Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
National News

নোট বাতিল কী দিল, প্রশ্ন বহাল বছর ঘুরলেও

কেন্দ্রের দাবি ছিল, নোট বাতিলের ফলে ব্যাঙ্কে আর ফিরবেই না কয়েক লক্ষ কোটি কালো টাকা। অথচ নোটবন্দির সময় বাজারে যতটা নগদ ছিল এবং যতটা এত দিন ফিরে এসেছে এবং আসছে, সেই পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, আখেরে তাদের সে দাবি সত্যি হয়নি।

এটিএমের বাইরে এই লাইন আর নেই। কিন্তু দুর্ভোগ তাতে কমল কি? ফাইল চিত্র।

এটিএমের বাইরে এই লাইন আর নেই। কিন্তু দুর্ভোগ তাতে কমল কি? ফাইল চিত্র।

গার্গী মজুমদার
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ২১:২৩
Share: Save:

কেটে গেল পাক্কা এক বছর।

২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর সন্ধ্যেয় এক মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। আচমকা সকলে জেনেছিলেন, দেশে-বিদেশে যেখানে যত পুরনো পাঁচশো, হাজার টাকার ভারতীয় নোট রয়েছে, সে দিন রাত থেকেই সেগুলো স্রেফ কাগজ। টেলিভিশনের পর্দা থেকে সুনামি ছড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, দেশের স্বার্থে, অর্থনীতির পাঁক পরিষ্কারের জন্যই পুরনো বড় নোট বাতিল করে দিল সরকার। যেগুলো এ বার জমা দিয়ে দিতে হবে ব্যাঙ্কে।

মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল, এতেই ধরা পড়বে অর্থনীতিকে পঙ্গু করতে চাওয়া বিপুল কালো টাকা। কারণ, সেগুলি আর ব্যাঙ্কে ফিরবেই না। নিকেশ হবে যাবতীয় জাল নোট। বন্ধ হবে সন্ত্রাসের জন্য অর্থের জোগান। আটকানো যাবে কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর উপর পাথর ছোড়া। কারণ, বেআইনি ভাবে পাওয়া টাকা বা জাল নোটের জোগান বন্ধ হলে, এই সব কাণ্ডে মদত দেওয়ার জোর কমবে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের। থামানো যাবে মাওবাদী কর্মকাণ্ডও।

বছর ঘুরেছে। মাঝখানের সময়টাতে নোট বাতিল নিয়ে তুঙ্গে পৌঁছেছে ডামাডোল। নগদের অভাবে ভুগেছে আমজনতা থেকে শুরু করে শিল্প, ব্যবসা। সমালোচনার তীব্র ঝড় বয়েছে বিরোধী-সহ বিভিন্ন মহলে। আর দিনের পর দিন নোটবন্দির পক্ষে সাফাই দিয়ে গিয়েছে মোদী সরকার। বলেছে, নগদ লেনদেনে ধীরে ধীরে ইতি টানতে ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোর কথা।

কিছু দিন আগেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হিসেব দিয়ে জানিয়েছে, বিভিন্ন শাখায় এখনও হয়ে চলেছে বাতিল পাঁচশো, হাজারের নোট গোনার কাজ। এ যাবৎ ১,১৩৪ কোটি ৫০০ টাকার নোট এবং ৫২৪.৯০ কোটি ১,০০০ টাকার নোট গোনা সারা। সব মিলিয়ে টাকার অঙ্কে যা ১০.৯১ লক্ষ কোটি। আরও অনেক গোনা বাকি।

কেন্দ্রের দাবি ছিল, নোট বাতিলের ফলে ব্যাঙ্কে আর ফিরবেই না কয়েক লক্ষ কোটি কালো টাকা। অথচ নোটবন্দির সময় বাজারে যতটা নগদ ছিল এবং যতটা এত দিন ফিরে এসেছে এবং আসছে, সেই পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, আখেরে তাদের সে দাবি সত্যি হয়নি। ফলে কালো টাকায় রাশ টানা নিয়ে সরকারের বক্তব্যে যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। উল্টে অনেকেই বলছেন, চাহিদায় এখনও নোটবন্দির ছাপ দগদগে। যে কারণে চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার নেমেছে তলানিতে। খোদ সরকারি পরিসংখ্যানই জানিয়েছে এ কথা। নোট বাতিলের ধাক্কাতেই অর্থনীতি পিছু হটছে বলে আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের।

আরও পড়ুন:

নোটবন্দিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা জমা! নজরে ৩৫ হাজার সংস্থা

ডিমনিটাইজেশনের পরম প্রাপ্তি

জাল নোট ইতিউতি ধরা পড়লেও, তার পরিমাণ আঁতকে ওঠার মতো নয়। সন্ত্রাসেও যে চোখে পড়ার মতো সাফল্য এসেছে, তা বলা যাবে না। এমনকী, নোট সঙ্কটের সময়ে ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ বাড়লেও, নোট ফিরতেই তা ফের নিম্নমুখী হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেলও কবুল করেছেন সে কথা। যদিও অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রশ্নের মুখে তিনি স্বীকার করতে চাননি যে, নোট বাতিলের জেরে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। এবং একই সঙ্গে নগদের অভাবে ও চাহিদা মুখ থুবড়ে পড়ায় ধাক্কা খেয়েছে অর্থনীতি।

ফলে বিশেষজ্ঞদের মতে, থেকেই যাচ্ছে প্রশ্ন— তা হলে এত কিছু করে কী লাভ হল? কতটা লক্ষ্য পূরণ করতে পারল সরকার?

বরং ব্যাঙ্কে, তেতেপুড়ে এটিএমে লাইন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছু মানুষের প্রাণ গেল। অর্থনীতি তছনছ হওয়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষত দরিদ্র ও ছোট ব্যবসায়ীদের জীবনযাত্রা কার্যত গেল থমকে। সামান্য তেল-নুন কিনতেই নাস্তানাবুদ হলেন গৃহস্থ। অর্থনীতির হিসেব-নিকেশও জোর দিয়ে বলতে পারল না যে, নোট বাতিল আর্থিক দিক থেকে মারাত্মক সফল। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীরা সুযোগ পেলেই এখনও নাগাড়ে সওয়াল করে চলেছেন এর পক্ষে। কিন্তু বহু অর্থনীতিবিদই বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে এমন পদক্ষেপ থেকে কোনও সুবিধা মিলবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়ে যাচ্ছে। বারবার মাথায় পাক খাওয়া অনেক প্রশ্নের উত্তরই এখনও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না যে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation Notes Ban নোটবন্দি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE