Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
National News

আঞ্চলিক নেতার অভাব নিয়ে প্রশ্ন

মোদী তো মুখ্যমন্ত্রী হবেন না। তা হলে?

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:৪৫
Share: Save:

আপ-এর সামনে অরবিন্দ কেজরীবাল। বিজেপির সামনে কে?

ভোটের সময় প্রশ্ন ছুড়েছিলেন কেজরী। উত্তর আসছিল, নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু মোদী তো মুখ্যমন্ত্রী হবেন না। তা হলে? ‘হিহি হিহি’ গান গেয়ে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আসছিলেন ‘রিঙ্কিয়া কে পাপা’। দিল্লি বিজেপির সভাপতি মনোজ তিওয়ারিকে গোটা দিল্লি এই নামে চেনে তাঁরই এক ভোজপুরি গানের দৌলতে। তিনি বলছিলেন, ‘‘সব দিল্লিবাসীই আমাদের মুখ্যমন্ত্রী।’’ অমিত শাহ এ কথা বলতেই শিখিয়ে দিয়েছিলেন তাঁকে।

অথচ ভোটের তিন মাস আগেই সভাপতি পদ থেকে মনোজকে সরানোর প্রস্তাব দিয়েছিল সঙ্ঘের একাংশ। কিন্তু তাতে পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, বিহার থেকে আসা দিল্লির বাসিন্দাদের গোঁসা হবে না তো? এ সব ভেবে আর সরানো হয়নি। আর তাঁকে সরালে মুখ কে হবেন? এই প্রশ্ন উঠলেই দিল্লি বিজেপির সাতজন নেতা ছুটে আসতেন। অথচ তাঁদের বেশির ভাগেরই জনভিত্তি নেই, একজন অন্যের মুখও দেখতে চান না। শেষে আর কাউকেই মুখ করা হয়নি। দলে শুধু বার্তা ছড়ানো হয়েছিল, বিজেপি জিতলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষবর্ধনের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়তে পারে।

আরও পড়ুন: আদালত কী বলে, শুনবে শাহিন বাগ

দিল্লিতে ভরাডুবির পর আজ মনোজ ইস্তফা দিতে চেয়েছেন। নতুন সভাপতি নিয়োগ পর্যন্ত তাঁকে পদে থাকতে বলা হয়েছে। তবে দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে, ‘নরেন্দ্র মোদীর মুখ আর অমিত শাহের কৌশল’ দেখিয়ে আর কত রাজ্য সামলানো যাবে? রাজ্যে রাজ্যে কি বিজেপির ওজনদার মুখের দরকার নেই? কিন্তু একই সঙ্গে সংশয়ও রয়েছে বিজেপিতে— মোদী-শাহ জমানায় রাজ্যের নেতাদের উত্থান সম্ভব কি? বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘মোদী-শাহ না হয় গুজরাত থেকে এসেছেন। তার আগে সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি, প্রমোদ মহাজন, বেঙ্কাইয়া নায়ডু, রাজনাথ সিংহের মতো এক ঝাঁক মুখ কিন্তু অটল-আডবাণী জমানায় নেতা হয়েছেন। তাঁদের সময়েই শিবরাজ সিংহ চৌহান, রমন সিংহ, বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার মতো নেতৃত্ব রাজ্যে রাজ্যে গড়ে উঠেছে। কিন্তু মোদী-শাহ জমানায় প্রতিষ্ঠিত নেতাদেরই বা কদর কোথায়? আর যাঁদের নেতা করা হচ্ছে, জনভিত্তি ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার নিরিখেও তাঁরা পিছিয়ে। অথচ সোজা মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন!’’

বিজেপির এক নেতা স্মরণ করালেন, ‘‘বরাবর দলের সাধারণ সম্পাদকদের ওজন থাকে। কিন্তু অমিত শাহ বিজেপির যে টিম গড়ে গিয়েছেন, সেখানে সাধারণ সম্পাদকদের সে ভাবে কেউ চেনেন? তাঁদের কাজ শুধু শাহের নির্দেশ পালন করা। দিল্লিতে মদনলাল খুরানা, সাহেব সিংহ বর্মার পর কোনও নেতার আবির্ভাব হয়নি। নতুন নেতা তৈরিতেও খুব বেশি নজর নেই বর্তমান নেতৃত্বের।’’ আজ অবশ্য নতুন সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করে সংগঠনে বদলের কথা জানান। একটি নতুন ঝকঝকে টিম গড়তে চান তিনি।

নেতৃত্বের প্রশ্নে কংগ্রেসের অবস্থাও শোচনীয়। দলের এক প্রবীণ নেতা বিজেপির এই সঙ্কটের সঙ্গে কংগ্রেসের মিল খুঁজে পাচ্ছেন। তাঁর মতে, ‘‘বড় মাপের নেতা হয়েও জওহরলাল নেহরু রাজ্যে রাজ্যে নেতাদের শক্তিশালী হতে দিয়েছিলেন। পায়ের তলায় জমি শক্ত করা পর্যন্ত ইন্দিরা গাঁধীও সে প্রথা চালিয়েছিলেন। কিন্তু ‘আমিই সব’ ভাবনা আসার পর রাজ্য নেতাদের শেষ করার প্রক্রিয়া শুরু করেন। এর খেসারত এখনও দিতে হচ্ছে কংগ্রেসকে। তবে সঞ্জয় গাঁধী বুঝেছিলেন নেতা তৈরির যুক্তি। দিগ্বিজয় সিংহ, গুলাম নবি আজাদ, আহমেদ পটেল, অশোক গহলৌত, কমল নাথেরা সকলে তাঁরই বাছাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE