর্মা এ দিন বলেন, ‘‘এই রাহুলের বাবা রাজীব গাঁধী এক সময় বলেছিলেন, বড় গাছ পড়লে জমি নড়ে যায়। তা হলে তো শিখ দাঙ্গার জন্য গোটা কংগ্রেসকে জেলে যেতে হয়! জরুরি অবস্থার সময় নির্দোষদের জেলে পাঠানোর জন্য গোটা কংগ্রেসকে জেলে যেতে হয়! আরএসএস সমাজসেবী সংগঠন। ইতিহাস তার সাক্ষী। আসলে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে রাহুল সংখ্যালঘু তোষণ করতে চাইছেন।’’

আজ আর এক প্রস্ত বিতর্ক তৈরি হয় আকাশবাণীর টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট হওয়া কিছু মন্তব্যে। ওই টুইটে লেখা ছিল, ‘‘উনি আগে ভয় পেলেন কেন? আরএসএস-কে অসম্মান করার সাহসই বা পেলেন কোথা থেকে? ওঁর নিজের মন্তব্যে অনড় থাকা উচিত ছিল।’’ কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সূর্যেওয়ালা সেটি ফের পোস্ট করে অভিযোগ করেন, গেরুয়া শিবিরের হয়ে রাহুলকে নিশানা করছে অল ইন্ডিয়া রেডিও। কংগ্রেস সরব হতেই ওই টুইট মুছে দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

RSS Rahul gandhi Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE