Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিচার চাইতে গিয়ে আটক কিশোরী

যৌন নিগ্রহের ঘটনার ১২ দিন পরেও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে না পারায় একেবারে রাজ্য সচিবালয়ের সামনে ধর্নায় বসল এক কিশোরী। এবং অভিযুক্ত ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার করতে না পারলেও, আইন ভঙ্গ করায় ওই কিশোরীকে সপরিবারে আটক করেছে পুলিশ। আজ বিধানসভা চলাকালীনই সচিবালয়ের সামনে মায়ের সঙ্গে ধর্নায় বসে মরিগাঁওয়ের ভুরাগাঁও থেকে আসা দশম শ্রেণির ওই কিশোরী।

অসম সচিবালয়ের সামনে তখন ধর্নায় বসে মা-মেয়ে। সোমবার দিসপুরে। — নিজস্ব চিত্র

অসম সচিবালয়ের সামনে তখন ধর্নায় বসে মা-মেয়ে। সোমবার দিসপুরে। — নিজস্ব চিত্র

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৫৮
Share: Save:

যৌন নিগ্রহের ঘটনার ১২ দিন পরেও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে না পারায় একেবারে রাজ্য সচিবালয়ের সামনে ধর্নায় বসল এক কিশোরী। এবং অভিযুক্ত ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার করতে না পারলেও, আইন ভঙ্গ করায় ওই কিশোরীকে সপরিবারে আটক করেছে পুলিশ।

আজ বিধানসভা চলাকালীনই সচিবালয়ের সামনে মায়ের সঙ্গে ধর্নায় বসে মরিগাঁওয়ের ভুরাগাঁও থেকে আসা দশম শ্রেণির ওই কিশোরী। হাতে ছিল পোস্টার। তাতে লেখা, ‘আই ওয়াজ রেপ্‌ড, আই ওয়ান্ট জাস্টিস’। কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে স্থানীয় মাদ্রাসার এক শিক্ষক নূর হুসেন তাকে ঘর থেকে জোর করে নিয়ে যান।

কিশোরীর কথায়, “রাতে আমার উপরে যৌন নির্যাতন চালায় ওই শিক্ষক। এর পর কাউকে কিছু না বলে চুপ করে থাকার হুমকি দিয়ে সকালে সে আমায় বাড়ি পৌঁছে দেয়।” কিশোরীর মা জানান, ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। কিশোরীর পরিবারের বক্তব্য, পরের দিন অভিযুক্তকে ধরে রাতে ভুরাগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তার পরের দিনই থানা থেকে অভিযুক্ত পালিয়ে যায়। এসপি ও জেলাশাসককে বারবার স্মারকলিপি দেওয়ার পরেও পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেনি বলে অভিযোগ পরিবারের।

এ দিকে, বিধানসভা চলাকালীন ১৪৪ ধারা ভেঙে সচিবালয়ের সামনে পোস্টার নিয়ে ধর্নায় বসায় পুলিশ ওই কিশোরীকে সপরিবার আটক করে বশিষ্ঠ থানায় নিয়ে আসে।

পুলিশের যুক্তি, বিধানসভা চলাকালীন প্রতিবাদ জানাবার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। এর জন্য আগে থেকে অনুমতি নিতে হয়। নিয়ম না মানাতেই কিশোরীকে আটক করা হয়। ন্যায়বিচার চাইতে এসে থানায় আটক হওয়া কিশোরী কান্নায় ভেঙে পড়ে। কিশোরীর মা বলেন, “বার বার জেলা প্রশাসনকে বলেও লাভ না হওয়ায় আজ আমরা রাজ্যের কর্তাদের কানে অভিযোগ তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। আইন ভাঙার কোনও ইচ্ছেই আমাদের ছিল। আমরা কোনও অশান্তি করিনি।’’ ওই মায়ের প্রশ্ন একটি মেয়ে কতটা মরিয়া হলে নিজের লজ্জা তুচ্ছ করে ধর্ষণের মতো ঘটনার কথা পোস্টারে লিখে বিচার চাইতে পারে?” পুলিশ পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেয়।

মরিগাঁওয়ের পুলিশ সুপার আইনুল হক পুলিশি গাফিলতির কথা স্বীকার করে বলেন, “স্থানীয়রা রাত দশটা নাগাদ অভিযুক্তকে থানায় নিয়ে আসেন। কিন্তু ওসি ওই শিক্ষককে হাজতে না রেখে দুই হোম গার্ডের পাহারায় বসিয়ে রাখেন। ভোরে তাদের অসতর্কতায় অভিযুক্ত পালায়।’’ ওই দুই হোমগার্ডকে সাসপেন্ড করার পাশাপাশি ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সুপার জানান। তিনি জানান, অভিযুক্ত যুবক বরপেটার বাসিন্দা হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। বাড়িতে একাধিকবার হানা দিয়েও তাকে ধরা যায়নি। তিনি আশ্বাস দেন, খুব শীঘ্রই পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE