অভিন্ন দেওয়ানি বিধির এখনই প্রয়োজন নেই। তার বদলে পারিবারিক আইনে সংস্কার করে মহিলাদের প্রতি বৈষম্য দূর করা বেশি জরুরি বলে মত দিল আইন কমিশন।
নরেন্দ্র মোদী সরকার তথা বিজেপি বরাবরই এক-এক ধর্মের জন্য এক-এক রকম বৈবাহিক বা পারিবারিক আইনের বদলে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার পক্ষে। বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাককে বেআইনি ঘোষণার পরে মুসলিম পার্সোনাল আইনে সংস্কারের ডাক দেওয়া হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, হিন্দু আইন সংখ্যালঘুদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এই প্রেক্ষিতে পারিবারিক ও ব্যক্তি আইনের সংস্কার নিয়ে আলোচনা-পত্রে আজ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বি এস চৌহানের নেতৃত্বাধীন আইন কমিশন মত দিয়েছে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এখন জরুরি নয়, কাম্যও নয়। বরং সামাজিক বৈচিত্র রক্ষা করা জরুরি। অধিকাংশ দেশও সে পথে হাঁটছে। এ ক্ষেত্রে ফারাক থাকাটা বৈষম্য নয়, মজবুত গণতন্ত্রেরই নমুনা।
মহিলাদের প্রতি বৈষম্য দূর করতে কমিশনের মত, বিবাহবিচ্ছেদ হলে বিয়ের পরে আয় বা কেনা সম্পত্তিতে মহিলাদের সমান অধিকার থাকা উচিত। সে তিনি গৃহবধূ হলেও।
আলোচনার অবকাশ
• বিবাহবিচ্ছেদের আইন ও প্রক্রিয়ার সরলীকরণ
• উভয় পক্ষের সম্মতিতে বিবাহবিচ্ছেদে ৬ মাস অপেক্ষার সময় তুলে দেওয়া
• আর্থিক সমস্যার কথা বলে বিচ্ছেদের বিরোধিতা করতে পারেন স্ত্রী
• সন্তানের খরচ বহন নির্ভর করবে দু’পক্ষের আর্থিক সঙ্গতির উপর
• বিয়ের সম্মতির ক্ষেত্রে সব ধর্মে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ন্যূনতম বয়স একই
• বিয়ের পরে আয় ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার
• পরকীয়ায় অভিযোগে স্বামী ও স্ত্রী, উভয়েই বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে পারেন
• একতরফা বিবাহবিচ্ছেদকে ফৌজদারি অপরাধের তকমা
কমিশনের যুক্তি, পরিবারে মহিলাদের ভূমিকাকে মর্যাদা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তা তিনি সংসারে কত টাকা দিচ্ছেন, তার উপরে নির্ভর করছে না। মহিলারাই পরিবারের জন্য কেরিয়ারের সঙ্গে আপস করেন। সংসারে কাজের আর্থিক মূল্য কেউ বিচার করে না। সন্তানের জন্মের সময়ে কেরিয়ারে বাধা আসে। তাই স্ত্রী সংসারে টাকা দিন বা না-দিন, বিয়ের পরে আয় বা কেনা সম্পত্তির সমান ভাগ হওয়া উচিত। তবে কমিশনের মতে, কী ভাবে সম্পত্তি ভাগাভাগি হবে, তা আদালতই ঠিক করবে।
বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া আরও সরল করার পক্ষেও মত দিয়েছে কমিশন। তাদের যুক্তি, এতে দ্রুত বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য হিংসা বা পরকীয়ার মিথ্যে অভিযোগ তোলার প্রয়োজন পড়বে না।
এখানেই নতুন ভাবনা কমিশনের। তা হল, পারস্পরিক সম্মতিতে বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে কারও দিকে আঙুল না-তুলেই, লম্বা প্রক্রিয়া ও জটিলতা ছাড়াই বিয়ে থেকে বেরিয়ে আসার ব্যবস্থা হোক। ২০১০-এর বিবাহ আইন সংশোধনী বিলে বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে ৬ মাস অপেক্ষার সময়সীমা তুলে দেওয়ার যে প্রস্তাব ছিল, তা মনে করিয়ে দিয়েছে কমিশন।
বিয়ের সম্মতির ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর ন্যূনতম বয়সের ফারাকও তুলে দিয়ে দু’ক্ষেত্রেই ১৮ বছর করার পক্ষে মত দিয়েছে কমিশন। সব ধর্মের ক্ষেত্রেই তা করতে হলে অবশ্য মুসলিম পার্সোনাল আইনে বদল করতে হবে। কারণ সেখানে বয়ঃসন্ধির পরেই বিয়েতে সম্মতি দেওয়া যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy