Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Kashmir Election

বয়কটের ডাক নেই, উৎসাহে ভোট ভূস্বর্গে

৩৭০ ধারা বিলোপের পরে এটাই প্রথম ভোট উপত্যকায়। আর আট দফার এই ভোট শুরু হল এ দিন।

কাশ্মীরে ডিডিসি নির্বাচনের সময়ে গান্ডেরবালে এক বুথে চলছে থার্মাল স্ক্রিনিং। শনিবার। পিটিআই

কাশ্মীরে ডিডিসি নির্বাচনের সময়ে গান্ডেরবালে এক বুথে চলছে থার্মাল স্ক্রিনিং। শনিবার। পিটিআই

সাবির ইবন ইউসুফ
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২০ ০২:১৮
Share: Save:

লোকসভা আর বিধানসভা ভোটে উপত্যকার ছবিটা বরাবরই অন্য রকম থাকত। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভোট বয়কটের ডাক দিলে বাড়ি থেকে বেরোনোর সাহস দেখাতেন না কাশ্মীরের মানুষ। কিন্তু পঞ্চায়েতের উপনির্বাচন আর জেলা স্তরের উন্নয়ন পর্ষদের নির্বাচনে সম্পূর্ণ উল্টো ছবি দেখা গেল ভূস্বর্গে। কনকনে ঠান্ডা, কোথাও কোথাও তুষারপাত উপেক্ষা করেও প্রচুর মানুষ আজ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিলেন জম্মু ও কাশ্মীরে।

৩৭০ ধারা বিলোপের পরে এটাই প্রথম ভোট উপত্যকায়। আর আট দফার এই ভোট শুরু হল এ দিন। এখনও পর্যন্ত বয়কটের ডাক দেয়নি কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী বা জঙ্গি সংগঠন। সকাল সাতটায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ঠান্ডার জন্য ভিড় তেমন ছিল না শুরুতে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন প্রান্তে বুথে বুথে মানুষের লম্বা লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে যুব প্রজন্ম। ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে বুথে হাজির ছিলেন বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ। নির্বাচন কমিশনের তরফে সন্ধ্যায় জানানো হয়েছে, সব মিলিয়ে কাশ্মীরে ৪০.৬১% শতাংশ ভোট পড়েছে আজ। রাজধানী শ্রীনগরে অন্য বার ৯ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে না। কিন্তু এ বার সেই সংখ্যাটাই ছিল ২৯.৯৪%। জঙ্গি উপদ্রুত শোপিয়ান, কুলগাম, অনন্তনাগ বা পুলওয়ামাতেও বুথে বুথে ছিল প্রচুর লাইন। পুলওয়ামার স্কুল শিক্ষক বছর বিয়াল্লিশের রশিদ বাট বললেন, ‘‘আমি জীবনে এই প্রথম এত মানুষকে এত উৎসাহের সঙ্গে ভোট দিতে দেখলাম উপত্যকায়।’’

তবে ভোটের শুরুতেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও তাঁর মেয়েকে গৃহবন্দি করে রাখে প্রশাসন। প্রথম দফায় ১,৪৭৫ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হতে চলেছে। মূল লড়াই বিজেপি, পিএজিডি বা গুপকর জোট আর জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর আপনি পার্টির মধ্যে। ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ অবশ্য জানালেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের প্রতিক্রিয়া এই ভোটে পড়ার কথা নয়। তবে এই অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করার জন্য যে কথা বলবে, সেই দলকেই সমর্থন জানাবেন কাশ্মীরিরা।

শ্রীনগরের শহরতলি থিড় গ্রামের এক বুথে এসেছিলেন জ়হুর আহমেদ রাঠের। বললেন, ‘‘এটা উন্নয়েনর ভোট। আর আমরা নিজেদের প্রতিনিধি বাছতে এসেছি।’’ বারমুলার ত্রাগপোরা গ্রামের বাসিন্দা হামিদ কোশিন আবার ৩৭০ বিলোপ নিয়েই ক্ষুব্ধ। ফোনে বললেন, ‘‘বিজেপি আর তার মিত্র পক্ষকে উপত্যকার ভূস্বর্গের ত্রিসীমানায় থাকতে দিতে চাই না।’’

কাশ্মীরের মতো জম্মুতেও আজ প্রচুর মানুষকে বুথে দেখা গিয়েছে। এই প্রথম পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থীরা ভোট দিতে পারলেন। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার জন্য এত দিন তাঁরা শুধু লোকসভা ভোটে অংশ নিতে পারতেন। কেন্দ্রের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের সিদ্ধান্তের পরে এই প্রথম স্থানীয় ভোটে অংশ নিলেন তাঁরা। জম্মুতে মোট ভোট পড়েছে ৬৪.২%।

তবে উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারার একটি গ্রামে কেউ আজ বুথে আসেননি। গত ২৪ নভেম্বরই কারনাহ তেহসিলের জাবদি গ্রামের বাসিন্দারা স্থানীয় প্রশাসনের উপেক্ষার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। আজ তাঁদের কেউই ভোট দিতে যাননি।

নির্বাচন কমিশন আজ অবশ্য জানিয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর শেষ দফার ভোট শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত এই নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও বুথ ফেরত সমীক্ষা সংবাদমাধ্যম বা অন্য কোনও মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ksshmir Election No Boycott
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE