Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বাংলার আলু নিয়ে ব্রডগেজে শিলচর পৌঁছল মালগাড়ি

মালগাড়ির বিয়াল্লিশটি বগি ঢিমে তালে চলতে শুরু করতেই ভারতীয় রেলের ইতিবাসে আরও একটি পাতা লেখা হয়ে গেল। কারণ এটিই প্রথম ব্রডগেজ লাইন ধরে শিলচরে মাল পরিবহণের কাজ শুরু করল। এবং এই ইতিহাসে বরাকের বাঙালিদের সঙ্গে জুড়ে গেল পশ্চিমবঙ্গের নামটিও। কারণ এই প্রথম মালগাড়ির ৪২টি ও।াগান বোঝাই হয়ে যে শিলচরে গেল পশ্চিমবঙ্গের আলু।

ব্রডগেজ লাইনে প্রথম পণ্য পরিবহণ। শিলচরমুখী মালগাড়িটি লামডিং স্টেশনে। শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র।

ব্রডগেজ লাইনে প্রথম পণ্য পরিবহণ। শিলচরমুখী মালগাড়িটি লামডিং স্টেশনে। শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত ও বিপ্লব দেব
গুয়াহাটি ও হাফলং শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩২
Share: Save:

মালগাড়ির বিয়াল্লিশটি বগি ঢিমে তালে চলতে শুরু করতেই ভারতীয় রেলের ইতিবাসে আরও একটি পাতা লেখা হয়ে গেল। কারণ এটিই প্রথম ব্রডগেজ লাইন ধরে শিলচরে মাল পরিবহণের কাজ শুরু করল। এবং এই ইতিহাসে বরাকের বাঙালিদের সঙ্গে জুড়ে গেল পশ্চিমবঙ্গের নামটিও। কারণ এই প্রথম মালগাড়ির ৪২টি ও।াগান বোঝাই হয়ে যে শিলচরে গেল পশ্চিমবঙ্গের আলু।

দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সবুজ পতাকা নেড়ে এই মালগাড়ি যাত্রার সূচনা করলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। শীঘ্রই এই পথে যাত্রীবাহী রেল চলাচল শুরু হবে বলে রেলকর্তারা জানান। ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যাকার মধ্যেই কেবল নয়, এই নতুন রেলপথ ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মণিপুরের সঙ্গেও পণ্য ও যাত্রী পরিবহণকে সুগম করতে চলেছে। অনুষ্ঠান উপলক্ষে আজ লামডিং স্টেশনে হাজির ছিলেন নগাঁওয়ের সাংসদ রাজেন গোহাঁই, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জিএম (নির্মাণ) আর কে সিংহ, জিএম (ওপেন লাইন) আর এস বির্দি এবং সংস্থার সিইও অজিত পণ্ডিত। বেলা ১টা নাগাদ লামডিং থেকে মালগাড়িটি যাত্রা শুরু করে। মালগাড়িতে রয়েছে মোট ২৩০০ টন আলু।

১৯০৪ সালে লামডিং-বদরপুর-শিলচর পথে মিটার গেজ ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া ও রেলমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান এই পথে ব্রডগেজ রেললাইন পাতার প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন। ২০০৬ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ডিএইচডি বাহিনীর নাশকতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সংশ্লিষ্ট এলাকার দুর্গমতার কারণে ক্রমেই প্রকল্পের কাজ পিছোতে থাকে। রেলপথ তৈরির সময় জঙ্গি হামলায় অন্তত ৭০ জন শ্রমিক-কর্মচারী প্রাণ হারিয়েছেন। প্রথমে যে প্রকল্পের খরচ ধার্য্য হয়েছিল ৬৪৮ কোটি টাকা, ক্রমে সেই খরচ গিয়ে দাঁড়ায় ৫১৮৫ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকায়। ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এই প্রকল্পকে ‘জাতীয় প্রকল্প’ হিসেবে ঘোষণা করেন। রেলমন্ত্রী এই লাইনের কাজ শেষ হওয়ার জন্য ৩১ মার্চের সময় সীমা বেঁধে দেওয়ার পরে ৩০০০ কর্মীকে কাজে লাগানো হয়। গত অক্টোবর থেকে এই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে শুরু হয় ‘মেগাব্লক’। দিনরাত কাজ চালিয়ে অসম্পূর্ণ এবং সবচেয়ে সমস্যা-সঙ্কুল ৭, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর রেল সুড়ঙ্গের কাজ শেষ করা হয়। ২৩৬ কিলোমিটার এই রেলপথে ২১টি রেল সুড়ঙ্গ, ৭৯টি বড় সেতু, ৩৪০টি ছোট সেতু, ২৮টি স্টেশন ও ৪টি হল্ট পড়বে। যাত্রাপথে সর্বাধিক গতিবেগ থাকবে ৭০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। সবচেয়ে উঁচু সেতুর উচ্চতা ৫৪ মিটার। ১০ নম্বর সুড়ঙ্গাটি সবচেয়ে দীর্ঘ--৩.২ কিলোমিটার।

বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করায় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আজকের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গোটা উত্তর-পূর্বের অর্থনৈতিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে।” শিলচর-লামডিং পথে ১৩ মার্চ প্রথম ব্রডগেজ ইঞ্জিন চলে। পরে ১৫ মার্চ গুয়াহাটি থেকে শিলচর যায় নয় বগির একটি বিশেষ ট্রেন। রেলের কর্তারা ওই ট্রেনেই ১৬ মার্চ শিলচর থেকে গুয়াহাটি ফেরেন। ১৮ মার্চ পাথর নিয়ে ৫৮টি ওয়াগনের একটি মালগাড়ি পরীক্ষামূলক

ভাবে বদরপুর যায়। ১৯ থেকে ২১ মার্চ, রেলওয়ে নিরাপত্তা কমিশনার সুদর্শন নায়ক যাত্রাপথের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করেন। তবে রেলকর্তাদের এখনও আশঙ্কা, বর্ষার দুর্যোগের সময় এই পথের কয়েকটি অংশে রেল চলাচলে সমস্যা হতে গুয়াহাটি-শিলচর রেলপথের কাজ শেষ হওয়ার পরে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল পরবর্তী পর্যায়ে বদরপুর থেকে কুমারঘাট অবধি ১১৮ কিলোমিটার, অরুণাচল ও জিরিবামে ৫০ কিলোমিটার, বড়াইগ্রাম থেকে দুর্লভচেরা অবধি ২৯ কিলোমিটার, করিমগঞ্জ থেকে মহিসানা অবধি সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রেলপথ ব্রডগেজ করার কাজে হাত লাগাচ্ছে। এই পর্যায়ের কাজ শেষ করার জন্য ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ সময়সীমা ঘোষণা করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE