বাড়ি থেকে পালানো খুদেরা প্রথম গন্তব্য হিসেবে এখনও রেল স্টেশনকেই ধ্রুবজ্ঞান করে। আবার দিশাহারা শিশুদের একটা বড় অংশকে পাওয়া যায় স্টেশনেই।
এই ধরনের বালক-বালিকাদের উদ্ধারের পরে তাদের সাময়িক নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ‘শর্ট স্টে হোম’ বা স্বল্প সময়ের আবাস তৈরি করবে রেল। ওই সব আবাস তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলিকে বেছে নেওয়া হচ্ছে বলে রেল বোর্ড সূত্রের খবর। সেখানে শিশুদের সর্বতোভাবে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা ছাড়াও তাদের শুশ্রূষার সুবন্দোবস্ত থাকবে।
চলতি আর্থিক বছরকে মহিলা ও শিশুদের নিরাপত্তার জন্য আলাদা ভাবে চিহ্নিত করেছে রেল। সেই জন্য রেলের বিভিন্ন জ়োন বা অঞ্চলে সচেতনতা শিবির করা হয়েছে।
স্টেশনে খুঁজে পাওয়া শিশুদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, সেই বিষয়ে সম্প্রতি জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের সঙ্গে যৌথ ভাবে একটি ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ বা এসওপি প্রকাশ করেছে রেল বোর্ড। তার পরেই রেলের তরফে ‘শর্ট স্টে হোম’ তৈরি করার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। ওই আবাস কেমন হবে, সেখানে কী কী ব্যবস্থা রাখতে হবে, তার রূপরেখা ঠিক করে দিয়েছে রেল বোর্ডই।
স্টেশন-চত্বরে দু’হাজার বর্গফুটের জায়গা খুঁজে ওই সব আবাস তৈরি করতে হবে। প্রতিটি আবাসে অন্তত এক হাজার বর্গফুটের একটি ডর্মিটরি রাখতে হবে, যাতে ২৫টি শিশুকে একসঙ্গে রাখা যায়। অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসার জন্য ৭৫ বর্গফুটের আলাদা কামরার ব্যবস্থা রাখতে হবে। থাকবে দু’টি শৌচালয়। জিনিসপত্র রাখতে চাই ১২৫ বর্গফুটের একটি ‘স্টোররুম’। শিশুদের দেখাশোনা করার জন্য এক জন ‘অ্যাটেন্ড্যান্ট’ বা সহায়ক থাকবেন। উদ্ধার করে আনা শিশুদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করবে রেল। শিশুদের নিয়ে কাজ করে, এমন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যৌথ ব্যবস্থাপনায় কল্যাণমূলক প্রকল্প রূপায়িত করবে রেলওয়ে উইমেনস ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন। রেলরক্ষী বাহিনী শিশুদের ছবি তুলে রাখবে, যাতে পরিবারের লোকজন তাদের খুঁজে পেতে পারেন।
“জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের পরামর্শক্রমে রেল বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্যগুলির সঙ্গে এই বিষয়ে রেলের কোনও আলোচনা হয়নি,” বলেন তবে রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী।
ওই কমিশন সূত্রের খবর, স্টেশন বা ট্রেন থেকে উদ্ধার করে আনা শিশুদের রেল নিজস্ব চাইল্ডলাইনে রাখলেও বিষয়টি স্থানীয় শিশু কল্যাণ সমিতিকে জানানো বাধ্যতামূলক। কখনওই ওই শিশুদের ২৪ ঘণ্টার বেশি নিজের কাছে রাখতে পারে না রেল। শিশুদের পরিবারে ফিরিয়ে দিতে হলেও তা করতে হয় শিশু কল্যাণ সমিতির মাধ্যমেই। সেই জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলিতে শিশু কল্যাণ সমিতির আধিকারিকেরা থাকেন।
তা হলে কী ভাবে কাজ করবে রেলের ওই সব শর্ট স্টে হোম?
রেলের এক কর্তা জানান, শিশু কল্যাণ সমিতির সঙ্গে সমন্বয় রেখেই এত দিন কাজ হয়েছে। ভবিষ্যতেও তা বহাল থাকার কথা। ‘‘উদ্ধার হওয়া শিশুদের সমিতির হাতে দেওয়ার আগে তাদের সাময়িক ভাবে রাখার পরিকাঠামো উন্নত করবে রেল। তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলিতে জায়গা খোঁজা হচ্ছে,’’ বলেন ওই রেলকর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy