অসম ও উত্তর-পূর্বে সড়ক যোগাযোগ ও জল সরবরাহের জন্য ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেন উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন মন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ। আজ গুয়াহাটিতে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, উত্তর-পূর্বে যোগাযোগের সমস্যা রয়েছে। সড়ক সম্প্রসারণের পাশাপাশি নতুন সড়ক তৈরির কাজও শুরু করা হবে। বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক ও বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলির সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার আলোচনা চালাচ্ছে। দিল্লি থেকে উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন শহরে আরও বেশি সংখ্যায় সরাসরি উড়ান চালুর চেষ্টা চলছে। গুয়াহাটি বিমানবন্দর সম্প্রসারণ, উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন শহরের সঙ্গে গুয়াহাটির বিমান যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়েও কথা চলছে। গুয়াহাটি বিমানবন্দরটিকে উত্তর-পূর্বের ‘হাব’ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
জিতেন্দ্র আরও জানান, উত্তর-পূর্বে প্রকল্প রূপায়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা জঙ্গি-সমস্যা। মেঘালয়, মণিপুরের মতো রাজ্যে সড়ক প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে নাশকতার ভয়ে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই, উত্তর-পূর্ব সম্পর্কে অভিজ্ঞ প্রাক্তন সেনা বা পুলিশকর্তাদের নিয়ে সন্ত্রাস দমনের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করা হচ্ছে। জৈব খামার গড়তে উত্তর-পূর্বে ১২৫ কোটি টাকার প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র। তিনি বলেন, ‘‘গুজরাতে সফল আনন্দ মডেল অনুসরণ করা হবে।
আপাতত ফল ও বড় এলাচ নিয়ে প্রাথমিক ভাবে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।’’ তিনি জানান, উত্তর-পূর্বে জৈব চাষের ভবিষ্যৎ, জৈব ফসলের বিপণন ও রফতানি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার সিআইআই, আইসিসি-সহ বিভিন্ন বণিক সংগঠন ও পড়শি দেশগুলির বাণিজ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও আলোচনা করেছে।
উত্তর-পূর্বে বিনিয়োগকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য চালু ‘এনইআইপিপি’ প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে জিতেন্দ্র জানান, তহবিল ও অন্য কিছু সমস্যার জন্য প্রকল্পটি ফের চালু করা যাচ্ছে না। তবে, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বিকাশে বিকল্প পথ দ্রুত খুলে যাবে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর-পূর্ব থেকে ২০০টি ও অসম থেকে ৬৮টি নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব পেয়েছেন। উত্তর-পূর্বে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ মোট অর্থের ২৭ শতাংশ পায় অসম। মন্ত্রকের পরামর্শ, তার মধ্যে ৪০ শতাংশ নতুন প্রকল্পের জন্য ও ৬০ শতাংশ চলতি প্রকল্পের জন্য খরচ করা হোক।
অসম বা মেঘালয়ের মতো উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে ‘বিশেষ তালিকাভুক্ত রাজ্যে’র আওতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা চলছে। তা নিয়ে এখানকার বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ জানিয়েছেন। জিতেন্দ্র জানিয়েছেন, কয়েক জন মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বক্তব্য কেন্দ্রকে জানিয়েছেন। কেন্দ্র সব দিক চিন্তা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। তবে, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি বিশেষ তালিকাভুক্ত না থাকলেও, সেখানকার উন্নয়ন প্রকল্পে কোনও প্রভাব পড়বে না।
কেন্দ্রীয় ওই মন্ত্রী জানান, দিল্লিকে উত্তর-পূর্বের আরও কাছে নিয়ে আসার জন্য ‘ডোনার অ্যাট ডোরস্টেপ’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ বার থেকে উত্তর-পূর্বের মানুষকে তাঁদের সমস্যা নিয়ে দরবার করতে দিল্লি যেতে হবে না। প্রতি মাসেই বিভিন্ন মন্ত্রকের কর্তারা উত্তর-পূর্বে শিবির গড়ে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনবেন। সরেজমিনে বিভিন্ন প্রকল্পের গতিপ্রকৃতিও খতিয়ে দেখবেন। বিধায়ক-নেতা-বিশিষ্ট ব্যক্তি-সংগঠনের সঙ্গেও কথা বলবেন। ইতিমধ্যে মণিপুর, অরুণাচল ও ত্রিপুরায় এই শিবির হয়ে গিয়েছে।
জিতেন্দ্র বলেন, ‘‘উত্তর-পূর্বের প্রকৃতি-পর্যটন ও সংস্কৃতিকে দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতে দিল্লিতে বিশেষ প্রদর্শনী করা হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির শহর বেঙ্গালুরু ও বলিউড মুম্বইতেও উত্তর-পূর্বকে তুলে ধরতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ মন্ত্রী জানান, আইন ও তহবিল না থাকায় এখনই মন্ত্রকের স্থায়ী সচিবালয় উত্তর-পূর্বে গড়া সম্ভব হচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy