Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চিচিং বন্‌ধ! জনধনে অন্যের জমা টাকা ফেরত দেবেন না, মন্ত্রণা নরেন্দ্র মোদীর

অর্থনীতিতে কালো টাকা আটকাতে রাতারাতি ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন। পরের ২৪ দিন ধরে হাজার সমালোচনাতেও এতটুকু পিছু হটেননি। আর নোট বাতিলের ২৫তম দিনে উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে ‘পরিবর্তন সভা’য় দাঁড়িয়ে কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এক অন্য অস্ত্র ব্যবহার করলেন নরেন্দ্র মোদী।

সংবাদ সংস্থা
মোরাদাবাদ (উত্তরপ্রদেশ) শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২৯
Share: Save:

অর্থনীতিতে কালো টাকা আটকাতে রাতারাতি ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন। পরের ২৪ দিন ধরে হাজার সমালোচনাতেও এতটুকু পিছু হটেননি। আর নোট বাতিলের ২৫তম দিনে উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে ‘পরিবর্তন সভা’য় দাঁড়িয়ে কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এক অন্য অস্ত্র ব্যবহার করলেন নরেন্দ্র মোদী।

নরেন্দ্র মোদীর নয়া হাতিয়ার, জনধন অ্যাকাউন্ট। মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বেই যার সূচনা। এই মুহূর্তে দেশের সাড়ে ২৫ কোটিরও বেশি মানুষের এই অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

নোট বাতিলের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ-সহ নানা রাজ্যে জনধন অ্যাকাউন্টে বিপুল টাকা জমা পড়ছে বলে জেনেছিলেন গোয়েন্দারা। এর একটা বড় অংশ কালো এবং কালো টাকাকে সাদা করতে অসাধু ব্যবসায়ীরা জনধন অ্যাকাউন্টকে হাতিয়ার করছে বলেও দাবি গোয়েন্দাদের। এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রক এবং প্রধানমন্ত্রী বারবার কড়া শাস্তির দাওয়াই দিয়েছেন। কিন্তু জনধন খাতে টাকা জমা পড়া কমেনি। এ বারে জনধন অ্যাকাউন্টকেই পাল্টা হাতিয়ার করে কালো টাকার কারবারিদের প্যাঁচে ফেলতে চাইলেন মোদী। মোরাদাবাদে তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের জনধন অ্যাকাউন্টে যদি অন্য কেউ টাকা রেখে থাকেন, তা হলে তাঁদের সেই টাকা ফেরত দেবেন না। আপনারা যদি এই প্রতিশ্রুতি দেন, তা হলে যাঁরা বেআইনি ভাবে টাকা রেখেছেন, তাঁদের কী ভাবে জেলে পোরা যায়, সেটা আমি দেখছি।’’

কিন্তু যাঁরা অন্যের জনধন অ্যাকাউন্টে কালো টাকা রেখেছেন, তাঁরা কি ছেড়ে দেবেন? বিশেষ করে গরিব মানুষদের ভয় দেখিয়ে বা নানা উপায়ে ওই টাকা তাঁরা আদায় করবেন না? এমন সম্ভাবনার কথা যে তাঁর মাথায় আছে, তা স্পষ্ট করে দিয়ে মোদী বলেন, ‘‘টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য দেখবেন, ওঁরা কী ভাবে আপনাদের পায়ে পড়ে! আর ওঁরা যদি ভয় দেখায়, শুধু বলবেন, আমি মোদীকে চিঠি লিখছি!’’

যদিও মোদীর এমন পরামর্শের তীব্র সমালোচনা করেছে কংগ্রেস। দলের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী কখনও এমন পরামর্শ দিতে পারেন! কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার কথায়, ‘‘একজন প্রধানমন্ত্রীর মুখে এমন কথা ভয়ঙ্কর ও লজ্জাজনক।’’

শুধু জনধন অ্যাকাউন্ট নয়। অর্থ মন্ত্রকের মাথাব্যথার কারণ গত ক’দিনে ব্যাঙ্কে জমার পরিমাণ বিপুল বেড়ে যাওয়াও। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, নোট বাতিলের পরে অনেকে নিজের অ্যাকাউন্টেও হিসেব বহির্ভূত টাকা জমা করছেন। এ দিন তাঁদের প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি দিয়ে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানান, হিসেবের বাইরের টাকা এ ভাবে ব্যাঙ্কে জমা দিলেই তা সাদা হয়ে যায় না। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু জমা দিলেই হবে না, আপনাকে ওই (হিসেব বহির্ভূত) টাকার উপরে কিন্তু করও দিতে হবে।’’

গত ক’দিনে উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর, আগরা এবং কুশীনগরে ‘পরিবর্তন সভা’য় বক্তৃতা দিয়েছেন মোদী। নোট বাতিল নিয়ে সর্বত্রই মুখ খুললেও এ দিনের মতো সুর কোথাও চড়াননি বলেই বিজেপি নেতাদের দাবি। ব্যাঙ্ক ও এটিএমের বাইরে দীর্ঘ লাইন এবং মানুষের ভোগান্তির প্রসঙ্গ তুলে বিরোধীরা সরব। সমালোচনার মুখে এক সময় মোদী বলেছিলেন, টু-জি-সহ নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িত এবং কালো টাকার মালিকরাই ব্যাঙ্কে লাইন দিচ্ছেন! তাঁর এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা হয় নানা মহলে। এ দিন যেন তারই প্রায়শ্চিত্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁরা সৎ, তাঁরা এখন ব্যাঙ্কের বাইরে লাইন দিচ্ছেন। আর যাঁরা অসৎ, তাঁরা আজ গরিবদের বাড়ির সামনে লাইন দিচ্ছেন।’’ বিরোধীদের আক্রমণকে যে তিনি গুরুত্ব দেন না, তা বোঝাতে গিয়ে মোদী বলেন, ‘‘ওরা আমার কী করবে? আমি তো একজন ফকির! ঝোলাটুকু নিয়ে চলে যাব।’’

এ দিন নাম না করে কংগ্রেসকে বারবার বিঁধেছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘৭০ বছর ধরে নানা প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য মানুষকে বিভিন্ন লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে! সব লাইন বন্ধ করার জন্য এই লাইনই (ব্যাঙ্কের বাইরে) শেষ লাইন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

PM Modi Jan Dhan account
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE