Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
মধ্যপ্রদেশ

ঋণের বোঝা কমাতে সন্তান বিক্রির পথে চাষিরা

অসময়ে ভারি বৃষ্টিপাত আর শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল খেতের সমস্ত ফসল। সামান্য সঞ্চয়ে সম্ভব হয়নি নতুন ফসল বোনার। তাই উপায় ছিল না ঋণ নেওয়া ছাড়া। ক্রমে বাড়তে থাকে সেই বোঝাও। উপায় না দেখে গত বছর অগস্ট মাসে নিজের দুই ছেলেকে বিক্রি করে দেন মধ্যপ্রদেশের মোহনপুরা গ্রামের চাষি লাল সিংহ।

সংবাদ সংস্থা
মোহনপুরা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৫ ০৩:২৩
Share: Save:

অসময়ে ভারি বৃষ্টিপাত আর শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল খেতের সমস্ত ফসল। সামান্য সঞ্চয়ে সম্ভব হয়নি নতুন ফসল বোনার। তাই উপায় ছিল না ঋণ নেওয়া ছাড়া। ক্রমে বাড়তে থাকে সেই বোঝাও। উপায় না দেখে গত বছর অগস্ট মাসে নিজের দুই ছেলেকে বিক্রি করে দেন মধ্যপ্রদেশের মোহনপুরা গ্রামের চাষি লাল সিংহ।

লাল সিংহ স্বীকার করেছেন, ‘‘এ ছাড়া ধার শোধ করার আর কোনও উপায় ছিল না আমার কাছে। চাষ করার জন্য আরও টাকার প্রয়োজন ছিল। রোজগার না থাকলে সবাই না খেয়ে মরতাম।’’ ৩৫ হাজার টাকায় এক বছরের চুক্তিতে এক খামার মালিকের কাছে দুই ছেলেকে বিক্রি করে দেন রাম সিংহ। তিনি জানতেন, তিনি যা করছেন তা বেআইনি। অত্যন্ত খারাপ পরিবেশে শারীরিক, মানসিক অত্যাচার সয়ে তাঁর দুই ছেলেকে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হবে দিনের পর দিন। এমনকী মৃত্যুও অসম্ভব নয় তাদের।

তবে লাল সিংহ একা নন। সমস্ত খারাপ সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে লাল সিংহের পথে হাঁটছেন মধ্যপ্রদেশের বহু চাষিই। চুক্তি ভিত্তিক শ্রমিক হিসাবে কাজ করার জন্য টাকার বিনিময়ে কারখানা বা খামার মালিকের হাতে তুলে দিচ্ছেন সন্তানদের। চাষে ব্যাপক ক্ষতির জেরে বাড়ছে শিশু পাচার, কৃষক আত্মহত্যার মতে ঘটনা। মধ্যপ্রদেশের হারদার জেলা শাসক রজনীশ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, এপ্রিলে খারগোন এবং হারডা জেলা থেকে পাঁচ জন শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে, ঋণের দায়ে যাদের বিক্রি করে দিয়েছিল পরিবার। এদের মধ্যে ছিল লাল সিংহের দুই ছেলেও। রজনিশ শ্রীবাস্তবের কথায়, ‘‘এটা বেশ দুশ্চিন্তার বিষয়। দেখা যাচ্ছে, চাষিরা মূলত ধার মেটাতে সন্তানদের বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।’’

ঘর ছাড়ার আট মাস বাদে উদ্ধার হয় লাল সিংহের দুই ছেলে। কিন্তু তার পরেও আর ঘরে ফিরতে রাজি হয়নি ১২ বছরের সুমিত এবং ১১ বছরের অমিত। এই আট মাসে বহু অত্যাচার সইতে হয়েছে তাদের। তবু বাড়ি ফিরলেও যে আদর জুটবে না তা জানা ছিল দু’ভাইয়ের। কী কাজ ছিল তাদের? অমিত বলে, ‘‘ছাগল বা আরও অনেক পশুর দেখাশোনা করতে হত আমাদের। কারণে-অকারণে মার জুটত কপালে।’’ খাবার জুটত নামমাত্র। দিনে দু’বার বা অনেক সময় তাও পেত না তারা। কিন্তু বাড়ি ফিরলেই বা তা জুটবে কী করে? এই দুশ্চিন্তাও বড় হয়ে উঠেছিল দুই কিশোরের মনে।

সুমিত-অমিতের মা মনিবাইও বলেছেন, ‘‘জানি সন্তান বিক্রি বেআইনি। কিন্তু আমরা পেট চালানোর জন্য আমরা এই কাজ করি। না হলে বাকি অনেক চাষির মতো আমাদের আত্মহত্যা করতে হত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

madhya pradesh farmer rain money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE