মনযোগী: এআইসিসি-র বৈঠকে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। বৃহস্পতিবার। পিটিআই
রাস্তায় নামুন। মানুষের পাশে দাঁড়ান। শুধু ঘরে বসে টুইট করবেন না।
কার্যত এই সুরে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের কড়া বার্তা দিলেন সনিয়া গাঁধী। নতুন করে কংগ্রেসের সভানেত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরে সনিয়া বৃহস্পতিবারই প্রথম এআইসিসি-তে বিভিন্ন রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, পরিষদীয় দলনেতা ও কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচ্যসূচিতে ছিল সদস্য সংগ্রহ অভিযান এবং মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী পালন।
বৈঠকের শুরুতেই সনিয়া বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে, শহরে, রাস্তায় অকুতোভয় হয়ে লড়াই করতেই হবে। আর্থিক হোক বা সামাজিক, মানুষের সমস্যা নিয়ে সুনির্দিষ্ট বিক্ষোভের কর্মসূচি থাকতে হবে।’’ ঠিক হয়, অক্টোবরে দেশ জুড়ে ১০ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি হবে। কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতার মন্তব্য, ‘‘সেই পুরনো সনিয়া। যিনি ২০০৪-এ ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’-এর সমালোচনায় রাস্তায় নেমে দলকে ক্ষমতায় এনেছিলেন।’’
সনিয়া আজ বলেন, ‘‘শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় আগ্রাসী হলে চলবে না। যদিও সেটাও দরকার। কিন্তু তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সরাসরি মানুষের কাছে যাওয়া।’’ সনিয়ার এই বার্তায় অনেকের মনেই প্রশ্ন, তিনি কার দিকে ইশারা করছেন? প্রসঙ্গত, সভাপতির পদ ছাড়লেও রাহুলের প্রতিশ্রুতি ছিল, তিনি মাঠে-ময়দানে সক্রিয় থাকবেন। কিন্তু কেরলে নিজের লোকসভা কেন্দ্র ওয়ানাড ছাড়া তাঁকে আর কোথাও সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। যদিও তিনি নিয়মিত টুইটারে সক্রিয় রয়েছেন। এদিনের বৈঠকে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা থাকলেও রাহুল ছিলেন না। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত নেতা কে সি বেণুগোপালের যুক্তি, ‘‘এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক, প্রদেশ সভাপতি, পরিষদীয় দলনেতাদেরই বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। রাহুল এর কোনওটাই নন।’’ যদিও মনমোহন সিংহ, এ কে অ্যান্টনিরা বৈঠকে হাজির ছিলেন। কংগ্রেসি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আগামিকাল বৈঠক করবেন দলনেত্রী।
ভোটে হার এবং নেতৃত্বে সঙ্কট—এই জোড়া ধাক্কায় একের পর এক কংগ্রেস নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সনিয়া আজ বলেছেন, ‘‘আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, তাঁরা নিজেদের সুবিধাবাদী চরিত্র পরিষ্কার করে দিয়েছেন।’’ বরং সনিয়ার মতে, এখনই দলের শুদ্ধকরণের আদর্শ সময়। তাঁর কথায়, ‘‘এখনই স্পষ্ট হবে, কারা কংগ্রেসের আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ, কারা কংগ্রেসকে নিজের স্বার্থে কাজে লাগায়।’’
বেণুগোপাল বলেন, অক্টোবর থেকেই সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে। কিন্তু ভুয়ো সদস্য তৈরি করা বা এই সুযোগে শুধু নিজের লোক ঢোকানো চলবে না। অতীতে কংগ্রেসে ভুয়ো সদস্যের ভিত্তিতে সাংগঠনিক নির্বাচন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে সোমেন মিত্রের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরাজয়ের পরও ‘নিজের দল ভারী করে লক্ষ্যপূরণের’ অভিযোগ উঠেছিল।
কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, ডিজিটালে এবং হাতে-কলমে ফর্ম পূরণ করে সদস্য করা হবে। কংগ্রেসের সদস্য এখন ২ কোটির মতো। বিজেপির মতো ‘মিসড কল’ দিলেই সদস্য হয়ে যাওয়ার পথে কংগ্রেস হাঁটবে না। যদিও সাংগঠনিক নির্বাচন কবে হবে, তার কোনও নিশ্চয়তা কংগ্রেস নেতারা দিতে পারেননি। তাঁদের মতে, এক-দেড় বছরের মধ্যে তা হওয়ার সম্ভাবনা কম।
সনিয়া আজ বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদীকেও আক্রমণ করেছেন। মোদী নিজেকে গাঁধীর উত্তরসূরি হিসেবে তুলে ধরে, সর্দার বল্লভভাই পটেল, ভীমরাও অম্বেডকরকে কংগ্রেসের শিবির থেকে টেনে বিজেপির ‘আইকন’ করছেন। সনিয়া বলেন, ‘‘২০১৯-এর ভোটের রায় ভয়ঙ্কর ভাবে অপব্যবহার করা হচ্ছে। গণতন্ত্র এমন বিপদে পড়েনি। এই সব শক্তি গাঁধীজি, সর্দার পটেল, অম্বেডকরের আত্তীকরণ করে তাঁদের বার্তা ভুল ভাবে প্রচার করছে। প্রতিহিংসার রাজনীতি তুঙ্গে। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মুখ খুললে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy