অষ্টমী পেরিয়ে নবমী আসতে না আসতে অজান্তেই বেজে ওঠে বিসর্জনের সুর! মা আবার চলে যাবেন এক বছরের জন্য। তাই মন ভার হয়ে ওঠে। দিল্লির পুজোতেও এখন সেই সুর। দিল্লির বাঙালিরা প্রস্তুত হচ্ছেন দুর্গা প্রতিমার ভাসানের জন্য। দিল্লির পূজোর ভাসানের কথা এলেই উঠে আসে দু’টি প্রাচীন পূজোর বিসর্জনের কথা। একটি ১০২ বছরের পুরোনো তিমারপুরের পূজো। অন্যটি প্রায় সমসাময়িক কাশ্মীরি গেটের পূজো। দু’টি পুজোরই বৈশিষ্ট্য হল, গরুর গাড়িতে করে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিমা বিসর্জনের জন্য। তিমারপুর পূজোর সভাপতি সুখাংশু চট্টোপাধ্যায় জানালেন, তাঁদের প্রতিমা বিসর্জনের গরুর গাড়িটি এখন আর বলদ দিয়ে টানানো হয় না। আয়োজকরা নিজেরাই দুর্গা প্রতিমাকে বহন করে নিয়ে যান। তবে সেই যাত্রায় গরুর গাড়ি থাকে রীতি অনুযায়ী। কিন্তু দুর্ঘটনার আশঙ্কায় প্রায় ২০ বছর হল, তাঁরা এই বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েছেন।
সুখাংশুবাবু আরও জানালেন, সরকারি আবাসনের পূজো হওয়ার কারণে তাঁদের পূজোয় অর্থের প্রাচুর্য নেই। কিন্তু আছে সাবেকিয়ানা ও ঐতিহ্যের কৌলিন্য। এখনও তাঁরা খুব নিষ্ঠাভরে শাস্ত্রীয় রীতিনীতি মেনে পুজোর ব্যবস্থা করেন। বাঙালির চিরকালীন পোশাক ধুতি-পাঞ্জাবি, লালপেড়ে সাদা শাড়ি পরেন পুরুষ-মহিলারা। পংক্তি ভোজনের ঢালাও ব্যবস্থা থাকে। আর এই সবই তাঁদের নিয়ে যায় এক অন্য আভিজাত্যে। এমনকী বিসর্জনে যাওয়ার সময়েও তাঁদের পুরুষরা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে যান। তবে আজকাল সেই যাত্রায় কোনও মহিলা থাকেন না। কারণ ভাসানের দিন মদ্যপদের আচরণ ও নানা অসামাজিক কাজকর্ম বাড়তে থাকায় তাঁরা ইদানিং এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কর্মকর্তাদের দাবি, এই পুজোর টান এতটাই যে, বহু দিন আগে তিমারপুর ছেড়ে চলে গেছেন, এমন মানুষও পুজোর দিনগুলি্তে ফিরে আসেন এখানে উৎসবে সামিল হতে। এমনকী কলকাতায় ফিরে যাওয়া পরিবারের ক্ষেত্রেও তা কোনও ব্যতিক্রম নয়!
সমসাময়িক কাশ্মীরি গেটের পূজোটি একইরকম বনেদি ঘরানায় অনুষ্ঠিত হয় প্রতি বছর। এই পুজোও পুরনো বাসিন্দাদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। তবে ফারাকটা হল, তাঁরা গরুর গাড়িতে করে প্রতিমা বিসর্জনের প্রথাটি এখনও আক্ষরিক অর্থেই বজায় রেখেছেন। তাঁদের শোভাযাত্রায় দুর্গা প্রতিমাকে বহন করার জন্য এখনও বলদই ব্যবহার করা হয়।
ওয়াকিবহাল মানুষ মাত্রই জানেন দিল্লির দুর্গাপূজোর বিসর্জন হয় যমুনার পাড়ে দুটি আলাদা জায়গায়। একটি দক্ষিণ দিল্লির পূজোগুলির বিসর্জন, যেটি চিত্তরঞ্জন পার্ক শিবমন্দিরের ব্যবস্থাপনায় কালিন্দী কুঞ্জে হয়ে থাকে। বাকি পুজোগুলির বিসর্জনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে নতুন দিল্লি কালীবাড়ি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy