Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বৃষ্টি হলেই বেহাল! মুম্বই নিয়ে ক্ষুব্ধ আদালতও

দুর্যোগের দাপটে কাজ বন্ধ করেছেন ডাব্বাওয়ালারা। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস জানিয়েছেন, পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে মহারাষ্ট্র সরকার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপর রয়েছে নৌবাহিনী ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।

জলমগ্ন: ভারী বৃষ্টিতে জলের তলায় রাস্তাঘাট। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।

জলমগ্ন: ভারী বৃষ্টিতে জলের তলায় রাস্তাঘাট। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮ ০২:৪৪
Share: Save:

নাগাড়ে বৃষ্টি। রেললাইন-পিচরাস্তা জলের তলায়। নগরজীবন লন্ডভন্ড। বর্ষার মুম্বইয়ের পুরনো ছবিটাই ফিরে এল ফি-বছরের মতো। এবং একই দিনে তা নিয়ে চূড়ান্ত অসন্তোষ প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট থেকে বম্বে হাইকোর্ট।

গত কাল সারা রাত ভারী বৃষ্টি হয়েছে মুম্বই ও তার আশপাশের এলাকায়। অধিকাংশ রাস্তাঘাটই জলের তলায়। দূরপাল্লার ট্রেন কিছু বাতিল হয়েছে, কিছু দেরিতে চলছে। এমনকি জমা জলে আটকে পড়া দূরপাল্লার দু’টি ট্রেন থেকে রীতিমতো ‘উদ্ধার’ করতে হয়েছে যাত্রীদের। দুর্যোগের দাপটে কাজ বন্ধ করেছেন ডাব্বাওয়ালারা। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস জানিয়েছেন, পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে মহারাষ্ট্র সরকার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপর রয়েছে নৌবাহিনী ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।

কিন্তু তাতে কোর্টের ধমক এড়ানো যায়নি। জঞ্জাল না-সরালে যে জল জমার থেকে রেহাই নেই, সে দিকে ইঙ্গিত করে শীর্ষ আদালত বলেছে, মুম্বই ডুবে গেলেও সরকারের কোনও হেলদোল নেই। আর রেলকে ভর্ৎসনা করে বম্বে হাইকোর্ট বলেছে, বর্ষার জন্য কোনও সাবধানতাই নেননি কর্তৃপক্ষ। বৃষ্টি হলেই শহরতলির রেললাইনে জল জমে যায়। এটা বহু বছর ধরেই চলে আসছে। তা সত্ত্বেও সেন্ট্রাল ও ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে কিছুই করে না। জল জমা রুখতে রেললাইনের উচ্চতা বাড়ানো হচ্ছে না কেন?

বাণিজ্যনগরীকে কোনও ভাল খবর শোনাতে পারেনি আবহাওয়া দফতর। পূর্বাভাস বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত চলবে। কোলাবার হাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত কাল সকাল সাড়ে আটটা থেকে আজ সকাল সাড়ে আটটা— এই ২৪ ঘণ্টায় ১৬৫.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে মুম্বইয়ে। আবার সান্তাক্রুজের হাওয়া অফিস জানিয়েছে, মুম্বই শহরতলিতে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৮৪.৩ মিলিমিটার। ভারী বৃষ্টিতে মুম্বই শহর ও শহরতলিতে জল সরবরাহের অন্যতম উৎস তুলসি হ্রদও উপচে গিয়েছে।

রেলের এক অফিসার জানান, রাতের বৃষ্টিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে বসেছে। অধিকাংশ লাইনই জলের তলায়। ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে টুইট করে জানিয়েছে, এসি লোকাল আপাতত চালাবে না তারা। ভাসাই রোড ও নালাসোপারার মাঝখানে আটকে পড়া মুম্বইগামী একটি শতাব্দী এক্সপ্রেস এবং বডোদরা এক্সপ্রেসের অন্তত ২০০০ যাত্রীকে উদ্ধার করে দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। একটা সময়ে দেখা যায়, রেললাইনে চলছে রবারের ভেলা!

চার্চগেটে-ভাসাই রোড রেলপথে অবশ্য ট্রেন চলছে। তবে যথেষ্ট মিনিট দেরিতে। ন’টি ট্রেন বাতিল করেছে ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে। সেন্ট্রাল রেলওয়ের অবস্থাও শোচনীয়। এক অফিসার জানান, মেন ও হারবার লাইনে ১৫-২৫ মিনিট দেরিতে চলছে লোকাল ট্রেন। তিনটি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে। বি
ভিন্ন স্টেশনে আটকে থাকা দূরপাল্লার ট্রেনগুলির যাত্রীদের জন্য পানীয় জল ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয় রেলের তরফে।

শুধু রেল নয়, বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত সড়কপথও। মুম্বই-সহ পালঘর, ঠাণে জেলার বেশির ভাগ রাস্তাঘাট এবং অপেক্ষকৃত নিচু এলাকা জলমগ্ন। বৃহন্মুম্বই পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা ইউনিট জানিয়েছে, জলমগ্ন এলাকাগুলির তালিকায় রয়েছে— হিন্দমাতা, প্যারেল, কিংস সার্কল, ধারাভি, কুর্লা, সায়ন, ভান্ডুপ, ভিখরৌলি, মুলুন্দ, দাদর ও বোরিভলী। ওয়েস্টার্ন এক্সপ্রেস হাইওয়েতে যানবাহনের চলাচল ছিল ধীর গতিতে। কিছু কিছু জায়গায় প্রায় এক কোমর জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। ফলে বেশির ভাগ মানুষই ঘরবন্দি। প্রয়োজনে স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ গোড়াতেই দিয়ে রেখেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী বিনোদ তাউড়ে। কিন্তু যাঁদের একেবারে না-বেরোলেই নয়, হাঁটু-সমান জল ঠেলেই যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। স্বাভাবিক ভাবেই দেরি হচ্ছে গন্তব্যে পৌঁছতে।

এই অবস্থায় কাজ বন্ধ রেখেছেন ডাব্বাওয়ালারা। ফলে খাবারদাবার পৌঁছয়নি অফিসে। মুম্বইয়ে ডাব্বাওয়ালাদের সংগঠনের মুখপাত্র সুভাষ তালেকর বলেন, ‘‘জলমগ্ন শহরে আজ আমরা টিফিন সংগ্রহ করতে বেরোতে পারিনি। হাঁটুজলে সাইকেলে চেপে কাজটা করা কষ্টকর।’’ এই পরিস্থিতিতে আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় সাইক্লোনের একটি খবর ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহন্মুম্বই পুরসভা ওই গুজবে কান না-দিতে পরামর্শ দিয়েছে নগরবাসীকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE