Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

শহরে যাচ্ছে না ফল-দুধ, আনাজ, শুরু গাঁও বন্‌ধ

কর্মসূচির নাম ‘গাঁও বন্‌ধ’। কিছু আনাজ-দুধ পথে ফেলে প্রতীকী প্রতিবাদ হলেও, আন্দোলনকারীরা ঠিক করেছেন, কৃষি ও খামারজাত সব পণ্য নষ্ট না করে গ্রামবাসীদের মধ্যে বিক্রি করা হবে। গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার তত্ত্বই যেন ভিন্ন চেহারায়!

প্রতিবাদ: রাস্তায় দুধ ফেলে বিক্ষোভ আহমেদনগরের কৃষকদের। শুক্রবার পুণেয়। ছবি: পিটিআই

প্রতিবাদ: রাস্তায় দুধ ফেলে বিক্ষোভ আহমেদনগরের কৃষকদের। শুক্রবার পুণেয়। ছবি: পিটিআই

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৮ ০৩:১১
Share: Save:

চাষিরা রাস্তায় এনে জড়ো করছেন আনাজ, ফল, দুধ। কিন্তু শহরের পাইকারি বাজারগুলিতে নিয়ে যাচ্ছেন না। ভোপাল, মন্দসৌর, চণ্ডীগড়-সহ উত্তর ও মধ্য ভারতের বিভিন্ন শহরের আশপাশে আজ এই রকমই ছিল ছবিটা। এবং এমনই চলতে পারে আরও ৯ দিন! ১৭২টি কৃষক সংগঠন মিলে ২২টি রাজ্যে ১০ দিনের ধর্মঘট শুরু করেছে। এই ক’দিন গ্রাম থেকে কোনও কৃষি ও খামারজাত পণ্য শহরে পাঠাবেন না কৃষকরা।

কর্মসূচির নাম ‘গাঁও বন্‌ধ’। কিছু আনাজ-দুধ পথে ফেলে প্রতীকী প্রতিবাদ হলেও, আন্দোলনকারীরা ঠিক করেছেন, কৃষি ও খামারজাত সব পণ্য নষ্ট না করে গ্রামবাসীদের মধ্যে বিক্রি করা হবে। গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার তত্ত্বই যেন ভিন্ন চেহারায়! কৃষক সংগঠনগুলি কেন্দ্রীয় সরকার ও সমাজের উঁচু তলাকে সমঝে দিতে চায়, শহর ও শাসকরা তাদের ভালমন্দ দেখছে না। গ্রামগুলি মুখ ফেরালে শহরের কী হয়, ১০ দিনে সেটাই দেখুক তারা।

গাঁও বন্‌ধের প্রথম দিনেই সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পঞ্জাব, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র। ৬২টি কৃষক গোষ্ঠীকে নিয়ে গড়া কিসান একতা মঞ্চের নেতা রামনদীপ সঙ্ঘ মান জানাচ্ছেন, পঞ্জাবে আজ দুধ সরবরাহ ৪০ শতাংশ ব্যাহত হয়েছে। আগামী ন’দিনে উত্তর ও মধ্য ভারত-সহ গোটা দেশেই কৃষিপণ্যের আকাল দেখা দিতে পারে শহরগুলিতে। ডিজেলের আকাশছোঁয়া দামের জন্য এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে গাঁও বন্‌ধের জেরে ফল-আনাজ-দুধের দাম চড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কিসের জন্য এই আন্দোলন? মূল দাবি তিনটি। এক, মকুব করতে হবে কৃষকদের সব রকম ঋণ। দুই, সব রকম খরচ ধরে উৎপাদন ব্যয় যা দাঁড়াবে, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য হতে হবে তার চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। তিন, দিতে হবে আয়ের নিশ্চয়তা।

গাঁও বন্‌ধের শেষে ১০ জুন ভারত বন্‌ধ ডেকেছে কৃষক সংগঠনগুলি। ব্যবসায়ীদেরও শামিল হওয়ার ডাক দিয়েছে তারা। রাষ্ট্রীয় কিসান মজদুর মহাসঙ্ঘের সভাপতি শিবকুমার শর্মা (কাকাজি)-র কথায়, ‘‘বিগত বছরগুলিতে যে সব কৃষকের প্রাণ গিয়েছে, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। ১০ জুন বেলা দু’টো পর্যন্ত ভারত বন্‌ধ হবে। সব ব্যবসায়ীকে এই বন্‌ধে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’’

সরাসরি মাঠে না নামলেও কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছে কংগ্রেস। গত ৬ জুন বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে আন্দোলনরত কৃষকদের উপরে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। ছ’জন কৃষকের মৃত্যু হয় তাতে। ওই ঘটনার বর্ষপূর্তির দিনে রাহুল গাঁধী মন্দসৌরে থাকবেন। সেখানে বাড়তি পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে এখন থেকেই। যদিও বিজেপি বোঝাতে চাইছে, বিষয়টিকে আমলই দিচ্ছে না তারা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কথায়, ‘‘কংগ্রেস সভাপতি ভোটের সময় এ সব করে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান স্পষ্ট বলেছেন, আন্দোলনটা কংগ্রেসের। কৃষকদের নয়।’’ পাশাপাশি রাজনাথের কটাক্ষ, ‘‘উত্তরপ্রদেশের ভাট্টা পারসলের কথা রাহুল ভুলে গিয়েছেন। এখন মন্দসৌরের কথা বলছেন! ৬০ বছর ক্ষমতায় থেকে কৃষকদের কোন উন্নতিটা করেছে কংগ্রেস?’’

এ বছরই ১১ মার্চ রাতে কৃষকদের মহামিছিল পায়ে পায়ে ঢুকে এসেছিল দেশের বাণিজ্যনগরীতে। বিক্ষত পায়ে ৫০ হাজার কৃষক ও দলিত সে বার গ্রাম ভারতের শক্তির একটু নমুনা দেখিয়েছিল মাত্র। আন্দোলনের পথে ফেরা নিয়ে নতুন করে তর্ক জেগেছিল বাম শিবিরে। আম-মুম্বইকর পথে নেমে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁদের। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস কথা দিয়েছিলেন মিটবে দাবি। মিটেছে কী? আজকের গাঁও বন্‌ধই তার জবাব। কিসান একতা মঞ্চের দেবেন্দ্র শর্মার বক্তব্য, ‘‘কৃষির সঙ্কট নিয়ে সরকার ও সমাজের উঁচুতলার মানুষদের কোনও ভাবনাই নেই। এদের ঘুম ভাঙানোটা খুব জরুরি। দেশকে বুঝতে হবে কৃষকদের গুরুত্ব কতটা।’’ দেবেন্দ্রর ধারণা, বড় বড় শহরগুলি এ বার তা টের পাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bharat bandh Farmer protest vegetable
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE