Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

অমেঠী আঁকড়ে গাঁধীদের দুর্গ দখল স্মৃতির

প্রচারপর্বে অমেঠী ‘কভার’ করতে গিয়ে শহরের সরগড়া তিনমাথার মোড়ে আলাপ হওয়া পঙ্কজ চ্যালেঞ্জ জানালেন, ‘‘দাদা, দেখে নেবেন, দিদিই জিতবেন। আপনাদের বাংলার দিদি নন, অমেঠীর দিদির কথা বলছি।’’

অমেঠীতে স্মৃতি ইরানি। পিটিআই

অমেঠীতে স্মৃতি ইরানি। পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০৩:৪৪
Share: Save:

ভরদুপুরে ফোনটা এসেছিল অমেঠী থেকে। মোবাইলের ও-প্রান্তে স্থানীয় বিজেপি নেতা পঙ্কজ পাল।

প্রচারপর্বে অমেঠী ‘কভার’ করতে গিয়ে শহরের সরগড়া তিনমাথার মোড়ে আলাপ হওয়া পঙ্কজ চ্যালেঞ্জ জানালেন, ‘‘দাদা, দেখে নেবেন, দিদিই জিতবেন। আপনাদের বাংলার দিদি নন, অমেঠীর দিদির কথা বলছি।’’

সন্ধ্যায় সেই পঙ্কজের কথাই মিলে গেল। যে অমেঠীতে সঞ্জয় গাঁধী, রাজীব গাঁধী, সনিয়া গাঁধী সাংসদ ছিলেন, যে অমেঠীতে রাহুল গাঁধী গত ১৫ বছর ধরে সাংসদ, গাঁধী পরিবারের সেই দুর্গেই রাহুলকে প্রায় ৫৬ হাজার ভোটে হারিয়ে দিলেন স্মৃতি। ঘরের মাঠে রাহুলকে হারাতে বদ্ধপরিকর অমিত শাহ গত তিন বছর ধরে বারবার স্মৃতিকে অমেঠীতে পাঠিয়েছেন। স্মৃতি এমন ভাবে পড়ে থেকেছেন, কেন্দ্রের নানা প্রকল্পের কাজ করিয়েছেন, যেন তিনিই সাংসদ। এসপি-বিএসপি অমেঠীতে প্রার্থী দেয়নি। তাতেও আটকানো গেল না মহীরুহ পতন।

বস্তুত, বিজেপির এতটা তৎপরতা সনিয়া গাঁধীর কেন্দ্র রায়বরেলীতেও দেখা যায়নি। রাহুল কেরলের ওয়েনাডে প্রার্থী হওয়ার পরে বিজেপি নেতারা বলেছিলেন, অমেঠীতে হার দেখছেন রাহুল। তা-ই হয়েছে। ওয়েনাডে তিনি চার লক্ষাধিক ভোটে জিতলেও হাতছাড়া হয়েছে অমেঠী।

অমেঠীর আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগেই হার স্বীকার করে নেন কংগ্রেস সভাপতি। আজ দলীয় দফতরে বলেন, ‘‘স্মৃতি ইরানিজি জিতেছেন, ওঁকে অভিনন্দন। অমেঠীর জনতা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাকে সম্মান করি। আমি চাইব, স্মৃতিজি ভালবেসে অমেঠীর জনতার দেখভাল করুন। মানুষ যে ভরসা রেখেছেন, পূরণ করুন।’’ এর পরেই স্মৃতি ছোট্ট টুইট করেন, ‘কৌন কহতা হ্যায় আসমান মে সুরাখ নহি হো সকতা’। কে বলে আকাশে ছিদ্র হয় না!

পাঁচ বছর আগে অমেঠীতে হারলেও ব্যবধান এক লক্ষের কাছাকাছিতে নামিয়ে এনেছিলেন স্মৃতি। ১৯৬৭-তে অমেঠী নতুন লোকসভা কেন্দ্র হয়। ১৯৮০-তে সঞ্জয় গাঁধী সেখানে জেতেন। আজকের আগে মাত্র দু’বার কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়েছিল অমেঠী। ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির কাছে, ১৯৯৮ সালে বিজেপির কাছে। সেটাও অমেঠীর রাজা সঞ্জয় সিংহ কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন বলে। তার পরে হয় গাঁধী পরিবার, নয়তো সতীশ শর্মার মতো পরিবারের ঘনিষ্ঠদের হাতেই থেকেছে অমেঠী।

কিন্তু তাতে লাভ কী হয়েছে? বিজেপির অভিযোগ, অমেঠীতে রাহুল কোনও কাজ করেননি। উল্টে অভিযোগ তুলেছেন, মোদী সরকার তাঁর কাজে বাধা দিয়েছে। কিন্তু মনমোহন জমানায় তিনি কেন অমেঠীর উন্নয়ন করতে পারলেন না, স্মৃতি সেই প্রশ্ন খুঁচিয়ে তুলেছেন।

এর সঙ্গে ছিল দুর্বল সংগঠন। অমেঠীর সরগড়ার মোড়ে খোঁজ করেছিলাম, কংগ্রেস দফতরটা কোথায়? কেউ বলতে পারেননি। শেষে ঠিকানা মিললেও শুনতে হয়েছিল— ‘‘ওই দফতর অধিকাংশ সময়ে বন্ধই থাকে।’’ রাহুলের হয়ে প্রচারে গিয়ে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকেও শুনতে হয়েেছ, স্থানীয় নেতা-কর্মীরা উধাও। অমেঠীর নগর পঞ্চায়েত বরাবর এসপি নেতা রাজেশ অগ্রহারির দখলে থাকে। তাঁর স্ত্রী চন্দ্রমা দেবী নগর পঞ্চায়েতের সভানেত্রী। তাঁরাও এখন বিজেপিতে।

ফলে ২০১৪-তেও যা হয়নি, তা-ই হয়েছে। উড়ে গিয়েছে অমেঠীর দুর্গ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE