পাততাড়ি: রাম রহিমের ডেরা ছেড়ে বাড়ির পথে। সোমবার সিরসায়। পিটিআই
ডেরা বন্ধ হওয়ায় কাজ হারালেন বিহারের প্রায় দু’হাজার মানুষ। ডেরা সচ্চা সৌদার সিরসা ও হিসার-সহ বেশ কয়েকটি আশ্রম বন্ধ। প্রশাসন ডেরার বাসিন্দাদের বের করে দিচ্ছেন আশ্রম থেকে। এর ফলে ভাগলপুরের নাথনগর থানা এলাকার গোঁসাইদাসপুর ও সংলগ্ন গ্রামগুলির বাসিন্দা, ওই সব কর্মীরা এখন ঘরে ফিরে আসছেন। বাড়ির পথে কেউ রয়েছেন ট্রেনে, কেউ দিল্লি স্টেশনে, কেউ বা এখনও আশায় আশায় রয়ে গিয়েছেন সিরসাতেই। সকলের পরিবারই চিন্তিত। তাঁরা নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ করছেন কর্মহারা স্বজনদের সঙ্গে।
প্রায় ১৮ বছর আগে গোঁসাইদাসপুরের বাসিন্দা মলয় পাশোয়ান কাজের খোঁজে দিল্লি যান। সেখানে তেমন কোনও কাজ না পেয়ে এক সঙ্গীর সঙ্গে হরিয়ানার সিরসায় পৌঁছন। সেখানে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতে করতেই ডেরার সদস্যদের সংস্পর্শে আসেন। কাজ জুটিয়ে নেন সিরসার আশ্রমে। থাকা ও খাওয়ার পাশপাশি মাসিক ৮ হাজার টাকা বেতন। ছ’মাসে এক বার গ্রামেও আসতেন মলয়। এর পরে কার্যত মলয়ের হাত ধরেই হরিয়ানার সিরসা এবং হিসারের আশ্রমে গোঁসাইদাসপুরের লোকেরা পৌঁছতে শুরু করেন কাজের খোঁজে। বিশাল আশ্রমে কাজও জুটে যায়। চাষ-আবাদ, গো-পালন ইত্যাদি নানা কাজের দায়িত্বে গত বেশ কয়েক বছর ধরে বহাল তাঁরা। প্রায় দশ হাজার জনবসতির গোঁসাইদাসপুর ও আশপাশের হাজার দু’য়েক লোক কাজ করেন ডেরার বিভিন্ন আশ্রমে।
ছবি:পিটিআই
এই কর্মীদের সূত্রেই শুধু গোঁসাইদাসপুর নয়, সংলগ্ন রাঘোপুর, রামপুর, মনসকামনাথ চৌক, ভতৌরিয়া, কিষণপুর, মথুরাপুর-সমেত বেশ কয়েকটি গ্রামে রাম রহিমের প্রভাব রয়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা ‘বাবা’র কথাতেই মদ-মাংস ছেড়ে দিয়েছেন। গত শুক্রবারের ঘটনার পরে এখনও পর্যন্ত প্রায় একশো জন ফিরে এসেছেন। বাকিরা ফোনে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। হরিয়ানা থেকে দিল্লি হয়ে ভাগলপুরের ট্রেন ধরছেন তাঁরা। যাঁরা এখনও ফেরেননি তাঁদের পরিবারের লোকেরা চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
গোঁসাইদাসপুরের যাদব টোলার বাসিন্দা ঊর্মিলা যাদবের ছেলে বিনোদ যাদব ডেরার আশ্রমে গো-পালনের কাজ করেন। বেতন পান প্রায় ১২ হাজার টাকা। বছরে এক বার বিনোদ গ্রামে আসেন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে ফের ফিরে যান আশ্রমে। সাত বছর ধরে বিনোদ রয়েছেন হিসারের আশ্রমে। ঊর্মিলাদেবীর উদ্বেগ, ‘‘আমার ছেলেই ছিল সংসারের একমাত্র রোজগেরে। কী হবে বুঝতে পারছি না।’’ গত শনিবার ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে মায়ের। তারপর থেকে তাঁর ফোন বন্ধ। চিন্তায় রয়েছেন মা। শুধু ঊর্মিলাদেবীই নন, গ্রামের সিংহভাগ পরিবারই ছেলেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy