Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সংস্কারে জেটলি পাশে চান মমতা-নীতীশদেরও

রঘুরাম রাজনের সঙ্গে এত দিন একাই লড়ছিলেন অরুণ জেটলি। সেই লড়াইয়ে এ বার তিনি পাশে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়কদেরও। আর্থিক ক্ষেত্রের সংস্কার করতে গিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে সংঘাত বেঁধেছে মোদী সরকারের। অর্থমন্ত্রী জেটলি বাজেটে ঘোষণা করেন, সরকারি ঋণ নিয়ন্ত্রণ ও দেখভালের দায়িত্ব রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে নিয়ে পৃথক ঋণ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে দেওয়া হবে।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০৩:৪৩
Share: Save:

রঘুরাম রাজনের সঙ্গে এত দিন একাই লড়ছিলেন অরুণ জেটলি। সেই লড়াইয়ে এ বার তিনি পাশে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়কদেরও।

আর্থিক ক্ষেত্রের সংস্কার করতে গিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে সংঘাত বেঁধেছে মোদী সরকারের। অর্থমন্ত্রী জেটলি বাজেটে ঘোষণা করেন, সরকারি ঋণ নিয়ন্ত্রণ ও দেখভালের দায়িত্ব রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে নিয়ে পৃথক ঋণ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে দেওয়া হবে। একই ভাবে সরকারি ঋণপত্রের বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হবে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি-কে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন এতে আপত্তি তোলায় আপাতত পিছিয়ে এসেছেন জেটলি।

অর্থমন্ত্রী জানান, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা করেই এগোনো হবে। তবে আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করতে চান জেটলি। কারণ, সরকারের এই প্রস্তাবে রাজ্যগুলির মধ্যেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রাজ্যগুলি নিজের প্রয়োজনে যে ঋণ নেয়— জেটলির প্রস্তাবিত ব্যবস্থা চালু হলে সে ব্যাপারেও কেন্দ্র নাক গলাতে পারবে। অর্থ মন্ত্রক রাজ্যগুলির এই ‘অমূলক আশঙ্কা’ দূর করতে চায়। মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, ঋণ নিয়ন্ত্রণ ও দেখভালে স্বাধীন সংস্থা তৈরি হলে সেটি যেমন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আওতায় থাকবে না, তেমনই তা কেন্দ্রের অধীনেও থাকবে না।

রাজ্যগুলির বক্তব্য, এমনিতেই আর্থিক শৃঙ্খলা আইন (এফআরবিএম) চালুর পর রাজ্যগুলি বাজার থেকে ইচ্ছেমতো ঋণ নিতে পারে না। রাজকোষ ঘাটতিকে গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রাখতে হয়। যে জন্য উন্নয়ন খাতে বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হলেও ঋণ নিয়ে তা মেটানো যায় না। কিছু রাজ্যে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অর্থ মন্ত্রকের দাবি, কোন রাজ্য, কখন ঋণ নেবে, সেখানে কেন্দ্র নাক গলাবে না। এই কথাটাই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বোঝানো হবে।

অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার যুক্তি, ‘‘কোনও রাজ্য বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ক্ষমতা খর্ব করতে ঋণ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা তৈরি হচ্ছে না। এর উদ্দেশ্য আর্থিক ক্ষেত্রের সংস্কার। যাতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার শেয়ার বা ঋণপত্রের অভিন্ন বাজার তৈরি হয়। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে সরকারি ঋণপত্রের বাজারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নিজেই বোলার, নিজেই আম্পায়ার।’’ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাথমিক দায়িত্ব মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ। সে জন্য সে সুদের হার বাড়িয়ে রাখতে চায়। উল্টো দিকে, সরকারের হয়ে ঋণ নেওয়ার কাজ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কম সুদে ঋণ পেতে সেখানে ফের সুদের হার কম হলেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুবিধে। যার অর্থ স্বার্থের সংঘাত। সরকারি ঋণপত্র কেনাবেচাতেও একই সমস্যা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কই বাজারে নগদের জোগান বাড়াতে বা কমাতে প্রয়োজন মতো সরকারি ঋণপত্র বা বন্ড কেনাবেচা করে। এই বাজারের নিয়ন্ত্রণের ভার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে। এ জন্য সরকারি ঋণ দেখভালে পৃথক সংস্থা ও ঋণপত্রের বাজার নিয়ন্ত্রণের ভার সেবি-কে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

জেটলির যুক্তি, ২০০০-’০১-এর বার্ষিক রিপোর্টে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই প্রস্তাব দেয়। ২০০৭-এ পার্সি মিস্ত্রির রিপোর্ট, ২০০৯-এ রঘুরাম রাজনের রিপোর্টে একই যুক্তি দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE