Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বিরোধী শক্তির শপথ

আশপাশের জলের ট্যাঙ্ক, গাছের মগডাল, পাঁচিলের উপরেও লোকারণ্য। ভিড়ের চাপে হাঁসফাঁস করতে করতেই এক জেডিএস নেতার সরস মন্তব্য, ‘এ যেন বিরোধী নেতাদের কুম্ভমেলা!’

ফাইল চিত্র। পিটিআই।

ফাইল চিত্র। পিটিআই।

অগ্নি রায়
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৮ ০৪:০৭
Share: Save:

ব্রিটিশদের তৈরি কর্নাটক হাইকোর্টকে টেক্কা দিতে বেঙ্গালুরুতে মহীশূর ঘরানায় প্রাসাদোপম বিধানসৌধ বানানো হয়েছিল স্বাধীনতার পর।

আজ সেই সৌধের রাজকীয় সিঁড়ির চাতালে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিরোধী শক্তির মেগা সম্মেলন। উপলক্ষ, মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী এবং উপমুখ্যমন্ত্রী জি পরমেশ্বরের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। বৃষ্টির দাপটকে অগ্রাহ্য করেই বিধানসভাকে ঘিরে পথে নামলেন কাতারে কাতারে নেতা সমর্থক, এমনকি সাধারণ মানুষও। আশপাশের জলের ট্যাঙ্ক, গাছের মগডাল, পাঁচিলের উপরেও লোকারণ্য। ভিড়ের চাপে হাঁসফাঁস করতে করতেই এক জেডিএস নেতার সরস মন্তব্য, ‘এ যেন বিরোধী নেতাদের কুম্ভমেলা!’

অনুষ্ঠান সাকুল্যে দশ মিনিটের। কিন্তু তার মধ্যেই তৈরি হল অজস্র রাজনৈতিক খণ্ডদৃশ্য, যা বিজেপির উদ্বেগ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। বিভিন্ন রাজ্যের আঞ্চলিক দলের নেতারা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরছেন, পাশে বসে গল্প করছেন, হাত মিলিয়ে ছবি তুলছেন, সৌজন্য বিনিময় করছেন অবাধে— এমনটা কর্নাটক কেন, ভূ-ভারতে কেউই প্রায় দেখেননি। পরে টুইট করে রাহুল গাঁধী যার সারসংক্ষেপ করেছেন, “শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে গোটা দেশের বিরোধী নেতাদের সঙ্গে দেখা হওয়া, এক মঞ্চে থাকা আনন্দের ব্যাপার।” বস্তুত, রাহুল গাঁধীর সঙ্গে এক মঞ্চে এত জন বিরোধী নেতার উপস্থিতি ২০১৪ সালের পরে এই প্রথম।

আজ বিকেলে মঞ্চে মায়াবতী প্রবেশ করতেই উঠে দাঁড়ান অখিলেশ সিংহ যাদব! তার পর ‘বুয়া-ভাতিজা’ পাশাপাশি বসে মেতে যান দীর্ঘ আড্ডায়। মায়াবতীর অন্য পাশে আরএলডি নেতা অজিত সিংহ। কথা বললেন তাঁরাও। প্রেস গ্যালারিতে তখন জল্পনা, উত্তরপ্রদেশের আসন্ন উপনির্বাচনের (যেখানে আরএলডি, বিএসপি, এসপি জোট গড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছে) রণকৌশলই কি ঝালিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা! অনুষ্ঠান শেষে মায়াবতী এসে জড়িয়ে ধরলেন সনিয়াকে। একটু পরেই সেখানে এলেন রাহুল। তিন জনের আলাপ চলল বেশ কিছু ক্ষণ। অখিলেশের সঙ্গে করমর্দন করে কথা বললেন রাহুল। সীতারাম ইয়েচুরি একটু দেরি করে এলেও ঘুরে ঘুরে সকলের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করলেন। নমস্কার করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। শপথ শেষে শরদ পওয়ার, মায়াবতী, অজিত সিংহ, সনিয়া, রাহুল, সীতারাম, কুমারস্বামী, ডি রাজা, লালুপ্রসাদের ছেলে তেজস্বীকে পাশাপাশি হাত ধরে ছবি তুলতেও দেখা গেল।

মঞ্চের একপ্রান্তে বসেছিলেন সনিয়া, রাহুল, অখিলেশ, মায়াবতীরা। অন্য প্রান্তে মমতা, চন্দ্রবাবু নায়ডু, শরদ যাদব, পিনারাই বিজয়ন, অরবিন্দ কেজরীবালেরা। পরে তেজস্বী এসে মমতার হাঁটু ছুঁয়ে প্রণাম করলেন। তাঁদের দীর্ঘ আলোচনায় যোগ দিলেন অখিলেশ, চন্দ্রবাবু।

শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষ হতেই মেঘ কেটে রোদ্দুর উঠল বেঙ্গালুরুর আকাশে। তিলার্ধ বিলম্ব না করে জ্বলল আতসবাজি। সব মিলিয়ে আগামী বছর লোকসভা ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ল এই কর্নাটক থেকে— এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE