Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
assam

বাঘজানের আগুনে সিঁদুরে মেঘ ডিব্রু শইখোয়ায়, বিপন্ন বহু বিরল প্রজাতির প্রাণী

মাগুরি বিলের জলে তেল মিশে বিরল গ্যাঞ্জেটিক ডলফিন (শুশুক) এবং বহু মাছ মারা গিয়েছে। বিলের আশপাশের জঙ্গল ও ঘাসের প্রান্তর নষ্ট হওয়ায় বেশ কিছু বিপন্ন প্রজাতির পাখির প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস হয়েছে।

মাগুরি বিল এলাকার জীববৈচিত্রের বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা—ছবি:পিটিআই

মাগুরি বিল এলাকার জীববৈচিত্রের বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা—ছবি:পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২০ ১৫:০৮
Share: Save:

তিনসুকিয়ার বাঘজানে প্রাকৃতিক গ্যাসের কূপে বিস্ফোরণের জেরে ভয়াবহ আগুন ৪৮ ঘণ্টা পরেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ফলে মাগুরি বিল এলাকার জীববৈচিত্রের বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। সেই সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসছে আগামী দিনে আরও বড় আশঙ্কার কথা।

গত মঙ্গলবার দুপুরে অয়েল ইন্ডিয়ার পাঁচ নম্বর রিগের আগুনে দুই দমকলকর্মীর মৃত্যু এবং জনবসতির ক্ষতির পাশাপাশি ইতিমধ্যেই বিস্তীর্ণ এলাকার জঙ্গল ধ্বংস হয়েছে। মাগুরি বিলের জলে তেল মিশে বিরল গ্যাঞ্জেটিক ডলফিন (শুশুক) এবং বহু মাছ মারা গিয়েছে। বিলের আশপাশের জঙ্গল ও ঘাসের প্রান্তর নষ্ট হওয়ায় বেশ কিছু বিপন্ন প্রজাতির পাখির প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থল থেকে কিলোমিটার দু’য়েক দূরেই ডিব্রু নদী। ওপারে ডিব্রু শইখোয়া জাতীয় উদ্যান। অদূর ভবিষ্যতে সেখানে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান শুরু করতে চলেছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে পরিবেশগত ছাড়পত্র মঞ্জুর করে বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়েছে। ফলে বাঘজানের মতো দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানকার বাসিন্দা বাঘ, হাতি, বুনো মহিষদের পাশাপাশি অতি বিপন্ন প্রজাতির হোয়াইট-উইংড উডডাকদের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে।

অয়েল ইন্ডিয়ার একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০০৬ সালের ওই কূপটি দৈনিক প্রায় ৮০ হাজার ঘন-মিটার গ্যাস উৎপাদনে সক্ষম। কিন্তু উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ৩,৮৭০ মিটারের ওই কূপটিকে আরও গভীর করার কাজ শুরু হয়েছিল গত মাসে। বরাত পেয়েছিল গুজরাতের একটি বেসরকারি সংস্থা। ড্রিলিংয়ের কাজ চলাকালীন গত ২৭ মে কূপের ‘প্রেসার কন্ট্রোল সিস্টেমে’ ত্রুটি ধরা পড়ে। সেদিনই বিস্ফোরণ ঘটায় অদূরের মাগুরি বিল এবং আশপাশের এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়তে থাকে। গ্যাস পাইপলাইনে ‘ক্যাপ’ পরানোর চেষ্টা করেও সফলতা না-মেলায় সোমবার সিঙ্গাপুর থেকে ‘অ্যালার্ট ডিজাস্টার কন্ট্রোল’-এর তিন বিশেষজ্ঞকে উড়িয়ে আনা হয় তিনসুকিয়ায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার তাঁরা কাজ শুরু করতেই বাধে বিপত্তি। বিস্ফোরণের ১৪ দিন পরে হঠাৎই আগুন লেগে যায় পাঁচ নম্বর রিগে।

আরও পড়ুন: গয়না বেচে চলছিল সংসার, উত্তরপ্রদেশের শ্রমিকের পাশে দাঁড়াল প্রশাসন

তিনসুকিয়ার পরিবেশকর্মী স্নিগ্ধা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সেই সময় থেকেই ডলফিন-সহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর মৃত্যুর খবর আসতে শুরু করেছিল। শুভঙ্কর শর্মারায়, মীণাক্ষী মরুনের মতো স্থানীয় বন্যপ্রাণপ্রেমীরা উড়ুক্কু কাঠবেড়ালি (ফ্লাইং স্কুইরেল), ধনেশ, কিং-কোয়েলের মতো বেশ কিছু পশুপাখির মৃতদেহ পেয়েছিলেন বিলের আশপাশে। যদিও আগুনের কারণে ওই এলাকায় যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করেছিল পুলিশ।

আরও পড়ুন: ফের জম্মু কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখায় পাক সেনার গোলা, নিহত সেনা জওয়ান

পক্ষীবিদ সুজন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘ইম্পর্ট্যান্ট বার্ড’ এরিয়া’-র শিরোপা পাওয়া মাগুরি বিল ও সন্নিহিত এলাকায় প্রায় ৩০০ পাখি প্রজাতির উপস্থিতি নথিভুক্ত হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে বিপন্ন প্রজাতির ব্ল্যাক ব্রেস্টেড প্যারটবিল, সোয়াম্প প্রিনিয়া, জার্ডনস ব্যাবলার, মার্শ ব্যাবলাররা। তেল ও আগুনে দেশ-বিদেশের পক্ষীপ্রেমী এবং গবেষকদের প্রিয় এই গন্তব্যের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে গিয়েছে বলে তাঁর মত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Assam Tinsukia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE