Advertisement
E-Paper

নোট বাতিলের পথ ব্যর্থ হবে, মত অভিজিতের

নাগপুরের থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার। বিভাপুর লঙ্কা চাষের জন্য বিখ্যাত। এই সময়ে ফসল ওঠে। বিশাল স্তূপাকৃতি সেই লঙ্কার মধ্যে থেকে কাঁচা-পাকা আলাদা করতে হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ ১৬:২৫
অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নাগপুরের থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার। বিভাপুর লঙ্কা চাষের জন্য বিখ্যাত। এই সময়ে ফসল ওঠে। বিশাল স্তূপাকৃতি সেই লঙ্কার মধ্যে থেকে কাঁচা-পাকা আলাদা করতে হয়। তার পরে ডাঁটা ছাড়াতে হয়। তার পরে সেই লঙ্কা রফতানি হয়ে যায় মেক্সিকো, শ্রীলঙ্কা, চিন-সহ নানা দেশে। এই কাজের জায়গাকে বলে সাঁতরা। প্রত্যেক বছর এই সময়ে বিভাপুরে প্রায় ৫০টি সাঁতরা বসে। কাজ পান প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক। লঙ্কার তীব্র ঝাঁঝের মধ্যে কাশতে কাশতে কাজ করলে মেলে কিলো প্রতি ১০ টাকা। দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করলে সপ্তাহে জোটে বড়জোর হাজার টাকা। নোট বাতিলের পরে এ বার জুটছে তার প্রায় অর্ধেক। কারণ, আগে যেখানে মাইনে দিতে সপ্তাহের শেষে চার লক্ষ টাকা লাগত, এখন সাঁতরার মালিক সারা সপ্তাহ এ-ব্যাঙ্কে ও-ব্যাঙ্কে দাঁড়িয়ে মাত্র দেড় লক্ষ টাকাই জোটাতে পেরেছেন। অধিকাংশ শ্রমিকের কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই নেই। শিক্ষিতের সংখ্যাও কম। ফলে চেক দেওয়ার কোনও মানে হয় না। ফলে এ বার ভিভাপুরে আর ৫০টা নয়, সাঁতরা বসেছে মাত্র একটি।

আরও পড়ুন: পাসপোর্টের রং দেখি না, রক্তের সম্পর্কটা দেখি: প্রবাসীদের বললেন মোদী

বিভাপুর একটি উদাহরণ মাত্র। নোট বাতিলের সময়ে এই ধরনের শ্রমিকদের অবস্থা নিয়ে কি আদৌ ভেবেছেন মোদী? কালো টাকার যাঁতাকলে আজ যাঁদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। এই পুরো প্রক্রিয়াটাই বোধগম্য নয় অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এমনই মন্তব্য করেছেন তিনি। এবং তাঁর আশঙ্কা, ক্ষতির পরিমাপটা আমরা এখনও ঠিকমতো করতে পারিনি। হয়তো তা আমাদের আন্দাজের থেকে অনেক বেশি। কারণ, সংগঠিত ক্ষেত্রের উপরে দাঁড়িয়ে আমরা অসংগঠিত ক্ষেত্রের আন্দাজ পাই। ফলে আমাদের মোট অভ্যন্তরীন উৎপাদন (জিডিপি) অনেক সময়ে ক্ষতির পুরো আন্দাজটা দিতে পারে না।


ভারতের শ্রমিকদের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করে। এই ক্ষেত্রটি প্রধানত নগদের উপরে নির্ভরশীল। সেই নগদের জোগানে টান পড়ায় এক বড় অংশের শ্রমিক কাজ হারাচ্ছেন। কাজ হারিয়ে শ্রমিকদের বাড়ি ফিরে আসার ঢল নেমেছে। অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশঙ্কার প্রাথমিক প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে। তবে ব্যাপারটি আরও পরিষ্কার করা বোঝার জন্য সমীক্ষা শুরু করার কথা বলেছেন অভিজিৎবাবু। এই ধরনের গবেষণায় এমআইটি-র অধ্যাপক অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। ‘আব্দুল জামিল প্রভাটি অ্যাকশন ল্যাব’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎবাবু দারিদ্র নিয়ে হাতে-কলমে কাজ করেছেন। দারিদ্রের নানা দিক নিয়ে এসথের ডুফলোর সঙ্গে লেখা ‘পুওর ইকনমিক্স’ বইটিও বিশ্বময় সুনাম কুড়িয়েছে। তাঁর মতে, মোদীর এই ঘোষণার পরে তাঁর মতোই বিশ্বের অর্থনীতিবিদের মহলকে খানিকটা হতচকিত করে দিয়েছে। নোটবাতিলের পরে কেনই বা দু’হাজার টাকার নোট বাজারে ছাড়া হল তাও অভিজিৎবাবুর কাছে বোধগম্য নয়।

আরও পড়ুন: এটিএম, কার্ড অকেজো হয়ে যাবে তিন বছরেই! বলছে নীতি আয়োগ

মোদীর মতো কেউ কেউ ধারণা করেছেন ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু সেই সম্পর্কেও সন্দিহান অভিজিৎবাবু। তাঁর ধারণা, বিপুল অসংগঠিত ক্ষেত্র কী ভাবে নগদের অভাবের সঙ্গে জুঝে উঠছে তার উপরও অনেক কিছুই নির্ভর করছে। এই ধাক্কা সামলানোর একটি উপায় মালিক ও শ্রমিকের সমঝোতা করে কাজ চলানো। অভিজিৎবাবুদের চালানো সমীক্ষা সেই দিকটিও খতিয়ে দেখবে। আর একটি উপায় হল একশো দিনের কাজের পরিধি আরও বাড়িয়ে দেওয়া। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় পঞ্চায়েত ও প্রশাসনকে অত্যন্ত সক্রিয় হতে হবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারকেও নিজের ঝুলি খুলে দিতে হবে। কিন্তু ভারতের মতো দেশে সেই আশা করাও কঠিন বলে মনে করেন অভিজিৎবাবু। তাঁর মতে, ২০০৯-এ যখন সহজে ঋণ মিলছিল তখনও সক্রিয়তা দেখা যায়নি। এর অন্যতম কারণ আমাদের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার দুর্বলতা।
তবে নগদবিহীন অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হিসেবে কাম্য বলে মনে করেন অভিজিৎবাবু। কিন্তু মোদী যে কালো টাকার কথা বলে নোট বাতিলের পথে হাঁটলেন তা সফল হবে না বলেই ধারণা তাঁর। বাতিল হওয়া প্রায় ৯৭ শতাংশ নগদেরই ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় ফিরে আসার কথা যদি সত্য হয়, তা হলে মোদীর ঘোষিত লক্ষ্য আদৌ পূরণ হয়নি। ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় এখনও বিপুল অনাদায়ী ঋণ রয়েছে। অভিজিৎবাবুর মতে, শিল্পপতিদের একাংশ বিপুল ঋণ নিয়ে ফেরত দেননি। এই ঋণ ফেরানোর জন্য প্রশাসন, আইন ও বিচারব্যবস্থাকে আরও সক্রিয় হতে হত। অদ্ভুত ভাবে এ সম্পর্কে উদাসীন মোদীর সরকার। ঋণ ফেরত না দিয়ে পার পেয়ে যাওয়াটা ভারতীয় অর্থনীতির পক্ষে ভাল উদাহরণ নয় বলেই মনে করেন তিনি।

Abhijit Vinayak Banerjee Narendra Modi Demonetisation Indian Economy Economic Crisis Note Ban Prime Minister Unorganised Sector Working People
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy