Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Congress

কংগ্রেসে সব পদে নির্বাচন চেয়ে এ বার তোপ গুলাম নবি আজাদের

গত অগস্টে গুলাম নবি-সহ কংগ্রেসের ২৩ জন ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা সনিয়া গাঁধীকে চিঠি লিখে কংগ্রেস নেতৃত্বে সক্রিয়তার দাবি তুলেছিলেন।

গুলাম নবি আজাদ

গুলাম নবি আজাদ

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২০ ০২:৫২
Share: Save:

এ বার আর সনিয়া গাঁধীকে চিঠি নয়। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা গুলাম নবি আজাদ সরাসরি দলের সংগঠনের সমস্ত পদে নির্বাচনের দাবিতে মুখ খুললেন। একে ‘বিদ্রোহ’ না বলে ‘সংস্কারের দাবি’ আখ্যা দিয়ে গুলামের যুক্তি, পাঁচ তারা হোটেলে বসে নির্বাচনের লড়াই আর চলবে না। এই সংস্কৃতি বদলাতে হবে।

গত অগস্টে গুলাম নবি-সহ কংগ্রেসের ২৩ জন ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা সনিয়া গাঁধীকে চিঠি লিখে কংগ্রেস নেতৃত্বে সক্রিয়তার দাবি তুলেছিলেন। সংগঠনের সব স্তরে নির্বাচনের দাবিও তোলেন তাঁরা। তাঁদের দাবি মেনে কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচনের আয়োজন শুরু হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি বা নিচু তলার সংগঠনে নির্বাচন হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আজ গুলাম সেই দাবি তুলে বলেছেন, ‘‘প্রতিটি স্তরে কাজের ধরন না পাল্টালে কংগ্রেসের হাল বদলাবে না। শীর্ষ নেতৃত্বকে পার্টির জন্য কর্মসূচি ঠিক করতে হবে। সমস্ত পদে নির্বাচন করাতে হবে।’’

বিহারের ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবির পরে আর এক বিক্ষুব্ধ নেতা কপিল সিব্বল কংগ্রেস নেতৃত্বের দিকে আঙুল তুলেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব দলের সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। এমন ভাব যেন সব ঠিকই রয়েছে। আজ গুলাম গাঁধী পরিবারকে দোষারোপ করতে চাননি। বলেছেন, তিনি গাঁধী পরিবারকে সরানোর দাবি তুলছেন না। কিন্তু শীর্ষপদে থাকলে গাঁধী পরিবারকে যে পরিশ্রম করতে হবে, তা কিন্তু মনে করিয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, পদাধিকারীদের দায়িত্ব বুঝতে হবে। সভাপতিকেও তাঁর দায়িত্ব বুঝতে হবে। গুলাম বলেন, “আমি কংগ্রেস সভানেত্রী বা রাহুল গাঁধীকে দোষ দিই না। কংগ্রেস নেতাদের মানুষের সঙ্গে সংযোগ ভেঙে পড়েছে। এটা বা গাঁধী বা অ-গাঁধীর কথা নয়। কথা হল, শীর্ষ নেতৃত্বকে পরিশ্রম করতে হবে। মাঝারি স্তরে, তৃণমূল স্তরের নেতাদেরও খাটতে হবে। গোটা ব্যবস্থা বদলাতে হবে।”

আরও পড়ুন: লকেট? রূপা? নাকি মুকুল? বঙ্গভোটের আগে মোদী মন্ত্রীসভায় নতুন বাঙালি কে!

গুলাম রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতাও। আশির দশকে তিনি মহারাষ্ট্রের নিরাপদ আসন থেকে লোকসভায় জিতে এসেছিলেন। তার পরে টানা পাঁচ বার রাজ্যসভার সাংসদ। এরই মধ্যে তিনি এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক, ক্যাবিনেট মন্ত্রী, জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে তাঁর রাজ্যসভার মেয়াদ শেষ হবে। ফের তাঁকে জিতিয়ে আনা হবে, এমন ইঙ্গিত নেই। কংগ্রেসের রাহুল-ঘনিষ্ঠদের প্রশ্ন, সে কারণেই কি গাঁধী পরিবারের পুরনো আস্থাভাজন গুলাম হঠাৎ সরব হয়ে উঠছেন?

আরও পড়ুন: টিকা প্রস্তুতি: মোদী-মমতা মুখোমুখি কাল, ক্ষোভ জানাতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী

রাহুল গাঁধীর আস্থাভাজনদের সঙ্গে কার্যত নিজের তুলনা টেনে গুলাম বলেছেন, “আমি রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পাঁচটা রাজ্য জিতেছি। কর্নাটক, কেরল, তামিলনাড়ু, তারপরে ২০০৩ ও ২০০৪-এ অন্ধ্র। দেড় বছর অন্ধ্রে ছিলাম। অন্ধ্র থেকে লোকসভায় কংগ্রেসের আসন পাঁচ থেকে বেড়ে ৩৭ হয়েছিল। তার সুবাদেই ইউপিএ সরকার গড়েছিল। দেড় বছরে ১৩০০ জনসভা করেছিলাম। আমাকে সনিয়া গাঁধী করতে বলেননি। দেড় বছরে তিন বার দিল্লি এসেছিলাম। ২-৩ রাতের বেশি থাকিনি। হায়দরাবাদেই দু’রাত কাটিয়েছি। বাকি সময় গ্রামে। গ্রামে থাকার সময় ভোর পাঁচটায় ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে ক্ষেতে শৌচ করতেও যেতে হয়েছে।’’

সেই পরিস্থিতির সঙ্গে এখনকার তুলনা করে গুলামের মন্তব্য, ‘‘এখন নেতারা রাজ্যের রাজধানীতে গিয়ে কোনটা ভাল পাঁচতারা হোটেল, সেটা খোঁজেন। গাড়িতে এসি না হলে চলে না। কাঁচা রাস্তা হলে যান না। এই সংস্কৃতি বদলাতে হবে।’’

২৩ জন বিক্ষুব্ধের দলে না থাকলেও, বিহার ও বিভিন্ন রাজ্যে উপনির্বাচনের ফলের পরে পি চিদম্বরমও মুখ খুলেছিলেন। তিনিও শীর্ষ নেতৃত্বকে আক্রমণ করেননি। বলেছিলেন, বিহার ও অন্যান্য রাজ্যের উপনির্বাচনে সংগঠনের দুর্বলতা প্রকট হয়ে উঠেছে। গুলামের যুক্তি, ‘‘এই জন্যই আমরা চিঠিতে বলেছিলাম, দলের পদে মনোনীত নেতাদের বসালে হবে না। প্রদেশ থেকে জেলা, ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচন করাতে হবে। তা হলে যাঁদের পার্টির প্রতি ভালবাসা রয়েছে, শুধুমাত্র তাঁরাই দায়িত্বে আসবেন।’’

গুলামের বক্তব্য, জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের বিকল্প কেউ হতে পারবে না। লোকসভায় কংগ্রেসের শক্তি এত কমে গিয়েছে যে বিরোধী দলনেতার মর্যাদাই মেলেনি। কিন্তু এর মধ্যেও লাদাখে পার্বত্য পরিষদের ভোটে কংগ্রেস আসন জিতেছে। লক্ষদ্বীপে জেলা পঞ্চায়েতে, আন্দামানের জেলা পরিষদেরও কংগ্রেস রয়েছে। কোনও আঞ্চলিক দলের এমন আসমুদ্রহিমাচল উপস্থিতি নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress Ghulam Nabi Azad Sonia Gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE