Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সামনে ভোট, দিল্লির নির্বাচন কমিশনে ‘গেরিলা যুদ্ধে’ তৃণমূল, সিপিএম!

গেরিলা-যুদ্ধ চলছে যেন! নির্বাচন কমিশনের কাছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট নিয়ে দরবার করছেন সীতারাম ইয়েচুরি। ঠিক তখনই গেটের বাইরে এসে পৌঁছলেন মুকুল রায়। গাড়ির দরজা খুললে নামতে না নামতেই শুনলেন ভিতরে সিপিএমের নেতারা রয়েছেন। শুনেই গাড়িতে উঠে বিদায়। বলে গেলেন, পরে আসবেন। আজ বিকেলে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি ও নীলোৎপল বসু মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জাইদির সঙ্গে বৈঠক করতে যান। তখনই সেখানে হাজির হন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়।

দিল্লির নির্বাচন কমিশনের অফিসে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি ও নীলোৎপল বসু।- নিজস্ব চিত্র।

দিল্লির নির্বাচন কমিশনের অফিসে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি ও নীলোৎপল বসু।- নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৬ ২০:১১
Share: Save:

গেরিলা-যুদ্ধ চলছে যেন!

নির্বাচন কমিশনের কাছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট নিয়ে দরবার করছেন সীতারাম ইয়েচুরি। ঠিক তখনই গেটের বাইরে এসে পৌঁছলেন মুকুল রায়। গাড়ির দরজা খুললে নামতে না নামতেই শুনলেন ভিতরে সিপিএমের নেতারা রয়েছেন। শুনেই গাড়িতে উঠে বিদায়। বলে গেলেন, পরে আসবেন।

বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, দিল্লির নির্বাচন সদনও রণাঙ্গন হয়ে উঠছে। প্রথমে তৃণমূল, তার পর কংগ্রেস, এ বার সিপিএম— একে একে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে দরবার করছেন।

আজ বিকেলে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি ও নীলোৎপল বসু মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জাইদির সঙ্গে বৈঠক করতে যান। তখনই সেখানে হাজির হন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়।

জাইদি কি একই সঙ্গে দু’দলের নেতাদের সময় দিয়েছিলেন?

মুকুল রায় জানালেন, না, তাঁর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনারের কোনও ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ ছিল না।

তা হলে কেন এসেছিলেন?

মুকুলের জবাব, নির্বাচনের বিভিন্ন খুঁটিনাটি দিক নিয়ে সচিব স্তরের অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছিলেন। তা হলে কি সিপিএম নেতারা ভিতরে থাকায় সমস্যা হল? মুকুলের জবাব মেলেনি। জাইদির সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে এসে মুকুলবাবুর এসেও চলে যাওয়ার ঘটনা শুনে ইয়েচুরিরাও অবাক!

আরও পড়ুন- জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা, বলল ভারত

দু’সপ্তাহ আগেই মুকুল রায় সহ তৃণমূলের সাংসদরা নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন, রাজ্যে ‘অভূতপূর্ব’ শান্তি রয়েছে। তাই ভোটের সময় আধা সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। এর পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কাছেও একই দাবি জানিয়ে মুকুলরা তাঁকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে আশ্বস্ত করেন। ইয়েচুরি মন্তব্য করেন, ‘‘ওঁরা যেখানে আশ্বস্ত, সেখান থেকেই আমাদের আশঙ্কার শুরু।’’

আজ ইয়েচুরি দাবি তুলেছেন, সাধারণ মানুষ যাতে নিজের ভোট নিজে দিতে আসার আত্মবিশ্বাস পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। সব পোলিং বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় রাজ্যে আধা সেনা মোতায়েন করা হলেও জওয়ানদের যে কার্যত নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল, সে বিষয়েও নির্বাচন কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ইয়েচুরিরা।

কমিশন সূত্রের খবর, জাইদি সিপিএম নেতাদের আশ্বাস দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারি শুরু হয়ে গিয়েছে। কোথায়, কত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হবে, তাদের কী ভাবে কাজে লাগানো হবে, সে দিকেও কমিশনের তীক্ষ্ণ নজর থাকবে।

তৃণমূল সরকার কী ভাবে ভোটের আগে পুলিশ-প্রশাসনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে, তা বোঝাতে আজ সরাসরি ভারতী ঘোষকে বিশেষ পদে নিয়োগ ও নন্দিনী চক্রবর্তীকে বদলি করার উদাহরণ দিয়েছে সিপিএম। কমিশনকে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ভারতী ঘোষের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নিয়ে সব বিরোধী দল অভিযোগ তুলেছে। তাঁকে মাওবাদী অধ্যুষিত জেলাগুলির ওএসডি করে নবান্নে নিয়োগ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মতো তিন বছরের বেশি পদে থাকা অফিসারদের বদলি করার নিয়ম। সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে ঘুর পথে ভারতীকে জঙ্গলমহলের তিনটি জেলার নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। একই ভাবে প্রেসিডেন্সি ডিভিশনের কমিশনারের পদ থেকে আইএএস অফিসার নন্দিনী চক্রবর্তীকে সরিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গও তুলেছে সিপিএম। অভিযোগ তোলা হয়েছে, নন্দিনী কমিশনার হিসেবে সাতটি স্পর্শকাতর জেলায় নির্বাচন কমিশনারের নির্দেশ মতো কাজ করছিলেন। তার পরেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

সিপিএমের দাবি, সারদার মতো চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে শাসক দলের বেশ কিছু নেতা, মন্ত্রী এখন জেলবন্দি। সেই দুর্নীতির টাকা ভোটে প্রভাব খাটানোর কাজে ব্যবহার করার আশঙ্কা রয়েছে। এ দিকেও কমিশনকে নজর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন সিপিএমের নেতারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

election commission delhi cpm tmc leaders
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE