Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিরক্ষা ছাড়িয়ে আরও কাছাকাছি প্যারিস-দিল্লি

কূটনৈতিক শিবিরের মতে— পুরনো মিত্র রাশিয়ার সঙ্গে যখন দূরত্ব বাড়ছে, তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই দেশটির সঙ্গে সমুদ্র নিরাপত্তা ক্ষেত্রে গাঁটছড়া বাঁধাটা ভারতের কাছে বড় বিষয়।

এক নৌকায়: বারাণসীর ঘাটে এলেন মোদী-মাকরঁ। সোমবার। ছবি: এএফপি

এক নৌকায়: বারাণসীর ঘাটে এলেন মোদী-মাকরঁ। সোমবার। ছবি: এএফপি

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০২:৪২
Share: Save:

নির্বাচনের মুখে নতুন করে কোনও প্রতিরক্ষা বিতর্কে জড়াতে চাইছে না মোদী সরকার। আর সে কারণে ফ্রান্সের অনুরোধ সত্ত্বেও নতুন করে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাব নিয়ে কোনও চুক্তির মধ্যে যায়নি কেন্দ্র। কিন্তু সে বিষয়টি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁর তিন দিনের ভারত সফরে কোনও প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছে না সাউথ ব্লক। বরং যথেষ্ট প্রসন্ন বিদেশ মন্ত্রক জানাচ্ছে, এই সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকল।

কূটনৈতিক শিবিরের মতে— পুরনো মিত্র রাশিয়ার সঙ্গে যখন দূরত্ব বাড়ছে, তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই দেশটির সঙ্গে সমুদ্র নিরাপত্তা ক্ষেত্রে গাঁটছড়া বাঁধাটা ভারতের কাছে বড় বিষয়। শুধু নিরাপত্তাই নয়, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রণনীতিতে ত্রাসে থাকা নয়াদিল্লিকে অক্সিজেন দিল মাকরঁর এই সফর।

ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সম্পর্কের ভিত তৈরি হয়েছিল সেই ৯০-এর দশকেই। পোখরানে দ্বিতীয় পরমাণু পরীক্ষার পরে ফ্রান্স ছিল পশ্চিমের একমাত্র দেশ যারা নয়াদিল্লিকে সমর্থন করেছিল। ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করারও বিরোধিতা করেছিল প্যারিস। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আটকে ছিল মূলত প্রতিরক্ষা সমঝোতা এবং উচ্চপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সমন্বয়ের উপরই। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ‘‘একই ভৌগোলিক এলাকায় সাধারণ স্বার্থরক্ষায় প্যারিসের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা এত দিন হয়নি। মাকরঁর এ বারের সফরে সে’টি হয়েছে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন ফরাসি দ্বীপে ভারত এত দিন বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত সুবিধা পেয়ে এসেছে। কিন্তু ওই অঞ্চলে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র বেজিং-এর দিকে চলে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হচ্ছে ফ্রান্স। ভারতের গুরুত্বও তাদের কাছে বেড়েছে।

আরও পড়ুন: মনোনয়ন পেশের শেষ দিনে নাটক

দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকে সমুদ্র-রাজনীতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে মোদী-মাকরঁর। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নৌ বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে চিনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে প্রতিহত করা, সমুদ্র অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা, নৌ চলাচলের স্বাধীনতা বাড়ানো, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়ানো— এই বিষয়গুলিকে আগামী দিনে অগ্রাধিকার দেবে দু’দেশ। স্থির হয়েছে, প্রয়োজনে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সমমনস্ক মিত্ররাষ্ট্রগুলিকেও পাশে নেওয়া হবে, কিন্তু রাশ থাকবে ভারত এবং ফ্রান্সের হাতেই।

বিদেশ মন্ত্রকের কর্তার বক্তব্য, ‘‘উন্নত দেশগুলি যখন একের পর এক দরজা বন্ধ করছে তখন ফ্রান্সের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের উপস্থিতি খোলা হাওয়ার মতো। বিকল্প শক্তি প্রকল্পে বিপুল আর্থিক সহায়তা, ফ্রান্সকে ভারতীয় ছাত্রদের প্রধান গন্তব্যস্থলে পরিণত করা, পরিবেশ রক্ষার যুদ্ধে ভারতের শরিক হওয়ার ব্যাপারেও প্রতিশ্রুতি দেন মাকরঁ।’’

ভারতীয় ছাত্রদের ইউরোপে পদার্পণের ক্ষেত্রে ফ্রান্সকে বেছে নেওয়ার জন্য টুইটে মাকরঁ যে আহ্বান জানিয়েছেন, তার আবার জবাব দিয়েছেন ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী বরিস জনসন। পাল্টা টুইটে তিনি তথ্য দিয়েছেন, ২০১৭-এ ব্রিটেনে ১৪ হাজার ভারতীয় ছাত্র এসেছে। কারণ সে দেশেই বিশ্বের সেরা ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি রয়েছে। সেই ‘লড়াই’-এর দিকে ইঙ্গিত করে বিদেশ মন্ত্রকের সূত্রে বলছেন, ‘‘ভারতীয় ছাত্রদের টানতে এখন কাড়াকাড়ি পড়ছে ফ্রান্স ও ব্রিটেনের মধ্যে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE