Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
National News

চিনকে চাপে রাখতে দিল্লির হাতে কপ্টার

ভারত মহাসাগরে চিনের যুদ্ধজাহাজ ও ডুবোজাহাজের মোকাবিলায় এ দেশের নৌসেনার জন্য ২৪টি এমএইচ-৬০ রোমিয়ো মাল্টি-রোল হেলিকপ্টার কিনবে ভারত।

ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:৩৭
Share: Save:

পাখির চোখ— চিনকে চাপে রাখা। সে দিকে তাকিয়ে ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি খরচ করে আমেরিকার থেকে সেনা ও নৌসেনার জন্য হেলিকপ্টার কেনার সিদ্ধান্ত হল। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফর থেকে মোদী সরকারের কার্যত এটাই বড় পাওনা।

ভারত মহাসাগরে চিনের যুদ্ধজাহাজ ও ডুবোজাহাজের মোকাবিলায় এ দেশের নৌসেনার জন্য ২৪টি এমএইচ-৬০ রোমিয়ো মাল্টি-রোল হেলিকপ্টার কিনবে ভারত। লকহিড-মার্টিন গোষ্ঠীর তৈরি এই কপ্টারের জন্য খরচ হবে প্রায় ২৬০ কোটি ডলার। সেনাবাহিনীর জন্য ছ’টি এএইচ-৬৪-ই অ্যাপাচে অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনা হবে। বোয়িং সংস্থার থেকে এই কপ্টার কিনতে খরচ হবে প্রায় ৯৩ কোটি ডলার। ২২টি এ ধরনের কপ্টার কেনার সিদ্ধান্ত আগেই হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি এই বিষয়ে সিলমোহর বসিয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত-মার্কিন বাণিজ্যের পরিমাণ এখন ১৮০০ কোটি ডলার। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের দুই প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের সিদ্ধান্তের পরে দুই দেশের কর্তারাই মনে করছেন, শীঘ্রই প্রতিরক্ষায় বাণিজ্য চুক্তির পরিমাণ ২৫০০ কোটি ডলার ছাপিয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পাশে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ বলেন, ‘‘আমি জানি, প্রধানমন্ত্রী মোদী আমার সঙ্গে একমত হবেন যে আমার সফর দু’দেশের জন্য খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে। ভারত ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের অত্যাধুনিক মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি কেনার চুক্তির ফলে আমাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বেড়েছে। অ্যাপাচে এবং রোমিয়ো কপ্টার গোটা বিশ্বে সেরা। এর ফলে আমাদের যৌথ সামরিক ক্ষমতা বাড়বে। আমাদের সামরিক বাহিনী একই সঙ্গে প্রশিক্ষিত হবে।’’

আরও পড়ুন: ‘দেখনদারিই’ দেখল বিদেশি সংবাদমাধ্যম

প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন, ভারতীয় নৌসেনার হাতে আগামী পাঁচ বছরে ২৪টি রোমিয়ো মাল্টি-রোল হেলিকপ্টার হাতে আসায় ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ভারসাম্য আসবে। কারণ, এত দিন চিনের কাছেই মাল্টি-রোল হেলিকপ্টার ও ডুবোজাহাজ থাকায় ওই এলাকায় চিনেরই বেশি দাপট ছিল। মাল্টি-রোল কপ্টার থেকে ডুবোজাহাজের উপরে নজরদারি করা যায়, তেমনই হামলাও করা যায়। ফলে নিজের যুদ্ধজাহাজ বাঁচাতে এর প্রয়োজনীয়তা যথেষ্ট। এই কপ্টারে একই সঙ্গে টর্পেডোও থাকবে, ক্ষেপণাস্ত্রও থাকবে। দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে লেনদেনে দীর্ঘ দিনের বাধা ছিল ভারতের সংশয়। আমেরিকার থেকে যুদ্ধাস্ত্র কিনলে তাতে কি আমেরিকারই নিয়ন্ত্রণ থেকে যাবে? আমেরিকা ইচ্ছে করলে ভারত কী ভাবে যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করছে, তার উপর নজরদারি চালাতে পারবে কি না? মার্কিন সামরিক কর্তাদের হাতে ওই সব যুদ্ধাস্ত্র নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরীক্ষার জন্য ছেড়ে দিতে হবে কি না?

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের যুক্তি, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে ‘মেজর ডিফেন্স পার্টনার’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরে দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা লেনদেনের সুযোগ আরও বেড়েছে। ভারতকে ‘স্ট্র্যাটেজিক ট্রেড অথরাইজেশন’-এর আওতায় লাইসেন্স ছাড়াই রফতানি, ফের রফতানি এবং প্রযুক্তির হাত বদলেরও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। দুই দেশ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কমকাসা (কমিউনিকেশন কমপ্যাটিবিলিটি অ্যান্ড সিকিওরিটি এগ্রিমেন্ট)-এ সই করেছে। যেখানে ভারত সি-১৩০জে, সি-১৭, পি-এইটআই বিমান, অ্যাপাচে, চিনুক কপ্টার বা এম-৭৭৭ আলট্রা লাইট হাউৎজারের সমস্ত প্রযুক্তিই ব্যবহার করতে পারবে। এত দিন আমেরিকা থেকে এই সব প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনা হলেও তার প্রযুক্তি পুরোপুরি কাজে লাগানো যেত না। সেখানে সীমারেখা ছিল।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, আমেরিকা থেকে যুদ্ধাস্ত্র কিনে ভারতের কী লাভ? তাতে তো আমেরিকার সংস্থার মুনাফা হচ্ছে। চাকরির সুযোগও আমেরিকায় তৈরি হচ্ছে! বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের যুক্তি, ‘‘ট্রাম্পও এ কথা পুরোপুরি মানবেন না। আমরা কম খরচে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করায় পিছিয়ে রয়েছি। সবই এখানে কম খরচে তৈরি করতে হবে, তার কোনও অর্থ নেই। সামরিক বাহিনীর চাহিদা মেনে যুদ্ধাস্ত্র আমদানি করায় কোনও ভুল নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE