ঝড়-বৃষ্টিতে উপড়ে পড়েছে গাছ। ছবি: পিটিআই।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত উত্তর-পশ্চিম ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য। প্রবল ধুলোঝড়ের দাপটে বিপর্যস্ত রাজস্থান। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ একটানা ঝড়বৃষ্টিতে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশ। মেঘভাঙা বৃষ্টির কবলে উত্তরাখণ্ডও। সব মিলিয়ে ওই তিন রাজ্যে এখনও পর্যন্ত অন্তত ৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা একশোরও বেশি। প্রশাসনের আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।
বুধবার রাত থেকেই উত্তরপ্রদেশে শুরু হয় প্রচণ্ড গতিবেগে ঝড়। সঙ্গে একটানা বৃষ্টি। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ৬৪ জন। তার মধ্যে শুধু আগরাতেই ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে প্রচণ্ড ধুলোঝড় শুরু হয় রাজস্থানে। সে রাজ্যে মারা গিয়েছেন ৩১ জন। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরাখণ্ডেও ২ জনের প্রাণ গিয়েছে। তিন রাজ্যেই ঝড়ের দাপটে উপড়ে পড়েছে বড় বড় গাছ। উড়ে গিয়েছে দোকানঘর, অস্থায়ী ছাউনি, ঘরবাড়ির ছাদ। স্বাভাবিক জনজীবন কার্যত স্তব্ধ। ধ্বংসের চেহারা ক্রমশই ভয়াবহ আকার নিচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশে সবেচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আগরা। সেই সঙ্গে বিজনৌর, সহারনপুর, বরেলীতেও মৃত্যু হয়েছে অনেকের। জেলা প্রশাসনকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ওই সমস্ত জেলায় যাতে দ্রুত ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া যায়, তারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
ঝড়-বৃষ্টিতে আগরায় ভেঙে পড়েছে বাড়ির একাংশ। ছবি: এএফপি।
রাজস্থানে গুমোট গরমের অস্বস্তি ছিল দিন কয়েক ধরেই। দাবদাহের প্রবাহে কোটা-সহ কোনও কোনও জায়গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছিল সাড়ে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বুধবার রাতে হ়ঠাৎই শুরু হয় প্রবল হাওয়া। হাওয়ার গতিবেগ ক্রমশই বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে শুরু হয় প্রবল ধুলোঝড়। ক্রমশই তা ভয়াবহ চেহারা নেয়। প্রবল ধুলোঝড়ের তাণ্ডব চলে অলওয়ার, ভরতপুর, ঢোলপুর-সহ পূর্ব রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। ঘটনায় মৃতের পরিবারের প্রতি শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, শুধুমাত্র ভরতপুরেই মারা গিয়েছেন ১১ জন। এ ছাড়া অলওয়ারে চার, ঢোলপুরে পাঁচ, ঝুনঝুনু, বিকানেরে আরও অনেকে মারা গিয়েছেন। ঝড়ের দাপটে অলওয়ারে একশোরও বেশি গাছ উপড়ে পড়েছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি-দোকানপাটের উপরে সেই গাছ পড়ে গুরুতর জখম হয়েছেন বহু মানুষ। ঝড়ের জেরে বিদ্যুতের খুঁটির উপরে গাছ পড়ায় তার ছিঁড়ে বহু জায়গায় বিদ্যুৎ পরিষেরা বিঘ্নিত হয়েছে। বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, ঝড়ের দাপটে এক হাজারেরও বেশি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। গোটা শহরই অন্ধকারে ডুবে গিয়েছে। পরিষেবা স্বাভাবিক হতে আরও দিন দুয়েক সময় লাগবে। ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজে নেমেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। বৃহস্পতিবার জেলার সমস্ত স্কুল-কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অলওয়ারের জেলাশাসক রাজন বিশাল।
Have directed Ministers and concerned officials to affected areas to begin relief work immediately and restore utilities. An unfortunate incident, we have been working closely with local authorities to mitigate the situation.
— Vasundhara Raje (@VasundharaBJP) May 3, 2018
উত্তরপ্রদেশ-রাজস্থানের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে উত্তরাখণ্ড। সেখানে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে বহু এলাকা। বিপর্যয়ের ফলে আপাতত থমকে গিয়েছে চারধাম যাত্রা। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে চামোলী এবং উত্তরকাশী জেলার অসংখ্য ঘরবাড়ি। বৃষ্টির জলে ঘরে এসে ঢুকেছে আবর্জনার স্তূপ। যদিও মেঘভাঙা বৃষ্টির কথা অস্বীকার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে সরকারি এক সূত্র জানিয়েছে, ঝড়জলের ফলে আবর্জনা ভেসে আসায় বদ্রিনাথ জাতীয় সড়কে আটকে পড়েছে বহু গাড়ি। আবর্জনা সরানোর কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। সে রাজ্যে মারা গিয়েছেন ২ জন।
রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশ— দুই রাজ্যেই ইতিমধ্যে মৃতদের পরিবারের জন্য ৪ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেছে ওই রাজ্য দু’টির সরকার। ওই তিন রাজ্যের বিপর্যয়ের প্রভাবে পঞ্জাব এবং হরিয়ানাতে বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy