প্রতি বছরই দশম-দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর টিভিতে, খবরের কাগজে, নিউজ ওয়েবসাইটে ভেসে ওঠে কিছু উজ্জ্বল হাসিমুখ। সাফল্যের আনন্দে উচ্ছ্বল সেই পড়ুয়াদের অধিকাংশই স্বপ্ন দেখেন, ভবিষ্যত ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কেউ কেউ স্বপ্ন দেখেন, বিদেশে গিয়ে গবেষণা করবেন। ভাল ফলের সঙ্গেই জুড়ে যায় ভবিষ্যত জীবনের সফলতার স্বপ্ন।
এর মধ্যেই ব্যতিক্রম, গুজরাতের বর্ষিল শাহ। দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষায় ৯৯.৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। কিন্তু, অর্থ উপার্জনের উচ্চাশা বা নিশ্চিত সাফল্যের স্বপ্ন দেখেন না ১৭ বছরের এই পড়ুয়া। গুজরাত টপার হয়েও জৈন সন্ন্যাসী হয়ে শান্তি খোঁজাকেই জীবনের লক্ষ্য করে ফেলেছেন তিনি। মেধাতালিকার শীর্ষতম স্থানে থেকেও তাই উদ্যাপনের কথা ভাবেননি বর্ষিল। এমনকী, স্কুলে মার্কশিট পর্যন্ত আনতে যাননি। গুরুর পথ অনুসরণ করে এখন তাঁর জীবনের একটাই লক্ষ্য, সন্ন্যাস গ্রহণ। আমদাবাদের বাসিন্দা বর্ষিল আগামিকাল শুক্রবার দীক্ষা নেবেন বলে জানা গিয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই ধার্মিক। পরিবার সূত্রে খবর, মাত্র ৪ বছর বয়স থেকেই সন্ন্যাসী হওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। পরে সেই ইচ্ছা সিদ্ধান্তে বদল হয়। ছেলের বেছে নেওয়া আধ্যাত্মিকতার পথে পূর্ণ সমর্থন ছিল জৈন ধর্মে দীক্ষিত বাবা, মায়ের। জৈন সন্ন্যাসীদের সাহায্য না পেলে বর্ষিল এই সাফল্য পেত না বলে তাঁদের মত। তাঁর বাবা জিগরভাই শাহ আয়কর দফতরের আধিকারিক। তাঁর কতায়, ‘‘মনের শান্তির জন্য বর্ষিলের এই সিদ্ধান্ত।’’ মা আমিবেন শাহ ছাড়াও বর্ষিলের পরিবারে রয়েছেন তাঁর বড় দিদি জৈনিনি।
তবে, দেশের মধ্যে বর্ষিলের উদাহরণ বিরল হলেও প্রথম কিন্তু নয়! এই বঙ্গভূমিতেই রয়েছেন তাঁর অনেক পথিকৃত্। যেমন, গণিতজ্ঞ মহান মহারাজ। কানপুর আইআইটি থেকে গণিতে স্নাতকোত্তর করার পর তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন। কিন্তু, উচ্চ আয়, বিলাস-ব্যসনের সেই জীবন ছেড়ে তিনি যোগ দেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে। সম্প্রতি গেরুয়া বসনধারী এই গণিতের শিক্ষক বিশ্বের অন্যতম সেরা গণিতজ্ঞ হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অব ম্যাথমেটিশিয়ানসে। পেয়েছেন গণিতের নোবেল ফিল্ডস মেডেল।
আরও পড়ুন: সন্ন্যাসী গণিতজ্ঞ
একা মহান মহারাজ নন। রামকৃষ্ণ মিশনে এমন অনেক সন্ন্যাসীই আছেন, যাঁরা এক কালের কৃতী ছাত্র। সেখানে বোর্ড পরীক্ষায় টপাররা তো রয়েইছেন, রয়েছেন ইসরো ও নাসার বিজ্ঞানী এবং আইআইটি টপাররাও। মহান মহারাজের মতো মোহন মহারাজ, স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দ, স্বামী ত্যাগরূপানন্দ, স্বামী দিব্যশুদ্ধানন্দের মতো অনেক সন্ন্যাসীর নামই এই তালিকায় রাখা যেতে পারে। মিশন সূত্রে খবর, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে সন্ন্যাসী হিসাবে যোগ দিতে গেলে ন্যূনতম ১৮ বছর বয়স হতে হয়। তবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা মিশনে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy