Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ছন্দে ফিরছে হরিয়ানা, জল ফিরল দিল্লিতেও

তিন দিনের তাণ্ডব শেষে ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছে হরিয়ানা। তবে নতুন ভাবে অশান্তি মাথাচাড়া দিয়েছে রাজ্যের কিছু শহরে। হিংসায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে। সরকারি চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তাদের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির তালিকাভুক্ত করতে হবে, এই দাবিতে গত শুক্রবার থেকে হিংসাত্মক চেহারা নিয়েছিল জাঠেদের আন্দোলন।

জাঠদের বিক্ষোভের আগুনে পুড়েছে গাড়ি। ছবি:  পিটিআই।

জাঠদের বিক্ষোভের আগুনে পুড়েছে গাড়ি। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
চণ্ডীগড় শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৫
Share: Save:

তিন দিনের তাণ্ডব শেষে ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছে হরিয়ানা। তবে নতুন ভাবে অশান্তি মাথাচাড়া দিয়েছে রাজ্যের কিছু শহরে। হিংসায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে।

সরকারি চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তাদের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির তালিকাভুক্ত করতে হবে, এই দাবিতে গত শুক্রবার থেকে হিংসাত্মক চেহারা নিয়েছিল জাঠেদের আন্দোলন। তাদের অসন্তোষের কারণ খতিয়ে দেখতে শেষে গত কাল রাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এক কমিটি গড়ে কেন্দ্রীয় সরকার। এর পরে আজ পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হয়েছে রাজ্যের বহু জায়গায়। পাশাপাশি, এ দিন ভোরে প্রতিবাদীদের সরিয়ে মুনাক খালের দখল নিয়েছে সেনা ও আধাসেনা। ওই খাল থেকেই দিল্লির জল সরবরাহ হয়। ফলে এই পদক্ষেপে রাজধানীতে জল সরবরাহের সমস্যারও সুরাহা হয়েছে কিছুটা। তবে এ নিয়ে তড়িঘড়ি সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ায় আজ সেখানে মুখ পুড়েছে দিল্লির আপ সরকারের।

প্রাণহানি, অবরোধ, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, বিশৃঙ্খলা, কার্ফু, সেনার টহল— গত তিন দিন ধরে এটাই ছিল হরিয়ানার ছবি। আজ নতুন করে অশান্তি মাথাচাড়া না দেওয়ায় বেশ কয়েকটি শহর থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে কার্ফু। কৈথাল ও কালাইয়ত শহরে গত কাল রাতেই কার্ফু শিথিল করা হয়েছিল। হিসার ও হাঁসি থেকেও প্রাথমিক ভাবে তোলা হয় কার্ফু। তবে দিনের শেষে ফের গণ্ডগোলের খবর এসেছে কৈথাল ও হিসার থেকে। হিসারের ডেপুটি কমিশনার জানিয়েছেন, সেখানে আজ জাঠেদের সঙ্গে অন্য সম্প্রদায়ের সংঘর্ষ বাধে। এর জেরে রাতের দিকে হিসারের পাঁচটি গ্রামে ফের জারি হয়েছে কার্ফু। একই সঙ্গে দেখা মাত্র গুলি চালানোর বিক্ষোভকারীদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এত দিন জাঠ বিদ্রোহের কেন্দ্র ছিল হরিয়ানার রোহতক। গত কাল থেকে পরিস্থিতি শান্ত সেখানে। তবে সতর্কতা হিসেবেই রোতহক থেকে এখনও কার্ফু তুলে নেওয়া হয়নি।

ফের অশান্তি তৈরি হয়েছে সোনীপতেও। আজ লাডসোলি গ্রামের কাছে দিল্লি-অম্বালা জাতীয় সড়কে অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশকে নিশানা করে ঢিল ছোড়ে উত্তেজিত জনতা। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তাদের গাড়িও। পুলিশের সঙ্গে এই খণ্ডযুদ্ধে আজ মৃত্যু হয়েছে তিন আন্দোলনকারীর। ফরিদাবাদেও আজ সেক্টর ৫৯ এর কাছে জাতীয় সড়কে অবরোধ তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় আটক করা হয়েছে পাঁচ জনকে। হরিয়ানার আন্দোলন আজ অশান্তি ছড়িয়েছে পূর্ব রাজস্থানে। ধরমুই তেল ডিপোর কাছে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় প্রতিবাদীরা। দিগ, জয়পুর, মথুরার প্রধান প্রধান রাস্তায় চলছে অবরোধ। অবরুদ্ধ জয়পুর–মুম্বই রেলপথও।

সড়ক ও রেল যোগাযোগের দশা এখনও বেহাল। রোহতক, হিসার, ভিওয়ানির প্রধান প্রধান রাস্তায় চলছে অবরোধ। হিসার থেকে দিল্লি, চণ্ডীগড়, সিরসা, সিওয়ানি, ভিওয়ানির মধ্যে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। বিপর্যস্ত দিল্লি-অম্বালার মধ্যে মূল সড়কও। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পরিষেবা স্বাভাবিক করতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে তাঁদের। বহু জায়গায় ক্ষতি হয়েছে রেললাইনের। ফলে আজ এবং আগামী কালও বেশ কয়েকটি ট্রেন বাতিল থাকছে। তবে এই আন্দোলনের জেরে যে সব ট্রেন বাতিল হয়েছে, তার যাত্রীদের টিকিট ভাড়া পুরোটাই ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে চণ্ডীগড়, অম্বালার মতো কয়েকটি স্টেশনে আটকে পড়া যাত্রীদের ভিড় কমাতে বিশেষ ট্রেন চালানোরও পরিকল্পনা করছেন তাঁরা।

তবে হরিয়ানা ও দিল্লির সরকারকে আজ সব চেয়ে স্বস্তি দিয়েছে মুনাক খালের ঘটনা। সেখানকার জল পরিশোধন কেন্দ্র কয়েক দিন ধরে দখল করে রেখেছিল বিক্ষোভকারীরা। আজ ভোর চারটে নাগাদ সেখানে পৌঁছয় সেনা ও আধাসেনা। সরিয়ে দেওয়া হয় আন্দোলনকারীদের। জল সরবরাহের লাইন সারানোর কাজ শুরু করেছেন ইঞ্জিনিয়াররা। ফলে দিল্লির জল সঙ্কটের মোকাবিলা করা গিয়েছে অনেকটাই। এ নিয়ে আজ টুইটারে কেন্দ্র ও হরিয়ানার বিজেপি সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল।

তবে তাঁর সকালের এই আনন্দ ফিকে হয়ে গিয়েছে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই। কারণ এ দিন সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে পড়েছে আপ সরকার। মুনাক নিয়ে পদক্ষেপ করুক শীর্ষ আদালত, এই আর্জি জানিয়ে শনিবার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল কেজরীবালের সরকার। আজ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের বেঞ্চ তাঁদের তিরস্কার করে বলেন, ‘‘মন্ত্রীদের কি সব কিছু মুখের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যে সমস্যা সরকারি স্তরে মিটিয়ে নেওয়া যায়, তা খামোখা আদালতে টেনে আনা হচ্ছে। মন্ত্রী ঘটনাস্থলে না গিয়ে আদালতে বসে থাকছেন।’’ শুনানি শেষে অবশ্য আইনজীবীদের অনুরোধে জল সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে হরিয়ানা ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে স্টেটাস রিপোর্ট চেয়েছেন বিচারপতিরা।

তবে পরিস্থিতির খানিক উন্নতির মাঝেই নতুন করে অশান্তি ছড়িয়েছে ৯০ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে। তাতে রয়েছে হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ভিরেন্দ্র ও এক খাপ নেতার কথোপকথন। বিজেপির অভিযোগ, তিনি অশান্তি তৈরি করতে উস্কানি দিচ্ছিলেন। আজ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে খট্টর প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

national news haryana delhi water crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE