Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ, জাঠ বিদ্রোহে জ্বলছে হরিয়ানা

উত্তাল জাঠ বিক্ষোভে রাজ্য প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের প্রায় বাইরে হরিয়ানা। রোহতক ছাড়িয়ে একের পর এক জেলায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে থাকা বিক্ষোভ রুখতে আধাসামরিক বাহিনী নামানো হল হরিয়ানাতে।

ক্রমশ ছড়াচ্ছে জাঠ বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই।

ক্রমশ ছড়াচ্ছে জাঠ বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১২:০৭
Share: Save:

উত্তাল জাঠ বিক্ষোভে রাজ্য প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের প্রায় বাইরে হরিয়ানা। রোহতক ছাড়িয়ে একের পর এক জেলায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে থাকা বিক্ষোভ রুখতে আধাসামরিক বাহিনী নামানো হল হরিয়ানাতে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের এতই বাইরে যে সড়ক পথে রোহতকে ঢুকতেই পারল না সেনা। হেলিকপ্টার নিয়ে রোহতক পুলিশ লাইনের হেলিপ্যাডে নামতে হল জওয়ানদের। উত্তাল ঝিন্দও। শনিবার সকালে বিক্ষোভকারীরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে ঝিন্দের রেলওয়ে স্টেশনে। ফলে কারফিউ জারি করতে হয়েছে সেখানেও। অধিকাংশ জাতীয় সড়ক এবং রাজ্য সড়কে অবরোধ চলতে থাকায় পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীরা রাস্তা কেটে দেওয়ায় বন্ধ হয়েছে গিয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহও। হরিয়ানার সরকার জানিয়েছে, কোনও নির্দিষ্ট নেতা নেই জাঠ আন্দোলনকারীদের। তাই তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা মুশকিল হচ্ছে।

আরও পড়ুন:

রাষ্ট্রপতির শাসন শেষ, অরুণাচলে নয়া সরকার

চাকরি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে সংরক্ষণের দাবিতে গত এক সপ্তাহ ধরে পথে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেছে জাঠ সম্প্রদায়। বৃহস্পতিবার থেকে সেই বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে শুরু করেছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় আগ্নেয়গিরির রূপ নিয়েছে হরিয়ানা:

• রোহতকে একটি কমিউনিটি হল এবং একটি পেট্রল পাম্প জ্বালিয়ে দিল বিক্ষোভকারীরা। হামলা একটি গার্লস হস্টেলে। সেনাবাহিনীর ১৩টি কলাম এবং আধাসেনার ১০টি কোম্পানিকে নামানো হল বিক্ষোভ মোকাবিলায়। বিক্ষোভকারীদের দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ দিল প্রশাসন।

• হরিয়ানা সরকার ঘুরিয়ে জানিয়ে দিল, জাঠ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আপাতত সরকার কোনও আলোচনায় বসবে না। রাজ্য পুলিশের ডিজিপি সাংবাদিক সম্মেলন করে বললেন, জাঠ বিক্ষোভের কোনও নির্দিষ্ট নেতা নেই। তাই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা সম্ভব নয়।

• হরিয়ানার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে জরুরি বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

• বিক্ষোভে সবচেয়ে উত্তাল রোহতক। শহরে ঢোকার সব রাস্তা কেটে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। সড়ক পথে ঢুকতে পারল না আধাসামরিক বাহিনী। হেলিকপ্টার নিয়ে শহরের পুলিশ লাইনে নামতে হল বাহিনীকে।

• শুক্রবারই কারফিউ জারি করতে হয়েছিল রোহতক এবং ভিওয়ানিতে। এই দুই অঞ্চল ছাড়াও ঝিন্দ, ঝঝ্ঝর, কারনাল, কৈথল, সোনেপত, হিসার বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। সেনা নামানো হয়েছে সর্বত্র।

• ভিওয়ানিতে শনিবার সকালে ফ্ল্যাগ মার্চ করেছে সেনাবাহিনী। প্রশাসন সাধারণ মানুষকে ঘর থেকে বেরোতে বারণ করেছে। পরিস্থিতি ভিওয়ানি নিয়ন্ত্রণে আসছে বলে জানা গিয়েছে।

• জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে হরিয়ানার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন চার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি এবং মনোহর পর্রীকর।

• রাজনাথ সিংহ ফোনে কথা বলেছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের সঙ্গে। আধাসামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত ৩৩০০ কর্মীকে হরিয়ানা পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজনাথ। হরিয়ানা সরকারকে সব রকমের সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

• রোহতকে শুক্রবার শ’য়ে শ’য়ে জাঠ বিক্ষোভকারী ঢুকে পড়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অভিমন্যুর বাড়িতে। সেখানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। মন্ত্রী নিজে চণ্ডীগড়ে ছিলেন। তাঁর পরিবার রোহতকে ছিল। মন্ত্রীর বাসভবন আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর পরিবারকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ।

• বিক্ষোভকারীরা রোহতকে একটি মল অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অভিমন্যুর মালিকানাধীন একটি স্কুল, বেশ কিছু দোকানপাট এবং টোল প্লাজায় আগুন লাগিয়ে দেয়। বিভিন্ন রাস্তায় এবং রেলপথে অবরোধ শুরু হয়। ফলে সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ব্যহত হয় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ।

• বিক্ষোভকারীদের উপর আধাসামরিক বাহিনী গুলি চালানোয় শুক্রবার হরিয়ানায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যের পুলিশ প্রধান ওয়াই পি সিঙ্ঘল বলেছেন, ‘‘বিক্ষোভকারীরা বিএসএফ জওয়ানদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে বিএসএফ পাল্টা গুলি চালায়। তাতে ঘটনাস্থলে এক জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের।’’

• রোহতকে বৃহস্পতিবার মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। তাতেও হিংসা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। শনিবার হরিয়ানার অন্তত ৮টি জেলায় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকছে।

•সংরক্ষণের দাবি নিয়ে আলোচনা করতে জাঠ নেতাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবারই বৈঠকে বসেছিলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে সর্বদল বৈঠকও করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু জাঠ আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, সংরক্ষণের দাবি মেনে নিয়ে হরিয়ানা বিধানসভায় বিল পাস না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE