গরু রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়বেন কৃষকরা়। এত দিন এই আশঙ্কার কথা বলছিল কৃষক সংগঠনগুলি। তাতে সায় দিচ্ছিলেন অর্থনীতিবিদরাও। এ বার খাস অর্থ মন্ত্রকের অন্দরমহল থেকেই সেই সতর্কবার্তা দেওয়া হল।
অর্থ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে আজ যে আর্থিক সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়েছে, সুকৌশলে বলা হয়েছে, গবাদি পশু জবাইয়ে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা টানা হলে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরাই।
সমীক্ষার কোথাও সরাসরি গবাদি পশু জবাইয়ে নিষেধাজ্ঞা বা গোরক্ষক বাহিনীর উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু বলা হয়েছে, কর্মক্ষমতা হারানোর পরে গবাদি পশুর দামের উপরেও পশুপালকদের রুটিরুজি নির্ভর করে। এমনিতেই কৃষি থেকে আয় পড়তির দিকে। কোনও ‘সামাজিক নীতি’-র জেরে পশুর মাংস বেচে আয় বন্ধ হলে এবং বুড়িয়ে যাওয়া গবাদি পশুকে বসিয়ে খাওয়াতে হলে, চাষি-পশুপালকদের আয় আরও কমবে। এই সব ‘সামাজিক নীতির’ ফলে সমাজে ক্ষতিই হবে।
আর্থিক সমীক্ষা তৈরি করেন অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তা সংসদে পেশ করেছেন। মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই ‘সামাজিক নীতি’ কি গবাদি পশু জবাইয়ে নিষেধাজ্ঞা? তাঁর জবাব, ‘‘এই সব প্রশ্ন করে আমাকে বিপদে ফেলবেন না।’’ কিন্তু আর্থিক সমীক্ষায় গো-জবাই রদ ঘিরে বিপদের কথা উল্লেখ করায় অনেকেরই বক্তব্য, সঙ্ঘ-পরিবারের উগ্রহিন্দুত্ব নিয়ে মোদী সরকারের মধ্যেই আপত্তি রয়েছে।
আরও পড়ুন: বৃদ্ধি ঢিমে, সঙ্কুচিত শিল্প, ভরসা সেই সুদ ছাঁটাই!
মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গোমাংস নিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু। এক দিকে গোমাংস রাখার অভিযোগে একের পর এক পিটিয়ে খুন। অন্য দিকে গোমাংসে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা টানার চেষ্টা। অভিযোগ ওঠে, সরকার মানুষের খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। কিন্তু তাতেও না থেমে হাটেবাজারে কোনও গবাদি পশুই জবাইয়ের উদ্দেশ্যে কেনাবেচা করা যাবে না বলে নিয়ম জারি করেছিল কেন্দ্র। সুপ্রিম কোর্ট তার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তার আগেই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল কৃষক, পশুপালক, মাংস রফতানি ও চর্ম শিল্পমহল থেকে। এ বার সরকারের অন্দরমহলেই আপত্তি উঠল।
সিপিএমের কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লার যুক্তি, ‘‘কৃষকদের আয়ের ৭০ ভাগ আসে জমি থেকে। বাকিটা পশুপালন থেকে। চাষের ক্ষতি সামলাতে না পেরে কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন। দুধ দেওয়া বা মাঠে হাল টানা বন্ধ করার গরু-মোষ পুষতে হলে তার খাইখরচ কোথা থেকে আসবে!’’ জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক বিকাশ রাওয়ালের বক্তব্য, ‘‘বছরে ৩.৭ কোটি পুরুষ গরু-মোষ জন্ম হয়। জবাই বন্ধ হলে এদের খাবারের পিছনে বছরে ৫.৪ লক্ষ কোটি টাকা খরচ।’’ রাওয়ালের প্রশ্ন, এই আর্থিক দায়ভার কি সরকার বইতে রাজি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy