নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের এক অদম্য সাহসী ও কঠিন পদক্ষেপ ডিমনিটাইজেশন বা নোটবন্দি। যার মূল উদ্দেশ্য, কালো টাকার মূল উচ্ছেদ করে ভারতীয় অর্থনীতিকে নতুন ও শৃঙ্খলাবদ্ধ পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া| ভারত সরকারের এই পদক্ষেপে ৮৬ শতাংশ প্রচলিত মুদ্রার অবলুপ্তি ঘটল| প্রচলিত মুদ্রার অবলুপ্তি এবং নবীকরণ এই দু’টি প্রক্রিয়ার মধ্যে যে শূন্যস্থান তৈরি হল, সেটাকে ভারতীয় অর্থনীতির জগতে এক কঠিন আঘাত, এক ভয়ঙ্কর অন্ধকার অবস্থার সূচনা বলে দাবি করলেন বিরোধীরা| মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দেশের একটা অংশ সরব হয়ে উঠল, ব্যবসায়ীদের একটা অংশ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল এই ভেবে যে, এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের স্থান অনেকটাই নেমে যাবে| কিন্তু বাস্তবে কী হল? কতটা লাভ হল, কতটাই বা ক্ষতি? দেখে নেওয়া যাক কিছু পরিসংখ্যান।
আরও পড়ুন: নোটবন্দি ফেল মেরেছে? আপনি তবে দেশদ্রোহী!
ভারতীয় শেয়ার বাজারের মাপকাঠিতে আমরা ভারতীয় অর্থনীতির প্রকৃত ছবিটা দেখতে পাই। দেখা যাচ্ছে, এফএমসিজি, অটোমোবাইল, পরিকাঠামোর মতো ক্ষেত্রে সাময়িক ভাবে সূচক নিম্নগামী হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে এই সময়েই আমেরিকার রাজনীতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থান। কিন্তু এই দুই প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে সারা বছরই চাঙ্গা থেকেছে শেয়ার বাজার।
অটোমোবাইল সেক্টরের উপর এই আঘাত সর্বপ্রথম দেখা যায় কারণ এই ক্ষেত্রেই সর্বাধিক কাঁচা টাকার ব্যবহার হত| এই সেক্টরের বিক্রয়সূচক সর্বাপেক্ষা নিম্নগামী হয় এই সময়। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এই অবনমনের পথ থেকে সরে এসে ঊর্ধ্বগামী হয়ে অটোমোবাইল সূচক মাত্রা ১৭% বৃদ্ধি পেয়েছে| আগামী দিনে এই ক্ষেত্রটি আরও উন্নত হতে চলেছে জিএসটি প্রবর্তনের হওয়ার ফলে। জিএসটি কিন্তু বাজারের স্বাস্থ্যের পক্ষে কেন্দ্রের এক প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা|
নোট বাতিলের ফলে ব্যক্তিগত উদ্যোগগুলিতে প্রচুর পরিমাণে নগদের যোগানের ফলস্বরূপ সাধারণ মানুষ কম সুদে ঋণ পাওয়ার সুযোগ পেল|
আরও পড়ুন: বাঁকা চোখে নোটবন্দি
সরকারি হিসাবে ‘জন ধন যোজনা’ অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত আমানতের পরিমাণ গত ২-৩ মাসে প্রায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে| নোট বাতিল এবং অতি সম্প্রতি জিএসটি, ব্যাঙ্কিং শিল্পকে যথেষ্ট শক্তিশালী করেছে। মোটামুটি গত এক বছরে ব্যাঙ্কিং শিল্পের শেয়ার সূচক বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ।
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সঙ্গে এই নোট বাতিলের সরাসরি যোগাযোগ বেশ কম। কিন্তু কাঁচা টাকার পরিবর্তে ডিজিটাল লেনদেন কিছুটা বাড়ায় পরোক্ষে লাভবান হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। তবে এক বছরের শেষে ডিজিটাল লেনদেন প্রায় একই জায়গায় ফিরে যাওয়ায় এই ক্ষেত্রে শেয়ার সূচক বেড়েছে গড়ে ৪-৮ শতাংশ।
এফএমসিজির ক্ষেত্রটিতে মূলত লেনদেন হয় কাঁচা টাকার মাধ্যমে। কিন্তু অতি অল্প সময়ের মধ্যেই, মূলত নতুন মুদ্রার প্রচলনের সঙ্গেই এই ক্ষেত্রটিতে উন্নতি হয়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন: মোদীর এ হেন সিদ্ধান্তে ‘মিত্রোঁ’-দের আদৌ কোনও উপকার হল?
পরিকাঠামো শিল্পে সর্বোচ্চ পরিমাণে কাঁচা টাকার ব্যবহার হত। তাই এই ক্ষেত্রটি প্রাথমিক ভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে| তবে সবার জন্য বাড়ির মতো সরকারি প্রকল্পের ফলে এই শিল্প বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছে। এই ক্ষেত্রে সূচক বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ।
সব মিলিয়ে নোট বাতিল এবং জিএসটি ভারতীয় শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রে বরদান হয়ে উঠেছে। যার প্রত্যক্ষ প্রমাণ সূচকে ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি।
(লেখক কলকাতা আইআইএমের প্রাক্তনী এবং সার্টিফায়েড ফিনান্সিয়াল প্ল্যানার)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy