Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Hathras Gangrape

ধর্ষণই হয়নি হাথরসে, বলছে পুলিশ

মৃত্যুর প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পরে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ জানাল, ধর্ষণ করা হয়নি হাথরসের নির্যাতিতাকে!

পুলিশ তড়িঘড়ি দাহ করে দিয়েছিল কি প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে?

পুলিশ তড়িঘড়ি দাহ করে দিয়েছিল কি প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে?

সংবাদ সংস্থা
লখনউ শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২০ ০৩:৫৮
Share: Save:

কেটে ফেলা হয়েছিল জিভ, মেরে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল শিরদাঁড়া। পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত মেয়েটি জবানবন্দিতে পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তাঁর উপরে যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পরে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ জানাল, ধর্ষণ করা হয়নি হাথরসের নির্যাতিতাকে! ডাক্তারি পরীক্ষা ও ফরেন্সিক রিপোর্টে গণধর্ষণ তো নয়ই, ধর্ষণের প্রমাণও মেলেনি!

তা হলে কিসের ভিত্তিতে রাম, লবকুশ, রবি এবং সন্দীপ ঠাকুর নামে উচ্চবর্ণের চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার মেয়েটির মৃত্যুর পরে তাঁর দেহ পরিবারের হাতে তুলে না-দিয়ে, পুলিশ তড়িঘড়ি দাহ করে দিয়েছিল কি প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে? সেই প্রশ্নও উঠছে। আর সেই সঙ্গেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিয়ো। যেখানে স্বয়ং হাথরসের জেলাশাসককে দেখা গিয়েছে মেয়েটির বাড়ির লোকজনকে হুমকি দিতে।

প্রথমে আলিগড়ের জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছিল নির্যাতিতাকে। মেয়েটির দেহ পোড়ানো নিয়ে যখন সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে গত কাল তুমুল হইচই চলছে, আলিগড়ের এক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক ডাক্তারি রিপোর্টে তাঁরা বলপূর্বক যৌন সংসর্গের কোনও প্রমাণ পাননি। অপেক্ষা করা হচ্ছে ফরেন্সিক রিপোর্টের। আজ বিকেলে সেই রিপোর্টেও ধর্ষণের চিহ্ন (বীর্য) মেলেনি বলে দাবি করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। সমাজকর্মীরা অবশ্য পুলিশের ওই যুক্তি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, শুধু মাত্র নিগৃহীতার শরীরে বীর্যের অনুপস্থিতিই এটা প্রমাণ করে না যে, ধর্ষণ হয়নি। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, উত্তরপ্রদেশ পুলিশ কি এটাও জানে না যে, এ দেশে ২০১৩ সালে ধর্ষণের সংজ্ঞা বদলানো হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, কোনও মহিলার যৌনাঙ্গে শুধু পুরুষাঙ্গ নয়, কোনও বস্তু প্রবেশ করানোটাও ধর্ষণের শামিল।

আরও পড়ুন:কৃষি আইনের বিরুদ্ধে পথে নামবেন রাহুল​

উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) প্রশান্ত কুমার যদিও সাংবাদিকদের সামনে দাবি করেছেন, তরুণী তাঁর জবানবন্দিতে মারধরের কথা বলেছিলেন, যৌন নির্যাতনের কথা একবারও বলেননি। শুধু মাত্র সরকার ও প্রশাসনকে কালিমালিপ্ত করার জন্যই এক দল মানুষ ধর্ষণ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলেও দাবি তাঁর। এই ধরনের গুজব ছড়ানো বরদাস্ত করা হবে না বলে রীতিমতো হুমকিও দিয়েছেন তিনি।

আজ সকালে সিটের সদস্যেরা নির্যাতিতা তরুণীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে তরুণীর বাড়ির আশেপাশে ঘেঁষতেই দেয়নি। তরুণীর দাদারা আজও দাবি করেছেন, তাঁদের বাড়িতে তালাবন্দি করে রাখা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমকে তরুণীর পরিবারের ধারেকাছে ঘেঁষতে না দেওয়া হলেও একটি টিভি চ্যানেল তরুণীর এক দাদাকে ফোনে ধরেন। তিনি জানান, ফরেন্সিক রিপোর্ট তাঁরা মানেন না। তাঁর আরও দাবি, প্রশাসন বারবার হুমকি দিচ্ছে তাঁদের। এমনকি তাঁদের বাড়ির ছাদে পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই চাপের মধ্যে বেশি দিন আর ওই গ্রামে থাকা যাবে না বলেও আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন তাঁরা। বোনের মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন তিনি।

তরুণীর পরিবারের লোকজনের আরও অভিযোগ, তাঁরা দলিত আর অভিযুক্তেরা উচ্চবর্ণের ঠাকুর সম্প্রদায়ের লোক বলেই তাঁদের সব সময় হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হাথরসের ঘটনা নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আজ মামলা দায়ের করে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ উত্তরপ্রদেশ সরকারকে নোটিস পাঠিয়েছে।

আজ সকালেই কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা টুইটারে নির্যাতিতা তরুণীর বাবার একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেন। যেখানে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, প্রশাসন তাঁদের উপরে জোরজবরদস্তি করছে। তিনি পুলিশি তদন্তে একটুও সন্তুষ্ট নন। মেয়ের মৃত্যুর সিবিআই তদন্তও দাবি করেন তিনি। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই একটি সর্বভারতীয় নিউজ় চ্যানেল হাথরসের জেলাশাসক প্রবীণ কুমার লক্ষকরের একটি ভিডিয়ো ফাঁস করে। যেখানে তাঁকে তরুণীর বাবাকে হুমকি দিয়ে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘মিডিয়া এখানে কত দিন থাকবে। থাকব তো আমরাই। ভেবে দেখুন নিজের বিবৃতি পাল্টাবেন কি না।’’

প্রশাসনের চাপের মুখে পরে তরুণীর বাবা নিজের বয়ান পাল্টান বলে দাবি করেছে সংবাদমাধ্যমের একাংশ। তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলাশাসক। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আজ নির্যাতিতার বাড়ি তিনি গিয়েছিলেন বটে। কিন্তু তাঁর নামে যে সব গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তা আদৌ সত্যি নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hathras Gangrape Rape Crime Uttar Pardesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE