Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
National news

৩৪ বছর কেউ জানতে পারেনি, ইনি রঘুরাম রাজনেরও শিক্ষক ছিলেন

গাল ভর্তি কাচা-পাকা দাড়ি। মাথায় উস্কোখুস্কো চুল। আর পরনে সাধারণ পায়জামা-কুর্তা। কাঁধে একটি ঝোলা ব্যাগ। চোখেমুখের ভাষাও যেন আর পাঁচ জনের থেকে একটু আলাদা। এমন একজনকে গ্রামের মধ্যে ইতিউতি ঘুরে বেড়াতে দেখেই সন্দেহ জেগেছিল মধ্যপ্রদেশের বেতুল গ্রামের বাসিন্দাদের।

আলোক সাগর। ছবি: ফেসবুক।

আলোক সাগর। ছবি: ফেসবুক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৩:২৩
Share: Save:

গাল ভর্তি কাচা-পাকা দাড়ি। মাথায় উস্কোখুস্কো চুল। আর পরনে সাধারণ পায়জামা-কুর্তা। কাঁধে একটি ঝোলা ব্যাগ। চোখেমুখের ভাষাও যেন আর পাঁচ জনের থেকে একটু আলাদা। এমন একজনকে গ্রামের মধ্যে ইতিউতি ঘুরে বেড়াতে দেখেই সন্দেহ জেগেছিল মধ্যপ্রদেশের বেতুল গ্রামের বাসিন্দাদের। সামনেই জেলাভিত্তিক নির্বাচন, কোনও গোল পাকাতে আসেনি তো লোকটা? তাই তাঁকে গ্রাম থেকে তাড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরা। টেনে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে সেখানেই ৩৪ বছর ধরে লুকিয়ে রাখা নিজের পরিচয়টা খোলসা করতে বাধ্য হন তিনি। তিনি অর্থাৎ প্রায় ভবঘুরের বেশে থাকা ওই লোকটি। যিনি কি না আসলে দিল্লি আইআইটির প্রাক্তন প্রফেসর আলোক সাগর। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনের শিক্ষক! যাঁর ঝুলিতে রয়েছে মার্কিন তালুকের পিএইচডি ডিগ্রি! দেশ-বিদেশের সাতটি ভাষা অনর্গল বলে যেতে পারেন। যা শুনে পুলিশ থেকে গ্রামবাসী সকলেই তাজ্জব।

তবে এই পরিচয় তাঁর কাছে আর গুরুত্ব পায় না। তিনি নিজেকে আদিবাসী পরিবারের ‘একজন’ বলতেই পছন্দ করেন। এই টানেই এক লহমায় দিল্লির বিলাসবহুল জীবনের মোহ ত্যাগ করে ফেলেছিলেন। চলে আসেন মধ্যপ্রদেশের এক প্রত্যন্ত এলাকায়। থাকতে শুরু করেন আদিবাসীদের সঙ্গে।

আরও পড়ুন: ‘অচ্ছে দিন’ গলার কাঁটা, মানছেন মোদী

আলোক জানান, প্রথম থেকেই তাঁর পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু অন্য অনেকের মতো শুধুমাত্র অর্থ সাহায্য দিয়ে এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে চাননি। উল্টে তাঁদের আরও কাছ থেকে দেখার জন্য, তাঁদের অসুবিধাগুলোকে কাছ থেকে পরখ করার জন্য নিজেই সেই জীবনকে বেছে নেন।

১৯৮২ সালে দিল্লি আইআইটি-র শিক্ষকতা থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন কোচামু নামে মধ্যপ্রদেশের এক প্রত্যন্ত এলাকায়। যে এলাকায় যাতায়াতের রাস্তা পর্যন্ত তৈরি হয়নি। আদিবাসী শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ শুরু করেন এই এলাকার মানুষগুলোর জন্য। বাচ্চাদের পড়াশোনা শেখানো থেকে পরিবেশ রক্ষায় তাঁদের কাজে লাগানো কিংবা চাষাবাদ, সবটাই একা হাতে সামলে আসছেন তিনি। ওই দিন শস্যের বীজ বিক্রি করতেই তিনি কোচামু থেকে মধ্যপ্রদেশের বেতুলে এসেছিলেন। বাড়ি বাড়ি ঘুরে আদিবাসীদের তৈরি করা সেই বীজই বিক্রি করছিলেন। অচেনা এক ব্যক্তিকে এরকম ঘুরে বেড়াতে দেখে সন্দেহ হয় গ্রামবাসীদের। ধরে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়।


জি়জ্ঞাসাবাদের পরে থানায় বসে রয়েছেন তিনি।

কিন্তু এত অপমানের পরেও ওই লোকগুলোর প্রতি বিন্দুমাত্র ক্ষোভ জমেনি তাঁর মনে। তিনি জানান, আদিবাসীদের জীবনটাই তো এ রকম। দিনরাত বহু বঞ্চনা সহ্য করতে হয় তাঁদের। এখন তাঁর বয়স ৬৪ বছর। শরীরে আগের মতো আর বল নেই। কিন্তু মনের জোরে এখনও দিনরাত উৎসর্গ করছেন ওই মানুষগুলোর জন্যই। হয়তো ভবিষ্যতেও আরও অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। তবু বাকি জীবনটা এ ভাবেই তাঁদের ‘একজন’ হয়ে কাটিয়ে দিতে চান। আরামের জীবন ছেড়ে এসেছিলেন স্বেচ্ছায়। এমন একটুআধটু সমস্যায় কী এসে যায় তাঁর! এই পৃথিবীর পাঠশালায় আলোকের মতো শিক্ষকরা নিজের জীবনের আলো দিয়েই শিখিয়ে যান আমাদের, মানুষকে ভালবাসার গান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

alok sagar madhyapradesh raghuram rajan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE