Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

শিখ-নিগ্রহের দায়ে অমিতের পুলিশ

পেশায় অটোচালক ওই প্রৌঢ়ের নাম সর্বজিৎ সিংহ, তাঁর ছেলের নাম বলবন্ত। গত কাল বিকেলে নয়াদিল্লির মুখার্জি নগরের রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে সর্বজিতের মারামারির ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়া মাত্রই তাতে লেগেছে রাজনীতির রং।

ভাইরাল হওয়া সেই দৃশ্য।

ভাইরাল হওয়া সেই দৃশ্য।

নিজস্ব প্রতিবেদন
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৯ ০২:০৩
Share: Save:

রাস্তায় পড়ে যাওয়া প্রৌঢ়কে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে একদল পুলিশ। লাঠিপেটা করছে, বুট পরা পায়ে লাথিও কষাচ্ছে বুকে। এত ক্ষণ লড়ছিলেন প্রৌঢ়ও। তাঁর হাতে খোলা তলোয়ার দেখে প্রথমে কাছে ঘেঁষছিল না পুলিশ। ক্রমশ দলে ভারী হয়ে পুলিশ কোণঠাসা করে ফেলে তাঁকে। পুলিশের মার খায় তাঁর ছেলেও।

পেশায় অটোচালক ওই প্রৌঢ়ের নাম সর্বজিৎ সিংহ, তাঁর ছেলের নাম বলবন্ত। গত কাল বিকেলে নয়াদিল্লির মুখার্জি নগরের রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে সর্বজিতের মারামারির ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়া মাত্রই তাতে লেগেছে রাজনীতির রং।

অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আওতায় থাকা দিল্লি পুলিশের ‘নিষ্ঠুরতা’-র তীব্র নিন্দা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ সুবিচার চেয়ে টুইট করেছেন অমিতের উদ্দেশে। দিল্লি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির প্রাক্তন সভাপতি মনজিৎ সিংহ এবং একাধিক শিখ রাজনীতিক এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন।

১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গার স্মৃতি উস্কে লোকসভা ভোটে কংগ্রেসকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল বিজেপি। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় ফেরার পরে রাজধানীর প্রকাশ্য রাস্তায় শিখ-নিগ্রহের ঘটনা কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে ফেলেছে কেন্দ্রকে। গোটা ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সঞ্জয় মালিক ও দেবেন্দ্র নামে দু’জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর এবং পুষ্পেন্দ্র নামে এক কনস্টেবলকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করবে ক্রাইম ব্রাঞ্চ। দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র অনিল মিত্তল বলেছেন, ‘‘অপেশাদারের মতো আচরণ করেছেন পুলিশকর্মীরা।’’ পুলিশের জনসংযোগ আধিকারিক মধুর বর্মা জানান, দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।

অনেকেই বলছেন, তলোয়ার বার করে এবং কর্তব্যরত পুলিশকর্মীর গায়ে হাত তুলে শাস্তিযোগ্য অপরাধই করেছেন সর্বজিৎ। কিন্তু পাগড়ি খুলে যাওয়া অবস্থায় সর্বজিতের বুকের উপরে চড়ে বসা, তাঁর মাথায়-বুকে লাথি মারা, বাবাকে বাঁচাতে যাওয়ায় কিশোর বলবন্তকে পেটানো— ক্যামেরাবন্দি হওয়া পুলিশের এ সব আচরণও নিন্দনীয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের বরং দাবি, মারামারি শুরু করেছিল পুলিশই।

মোবাইলে তোলা ভিডিয়োয় দেখা যায়, একটি অটোর দরজা খুলে চালককে বেধড়ক পেটাচ্ছেন এক পুলিশকর্মী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘গ্রামীণ সেবা’ পরিষেবার ওই অটোটির চালকই সর্বজিৎ। পুলিশের একটি গাড়ির সঙ্গে তাঁর অটোর সামান্য ধাক্কা লাগে। তখনই কয়েক জন পুলিশ গিয়ে সর্বজিৎ ও বলবন্তকে লাঠিপেটা করতে শুরু করেন। মার খেয়ে ক্ষিপ্ত সর্বজিৎ তলোয়ার বার করেন। পুলিশেরা তখন ফোন করে পাশের মুখার্জি নগর থানা থেকে সহকর্মীদের ডেকে পাঠান। শুরু হয় মারপিট। তবে ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, বলবন্ত আগাগোড়াই ঝামেলা থামাতে চাইছিলেন। ‘‘আমার বাবাকে ছেড়ে দাও’’— বলে চিৎকার করতেও শোনা যায় তাঁকে।

পুলিশের দাবি, অটোটির চাকা এক পুলিশের পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। সর্বজিতের তলোয়ারে অন্য এক পুলিশের মাথায় চোট লাগে। সর্বজিতের দলবলের পাল্টা মারে আহত হন ডেপুটি কমিশনার জে ত্যাগী। উত্তেজনা থাকায় মুখার্জি নগরে সিআরপিএফ মোতায়েন করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Shah Delhi Police Sikh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE