নোট বাতিলের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও তার জেরে মানুষের চরম হয়রানির জন্য মোদী সরকারের কড়া সমালোচনা করল সুপ্রিম কোর্ট। ৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের উপরে আজ কোনও স্থগিতাদেশ জারি করেনি শীর্ষ আদালত। যদিও নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত খারিজের দাবি নিয়ে এক জনস্বার্থ মামলায় প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর ও বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ আজ এমন মন্তব্যও করে যে, ‘‘জাল ও কালো টাকার বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের নামে এ যেন সাধারণ মানুষের উপরে কার্পেট বম্বিং চলছে!’’ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে কেন্দ্রকে অবিলম্বে পদক্ষেপ করতে বলেছে শীর্ষ আদালত। এবং সেই লক্ষ্যে কী কী করা হল, সরকারকে তা ২৫ নভেম্বরের মধ্যে জানাতে হবে।
বিরোধীদের তুমল আক্রমণের পাশাপাশি আদালতেও এ ভাবে সমালোচনার মুখে পড়াটা অস্বস্তির। তবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে দশ দিন সময় পেল কেন্দ্র। সরকারের কাছে এটা-ও স্বস্তির বিষয় যে, তাদের সিদ্ধান্তের উপরে কোনও পদক্ষেপ করেনি আদালত। প্রধান বিচারপতি বরং জানিয়েছেন, এর উদ্দেশ্য ‘প্রশংসনীয়’ বলেই তাঁর মনে হয়েছে।
নোট বাতিলের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলাটি করেছেন চার জন। তাঁদের অন্যতম আদিল আলভির আইনজীবী হিসেবে কপিল সিব্বল এ দিন অভিযোগ করেন, সরকার আসলে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নয় কার্পেট বম্বিং চালাচ্ছে। এর সঙ্গে কার্যত একমত প্রকাশ করে বেঞ্চ বলে, ‘‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের নির্দিষ্ট নিশানা থাকে। এ যেন কার্পেট বম্বিং হচ্ছে। বহু মানুষ বিপাকে পড়ছেন।’’ প্রধান বিচারপতি ঠাকুরের কথায়, ‘‘সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য প্রশংসনীয় বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের দুর্ভোগও হচ্ছে। সরকার তো আর মানুষের বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করতে পারে না।’’
মামলার জেরে সমালোচনার মুখে পড়লেও বিভ্রান্তির বাজারে সরকার তার অবস্থান ব্যাখ্যা করার একটা সুযোগও পেল এ দিন। এক আবেদনকারীর পক্ষে কংগ্রেস নেতা সিব্বলকে হাজির হতে দেখে অনেকেই মনে করছেন, নোট-নাট্যে বিরোধীরা আইনি লড়াইয়ের মঞ্চকেও ব্যবহার করতে চাইছে। সরকারের তরফে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি, দু’জন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ও অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা। শুনানিতে সিব্বল দাবি করেন, ‘‘এ ভাবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৫০০-১০০০ টাকার নোটের পুরো সিরিজ বাতিল করা যায় না। নতুন আইন পাশ করাতে হয়।’’ রোহতগির পাল্টা যুক্তি, জম্মু-কাশ্মীর-সহ দেশের নানা প্রান্তে সন্ত্রাসের কাজে কালো টাকা ব্যবহার করা হচ্ছে। কেন্দ্র তাই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইনের ২৬(২) ধারা মেনে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোহতগির কথায়, ‘‘এমন সিদ্ধান্ত গোপনেই নিতে হয়। পদক্ষেপ গোপন রাখার ফলেই এটিএমগুলিকে আগে থেকে নতুন নোটের জন্য তৈরি করা যায়নি।’’ এটিএমগুলি তৈরি না থাকাতেই এক বারে ১০ লক্ষ কোটি টাকার নোট বাজারে ছাড়া যায়নি বলেও জানান রোহতগি। এতে যে বহু মানুষ বিপাকে পড়েছেন, তা-ও মেনে নেন তিনি। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রসঙ্গ টেনে রোহতগি বলেন, ‘‘না চাইলেও এমন অভিযানে কিছু বাড়তি ক্ষতি হয়ই। একে বলে কোল্যাটারাল ড্যামেজ।’’ রোহতগির আরও দাবি, ‘‘জাল নোট ও কালো টাকার রাঘববোয়ালদের ধরতে চাইছে মোদী সরকার। ৫০ বছরে কোনও সরকার এমন পদক্ষেপ করেনি। এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বৈধ।’’
বিজেপি নেতারা বলছেন, নোট-বাতিলের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ জারি না হওয়ায় বিরোধী শিবিরে স্পষ্ট বার্তা গেল। পরিস্থিতি সামলাতে ১০ দিন সময়ও মিলল। কিন্তু শীর্ষ আদালত যে সমালোচনাও করল সরকারের!
এক শীর্ষ বিজেপি নেতার জবাব, ওটুকু কোল্যাটারাল ডামেজ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy