হাতকড়া পরানো হাতগুলো ভ্যানের সিটের সঙ্গে তখনও বাঁধা শক্ত করে। মাথাগুলো হেলে পড়েছে সামনের দিকে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীর।
তেলঙ্গানা পুলিশের গুলিতে পুলিশের ভ্যানের মধ্যে এই অবস্থাতেই মিলেছে পাঁচ সন্দেহভাজন জঙ্গির দেহ। এই ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে ভুয়ো সংঘর্ষের। এক মামলার সূত্রে ওয়ারাঙ্গল জেল থেকে হায়দরাবাদের আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তাঁদের। অন্ধ্রে কালই সংঘর্ষের নামে চন্দনকাঠ পাচারকারী সন্দেহে ২০ জনকে গুলি করে মারার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পাঁচ বন্দির মৃত্যুতে এ বার ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ উঠল তেলঙ্গানা পুলিশের বিরুদ্ধেও।
গত সপ্তাহে সিমি জঙ্গিদের হামলায় তেলঙ্গানায় প্রাণ হারিয়েছিলেন তিন পুলিশকর্মী। তারই প্রতিশোধ নিতে ওই বন্দিদের মেরে ফেলা হল কি না তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। পুলিেশর দাবি, প্রতিশোধ নয়, আত্মরক্ষা করতেই গুলি চালাতে বাধ্য হন তাঁরা। নিহত পাঁচ জনের মধ্যে এক জন স্থানীয় জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ঘালবা-ই-ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা বলে পুলিশ সূত্রে খবর। নাম ভিকারুদ্দিন আহমেদ। বাকি চার জন ভিকারুদ্দিনেরই শাগরেদ। ২০০৭-এ গুজরাতে এক কনস্টেবল খুন এবং ২০০৯-এ হায়দরাবাদের সন্তোষনগরে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় বছর পাঁচেক আগে গ্রেফতার হন তাঁরা। ২০১০ সাল থেকে ওয়ারাঙ্গল কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেই বিচারাধীন ছিলেন পাঁচ জন। তবে ভিকারুদ্দিন বা তাঁর শাগরেদদের মধ্যে কেউই সিমি, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন বা লস্কর-ই-তইবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলে পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্য পুলিশের প্রধান অনুরাগ শর্মা।
মঙ্গলবার সকালে ১৭ জন পুলিশের একটি দল ওই বন্দিদের হায়দরাবাদের নামপল্লি আদালতে নিয়ে যাচ্ছিল। পুলিশের দাবি, মাঝপথে নালগোণ্ডার কাছে শৌচালয় যাবেন বলে গাড়ি থামাতে বলেন ভিকারুদ্দিন। খুলে দেওয়া হয় ভিকারুদ্দিনের হাতকড়া। পুলিশের বক্তব্য, দলবল নিয়ে আগে থেকেই পালানোর মতলব করেন বন্দিরা। ভ্যানে ফেরার পর তাঁর হাতে ফের হাতকড়া পরাতে গেলেই মারমুখী হয়ে ওঠেন ভিকারুদ্দিন। অন্য হাতে ছিনিয়ে নেন এক পুলিশকর্মীর রাইফেল। ভ্যানের দরজা এবং চার সঙ্গীর হাতকড়া খোলার চেষ্টা করেন। গুলিও চালান। পরিস্থিতি সামলাতে গুলি চালাতে বাধ্য হন পুলিশকর্মীরা।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি ও স্থানীয়েরা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছন, ভ্যানে তখন পড়ে আছে রক্তে ভেজা পাঁচটা দেহ। অথচ পুলিশকর্মীদের গায়ে ‘সংঘর্ষ’-এর আঁচ নেই এতটুকু! পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয়রা। ৪ এপ্রিল নালগোণ্ডাতেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল ২ সিমি জঙ্গির। ২০১৩-এ মধ্যপ্রদেশের খাণ্ডোয়া জেল থেকে পালিয়েছিল তারা। উত্তরপ্রদেশ, পুণেতে একাধিক বিস্ফোরণে নাম জড়িয়েছিল তাদের। তবে মঙ্গলবারের ঘটনাকে নিছক জঙ্গি-পুলিশ সংঘর্ষ বলতে নারাজ মানবাধিকারকর্মীরা। বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, বন্ধ ভ্যানের মধ্যে হাতকড়া পরা পাঁচ বন্দিকে সামাল দিতে গুলি চালাতে বাধ্য হল পুলিশ, এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ভিকারুদ্দিনের বাবা মহম্মদ আহমেদ-ও বলেছেন, ‘‘এই ঘটনা যে ভুয়ো সংঘর্ষ সে ব্যাপারে ১০০% নিশ্চিত। সিবিআই তদন্ত চাই।’’ বিক্ষোভের মুখে ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তেলঙ্গানা সরকারের রিপোর্ট তলব করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy