Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হিন্দুত্ব আর দ্বন্দ্বেই অঙ্ক নষ্ট রাহুলের

দলিত, পাতিদার, অনগ্রসর শ্রেণি, মুসলিমদের একই বন্ধনীতে এনে রাহুল গাঁধীর অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি সামাজিক মঞ্চ নিঃসন্দেহে ভিত কাঁপিয়েছে বিজেপি-র। কিন্তু এই মঞ্চ যতটা সফল হলে গুজরাতে পরিবর্তন আসতে পারত ততটা সফল হয়নি।

রাহুল গাঁধী। ছবি: সংগৃহীত।

রাহুল গাঁধী। ছবি: সংগৃহীত।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:২১
Share: Save:

গুজরাত ভোটের মাসখানেক আগে হীরকরাজ্য সুরাত থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে আদিবাসী গ্রাম দেরোদে গিয়ে প্রথম দেখেছিলাম ক্ষোভের চিত্র। তার কয়েক সপ্তাহ পরে উত্তর এবং দক্ষিণ গুজরাতের বিভিন্ন গ্রামে গিয়েও সেই ক্ষোভেরই প্রতিফলন দেখেছি।

পাতিদারদের সঙ্গে আদিবাসীদের বিরোধ রয়েছে। দলিতের সঙ্গে পাতিদারের গোলমাল আছে। মুসলিমদের সঙ্গে অনগ্রসর শ্রেণির সদ্ভাব নেই। কোথাও সম্পন্ন পাতিদাররা আদিবাসী পুরুষদের দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে দিন প্রতি ১০০ টাকার (যা নাকি রাজ্য সরকারের নির্ধারিত ক্ষেতমজুরির থেকে ১২৩ টাকা কম) নিজেদের জমিতে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। এক বেলার খাবারও যেখানে দেওয়া হয় না। আবার অন্য কোনও গ্রামে গিয়ে দেখেছি বাসস্থানের বৈষম্য। দলিতরা রয়েছেন কাঁচা বাড়িতে, পিছনেই চওড়া দালানের বড় বাড়ি পাতিদারদের।

দলিত, পাতিদার, অনগ্রসর শ্রেণি, মুসলিমদের একই বন্ধনীতে এনে রাহুল গাঁধীর অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি সামাজিক মঞ্চ নিঃসন্দেহে ভিত কাঁপিয়েছে বিজেপি-র। কিন্তু এই মঞ্চ যতটা সফল হলে গুজরাতে পরিবর্তন আসতে পারত ততটা সফল হয়নি। রাজনীতিকদের মতে, তার পিছনে রয়েছে এই সম্প্রদায়গুলির পারস্পরিক চোরা সংঘাত। পাশাপাশি অনেকেই ভয়ে অথবা হিন্দুত্বের টানে ভোট দিয়েছেন বিজেপি-কেই। আজ ফলের দিন ঘরোয়া ভাবে এ কথা স্বীকার করছেন কংগ্রেস নেতৃত্বও।

কিন্তু মেলানোর জন্য রাহুলের পাশাপাশি সক্রিয় ছিলেন জিগ্নেশ মেবাণী, অল্পেশ ঠাকোরেরাও। গুজরাত সফরের সময়ে নানা সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়েছিল জিগ্নেশকে। সেই দ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করে সেদিন এই দলিত নেতা বলেছিলেন, ‘‘অবশ্যই দলিত নির্যাতনের পিছনে পটেলদের বড় ভূমিকা রয়েছে। এই শ্রেণিগুলির মধ্যে পারস্পরিক সংঘাতের ইতিহাসও রয়েছে। কিন্তু এখন সবাই একজোট হয়ে সাধারণ শক্র বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়ছি। এটা নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ের সময় নয়।’’

বাস্তবে দেখা গেল, একজোট হয়ে লড়াইয়ে সাফল্য এসেছি ঠিকই। কিন্তু ভিতরকার এই ক্ষতটি রয়েই গিয়েছে। যে কারণে রাহুলের নেতৃত্বাধীন এই সামাজিক জোট পুরোপুরি কাজ করল না। সুরাতে গত চার দশক ধরে আদিবাসী, সংখ্যালঘু, মহিলাদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন উত্তম পারমার। তাঁর কথায়, ‘‘সামাজিক ন্যায়ের জন্য আন্দোলন শেষ পর্যন্ত পৃথক পৃথক জাতপাতের আধারে বেশি দূর পর্যন্ত চালানো মুশকিল। আগে জাত থেকে মুক্ত হয়ে হিন্দুত্বের টোপ থেকে বেরোনো প্রয়োজন। যদিও তা খুবই কঠিন কাজ।’’ যে অনগ্রসর শ্রেণিকে পাশে নিয়ে এগিয়েছিলেন রাহুল তাদের পুরো ভোট তিনি পাননি বলেই প্রাথমিক বিশ্লেষণে মনে করছে ক‌ংগ্রেস। গুজরাতের রাজনীতিকদের মতে, এই অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে যাঁরা মধ্যবিত্ত, তাঁদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মানসিকতা ঢের বেশি। তাঁরা সরকারের তাঁবেদারি করে আরও উঁচুতেও উঠতে চান। এই অংশটিকে ভোটের বাক্সে পাশে পাননি রাহুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE