Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ব্যবসা বেহাল, টান পুজোর বাজেটে

রাজধানীর বুকে বেশ কয়েকটি পুজো আয়োজনের পুরোভাগে রয়েছেন প্রবাসী বাঙালি সোনা ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তাঁদের বড় অংশই এক বাক্যে বলছেন, চাহিদার খরায় গয়না ব্যবসা তলানিতে ঠেকেছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯ ০২:২১
Share: Save:

উৎসাহে বিন্দুমাত্র ভাটা নেই। চেষ্টার খামতি নেই যথাসাধ্য আয়োজনে। আবেগ টইটম্বুর। তবু হিসেবের খাতা কোলের কাছে টেনে বসলে কপালে চিন্তার ভাঁজ দিল্লির অনেক পুজো উদ্যোক্তারই। কারণ, অন্য বার চাঁদা যতটা ওঠে, এ বছর আদায় তার তুলনায় বেশ খানিকটা কম। টাকা ঢালতে কুণ্ঠিত কর্পোরেটও। তাই কোন খাতে খরচ ছেঁটে কোন চাহিদা সামাল দিতে হবে, সেই হিসেব কষতেই রাতের ঘুম ছুটেছে তাঁদের। এ জন্য দেশের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতির দিকেই আঙুল তুলছেন তাঁরা।

রাজধানীর বুকে বেশ কয়েকটি পুজো আয়োজনের পুরোভাগে রয়েছেন প্রবাসী বাঙালি সোনা ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তাঁদের বড় অংশই এক বাক্যে বলছেন, চাহিদার খরায় গয়না ব্যবসা তলানিতে ঠেকেছে। বিক্রিবাটা খাদে। কাজ হারিয়ে রাজ্যে ফিরে গিয়েছেন বহু কর্মী। এই পরিস্থিতিতে মোটা চাঁদা দেওয়ার লোক তো কমেইছে, আব্দার নিয়ে কারও কাছে যেতেও কুণ্ঠা বোধ করেছেন উদ্যোক্তারা। ফলে অবধারিত ভাবেই কাটছাঁট করতে হয়েছে বাজেটে।

বিডনপুরা দূর্গপূজা সমিতির চেয়ারম্যান বিভাসচন্দ্র মাইতির কথায়, সেই নোটবন্দি থেকে শুরু। তার পরে জিএসটি, গয়না কেনায় প্যান দাখিলের কড়াকড়ি আর এখন সোনার চড়া দাম। একের পর এক ধাক্কায় কার্যত কোমর ভেঙে গিয়েছে গয়না শিল্পের। ফলে অন্য বার যেখানে ২৮-৩০ লক্ষ টাকা মতো চাঁদা ওঠে, এ বার তা নেমে এসেছে ২০ লক্ষে। অথচ জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় বেড়েছে খরচ। তাই প্যান্ডেলের জাঁকজমক থেকে শুরু করে আলো— বিভিন্ন খাতে খরচ ছাঁটাই করতেই হচ্ছে বলে মেনে নিয়েছেন তিনি।

একই মতের শরিক শ্রীশ্রীদুর্গাপূজা সমিতির গৌরাঙ্গ খদ্দার, করোলবাগ পূজা সমিতির প্রেসিডেন্ট রবীন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ব্যবসায় টানের কারণে চাঁদায় ভাটা আর তার জেরে পুজোর বাজেট কমাতে বাধ্য হওয়ার আক্ষেপ তাঁদের কথাতেও। কোথাও আলোর খরচে কোপ পড়েছে, কোথাও কমেছে ঢাকির সংখ্যা।

প্রায় একই ছবি অন্য এমন অনেক প্যান্ডেলে, যেখানে উদ্যোক্তারা শুধু সোনার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। খরচের একটা বড় অংশ যাঁরা কর্পোরেট স্পনসরশিপ থেকেও পেতে অভ্যস্ত। নয়ডায় বলাকার পুজোর অন্যতম আয়োজক অনুজকান্তি চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘পুজোয় চাঁদা হিসেবে নগদে মোটা টাকা দিতেন বহু ব্যবসায়ী। কিন্তু বিক্রি ঝিমিয়ে থাকায় হাত গুটিয়েছেন অনেকে।’’ বিলবোর্ড, মণ্ডপের কাছে বিজ্ঞাপন ইত্যাদির বিনিময়ে বিভিন্ন সংস্থা যে টাকা দিত, তার অঙ্কও এ বার বেশ কম বলে মানছেন তিনি। কবুল করছেন, ‘‘গত বার যেখানে ৩০ লক্ষ টাকা বাজেট ছিল, এ বার তা টেনেটুনে ২২ লক্ষ।’’

এই টানাটানির কারণেই চন্দননগরের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া কিংবা নামী শিল্পী এনে মঞ্চ মাতানোর ইচ্ছে জলাঞ্জলি দিতে হচ্ছে অনেক পুজো কমিটিকে। তাদের আক্ষেপ, ‘‘বিক্রিই যদি না থাকে, বিভিন্ন গাড়ি, ভোগ্যপণ্য সংস্থা টাকা আর দেবে কোথা থেকে? তারাই তো মূল স্পনসর।’’ অনেক উদ্যোক্তা বলছেন, সাধারণত এই পুজোর সময়ে ফি বছর কলকাতা থেকে নামী ব্যান্ড এবং শিল্পী আসেন দিল্লিতে। মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন এমনকি বলিউডের শিল্পীরাও। কিন্তু এ বার সেই সংখ্যা অন্য বারের তুলনায় চোখে পড়ার মতো কম। খরচের কথা মাথায় রেখে তার বদলে ঝোঁক বিভিন্ন টিভি-প্রতিযোগিতায় জেতা শিল্পীদের নিয়ে আসার। যুক্তি, পুজো বা প্রসাদের খরচ তো চট করে কমে না। তাই প্রথম কোপ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেই।

অর্থনীতির চাকা বসে যাওয়ায় মায়ের আগমনিতেও বাজেট-বিষাদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Economy Indian Economy Goldsmith
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE