Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রথম আয়াপ্পা দর্শনে ছুঁতেই হবে বাবর মসজিদ

বিজেপি যতই চেষ্টা করুক, শবরীমালার ‘দক্ষিণের অযোধ্যা’ হওয়া মুশকিল।

এক সূত্রে: এরুমেলির মসজিদ। নিজস্ব চিত্র

এক সূত্রে: এরুমেলির মসজিদ। নিজস্ব চিত্র

গৌতম চক্রবর্তী  
পম্পা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:২৯
Share: Save:

বিজেপি যতই চেষ্টা করুক, শবরীমালার ‘দক্ষিণের অযোধ্যা’ হওয়া মুশকিল।

এরুমেলিতে আয়াপ্পার মন্দিরের উল্টো দিকে বাবর মসজিদ। সাদা রঙের। নিয়ম হচ্ছে, যাঁরা প্রথম বার শবরীমালায় যাচ্ছেন (কানি আয়াপ্পন), তাঁদের মন্দিরের পাশাপাশি মসজিদেও যেতে হবে। প্রচুর কানি আয়াপ্পন ভিড় করছেন মসজিদে।

কথিত আছে, আয়াপ্পা বা আয়াপ্পনকে ছেলের মতো মানুষ করেছিলেন পান্ডালামের রাজা রাজশেখর। পম্পা নদীতে শুয়ে কাঁদছিলেন সেই দেবশিশু। আয়াপ্পন যখন দানবী ‘মহিষী’কে মারতে যাচ্ছেন, তখন সঙ্গে ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাবর। বাবর আয়াপ্পনের সেনাপতিও। তাই প্রথম বার আয়াপ্পনের মন্দিরে যদি যাও, বাবরের কাছে প্রার্থনা না-করলে ফল লাভ হবে না। ভিতরে যখন নমাজ পড়া হয়, হিন্দুরা তখন আয়াপ্পন আর বাবরের নামে একসঙ্গে জয়ধ্বনি দিতে দিতে প্রদক্ষিণ করেন মসজিদ। পাঁচশো বছর ধরে এমন চলছে। বার্ষিক ‘চন্দনকুড়ম’ উৎসবে সুসজ্জিত হাতি নিয়ে একই সঙ্গে শোভাযাত্রায় বেরোন মসজিদ ও মন্দির কমিটির প্রতিনিধিরা। আজও শবরীমালার পুণ্যার্থীদের রাত্রিবাসের জন্য ঘর খুলে দেন এরুমেলির মুসলিমরা। বাবরি মসজিদ যে দিন ভাঙা পড়ে, সে দিনও নাকি হিন্দুরা নির্বিঘ্নে ঘুরে গিয়েছেন এই বাবর মসজিদে।

এক দিকে ধর্মীয় সম্প্রীতি। অন্য দিকে ঋতুযোগ্য মহিলাদের প্রবেশ রুখতে যুদ্ধং দেহি

মেজাজ। এরুমেলি এখন যেন গঙ্গাসাগরের হারউড পয়েন্ট। কাতারে কাতারে লোক। অন্ধ্র, তামিলনাড়ু, কর্নাটক থেকেও আসছে পুণ্যার্থী-বোঝাই বাস। বন্যার পরে শবরীমালায় যাওয়ার রাস্তা অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আগে পম্পায় বাস দাঁড়াত। সেখান থেকে শুরু হত যাত্রা। এখন বাস দাঁড়াচ্ছে তারও আগে নীলাক্কলে। সেখান থেকে আর একটা বাসে পম্পা। কেদারনাথের যেমন গৌরীকুণ্ড, তেমন নীলাক্কল এখানকার ‘বেস ক্যাম্প’। নীলাক্কল থেকে সারা রাস্তায় কোথাও পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি লজ প্রায় পরিত্যক্ত। আজকাল অনেকে অমরনাথের মতো শবরীমালা গিয়ে সে দিনই ফিরে আসেন। মালপত্র রাখার কোনও ব্যবস্থা নেই। স্থানীয়রাই দোকান খুলে সেই দায়িত্ব নিয়েছেন। পম্পা থেকেই শুরু পেরিয়ার ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাস্তা। তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রের পাঁচ-সাত জন প্রৌঢ়াকে দেখলাম। আশ্বাস পেয়েছেন, পঞ্চাশের আশপাশে বয়স হলে মন্দিরে আধার কার্ড না-দেখালেও চলবে।

আমাকে মন্দিরে ইরুমোদি বাঁধতে হল। আয়াপ্পা দর্শনে এলে প্রথমে ছোট্ট একটা যজ্ঞ করে ইরুমোদি বাঁধতে হয় (যজ্ঞটা মেয়েদের করতে হয় না)। গুরুদ্বারে যেমন যেতে হয় মাথায় পাগড়ি বা কাপড় বেঁধে, শবরীমালায় তেমন মাথায় নিতে হয় ইরুমোদি। এটি এক ধরনের ছোট্ট ব্যাগ। ভিতরে চাল, খুচরো পয়সা এবং নারকেল। নারকেলটা কাঁচি দিয়ে ফুটো করবেন, তার পর ভিতরে ঢেলে দেবেন ঘি। সেই ঘি ভর্তি নারকেল নৈবেদ্য দিতে হবে আয়াপ্পাকে। তার আগে খালি গায়ে পরতে হবে রুদ্রাক্ষের মালা। নিম্নাঙ্গে ‘মুন্ড’।

‘সাময়িক সন্ন্যাস’! বাংলার গাজনের মেলার মতো এই ক’টা দিন সন্ন্যাসী আপনিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sabarimala শবরীমালা মন্দির
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE