Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Delhi Violence

সজাগ আমিরেরা, অশান্ত দিল্লিতে বিয়ে সাবিত্রীর

চাঁদ বাগে অশান্তি শুরু হওয়ার পর থেকেই মহা দুশ্চিন্তায় পড়েন ভোদয় প্রসাদ। তাঁর কথায়, ‘‘বিয়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না সোম-মঙ্গলবার।

n নবদম্পতি: উত্তর-পূর্ব দিল্লির চাঁদ বাগের ঘিঞ্জি গলিতে বিয়ের আসর। ছবি: রয়টার্স।

n নবদম্পতি: উত্তর-পূর্ব দিল্লির চাঁদ বাগের ঘিঞ্জি গলিতে বিয়ের আসর। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:২০
Share: Save:

চাঁদ বাগে তাঁদের বাড়ির সরু গলিটা পার করলেই যেন রণক্ষেত্র চতুর্দিক। বাড়ি, গাড়ি, দোকানপাট ভেঙে চুরমার। রাস্তায় ছড়িয়ে ইটের টুকরো। জায়গায় জায়গায় জ্বলছে আগুন। এই অবস্থায় বাধ্য হয়েই গত মঙ্গলবার মেয়ের বিয়ে পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভোদয় প্রসাদ। বছর তেইশের সাবিত্রী বাবার কথা মেনে নিলেও চোখের জল বাঁধ মানে না। যা দেখে এগিয়ে আসেন দু’কামরার ইটের বাড়িটা ঘিরে থাকা মুসলিম পড়শিরা। তাঁদের দেওয়া সাহসে ভর করে মালাবদল, মন্ত্রপাঠ, সাতপাক— সবই হয়েছে সাবিত্রীর বিয়েতে। দরজার বাইরে লোকজন নিয়ে পাহারায় ছিলেন তাঁর মুসলিম ভাই আমির মালিক।

চাঁদ বাগে অশান্তি শুরু হওয়ার পর থেকেই মহা দুশ্চিন্তায় পড়েন ভোদয় প্রসাদ। তাঁর কথায়, ‘‘বিয়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না সোম-মঙ্গলবার। ছাদে উঠে দেখি, চারদিকে ধোঁয়া আর ধোঁয়া। জানি না এই হিংসার পিছনে কারা রয়েছে। তবে তারা আমার প্রতিবেশী নন। এখানে হিন্দু ও মুসলিমের মধ্যে কোনও শত্রুতা নেই।’’ সব দেখেশুনে মঙ্গলবার বিয়ে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেন ভোদয়। সাবিত্রী বলেন, ‘‘আমার হাতে মেহেন্দি লাগানো হয়ে গিয়েছিল। পর দিন হয়ত পরিস্থিতি ভাল হবে— এই আশায় অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু হিংসা খুব দ্রুত
ছড়িয়ে পড়ছিল। অত ঝুঁকি নিয়ে পাত্রই বা আসত কী ভাবে?’’ অগত্যা বাবার কথা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।

বুধবার ওই চাঁদ বাগেরই একটি নালা থেকে আইবি অফিসার অঙ্কিত শর্মার দেহ উদ্ধার হয়। তবে সে দিন এলাকায় অশান্তি কিছুটা হলেও কমে। দোকানপাট সব বন্ধ ছিল। রাস্তায় লোকও ছিল হাতেগোনা। ভোদয় ঠিক করেন, বুধবারই মেয়ের বিয়ে দেবেন। কোনও জাঁকজমক ছাড়াই। বিপদগ্রস্ত হিন্দু পরিবারটির পাশে এসে দাঁড়ায় গোটা মুসলিম মহল্লা। প্রতিবেশী সামিনা বেগম বলেন, ‘‘ওঁদের জন্য খারাপ লাগছিল। কারই বা ভাল লাগে মেয়ের চোখের জল দেখতে? বিশেষত যখন ওঁর জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সময়।’’

বুধবার যথাসময়ে আসেন পাত্র। কিন্তু আসতে পারেননি মেয়ের আত্মীয়-স্বজনেরা। সামিনারাই আশীর্বাদ করেন দম্পতিকে। হিন্দু আচার মেনে বিয়ে হয় সাবিত্রীর। বিয়ে শেষে কড়া পাহারায় নবদম্পতিকে নিরাপদে পৌঁছে দেন প্রতিবেশীরাই। ভোদয় বলেন, ‘‘আমার মেয়ের বিয়েতে আত্মীয়েরা কেউই আসতে পারেননি। কিন্তু আমার প্রতিবেশীরা ছিলেন। যাঁরা অন্য ধর্মের হলেও আমার আত্মীয়, আমার পরিবার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Delhi Violence CAA Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE