Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সংবিধান সামনে রেখে সপাটে আক্রমণ সনিয়ার

সংসদে সারা দিন বসে এক মনে বিতর্ক শুনছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত আঠারো মাসে শেষ কবে এমন হয়েছে? গত লোকসভা ভোটের পর থেকে সংসদে সনিয়া গাঁধীর মনমরা মুখটাই ছিল প্রায় রোজকারের ছবি!

লোকসভায় সনিয়া গাঁধী ও রাজনাথ সিংহ। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

লোকসভায় সনিয়া গাঁধী ও রাজনাথ সিংহ। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৭
Share: Save:

সংসদে সারা দিন বসে এক মনে বিতর্ক শুনছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত আঠারো মাসে শেষ কবে এমন হয়েছে?

গত লোকসভা ভোটের পর থেকে সংসদে সনিয়া গাঁধীর মনমরা মুখটাই ছিল প্রায় রোজকারের ছবি! যদিও গত বাদল অধিবেশনে সেই সনিয়াকেই আঙুল উঁচিয়ে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে দেখেছে সংসদ। কিন্তু শাসক দলকে তীক্ষ্ণ আক্রমণ করে সমুদ্র নীল ডোরা শাড়িতে সনিয়া শ্লেষের হাসি হাসছেন, শেষ কবে এমন দেখেছে লোকসভা?

বিহার নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে এ ভাবেই বদলে গেল লোকসভার ছবিটা! বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, অধিবেশন চলাকালীন সংসদেই আসেন না প্রধানমন্ত্রী। এলেও সংসদ ভবনে নিজের ঘরেই বসে থাকেন। আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লোকসভায় ঠায় বসে থাকা প্রধানমন্ত্রীকে দেখে শাসক শিবিরের নেতারাই আড়ালে বলছেন, ‘‘দেখে বোঝা যাচ্ছে, ঝড় বয়ে গেছে ওঁর ওপর দিয়ে!’’ অন্য দিকে মাত্র ৪৫ জন সাংসদ নিয়ে কংগ্রেস শিবিরে বদলটাও চোখে পড়ার মতো! মুখে সংসদ সচল রাখার কথা বললেও শরীরী ভাষায় প্রতি মুহূর্তে যেন বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, শাসক দল গড়বড় করলে অধিবেশন পণ্ড করতে দ্বিধা করবেন না তাঁরা!

সংবিধান দিবস উপলক্ষে লোকসভায় আজ এবং আগামিকাল ভীমরাও অম্বেডকরের স্মৃতিতে বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। কিন্তু প্রকারান্তরে সংবিধান পড়ে রইল পাশে! বরং তাকে হাতিয়ার করে বিহারোত্তর সনিয়া কার্যত একাই কোণঠাসা করে ফেললেন সরকারকে। আর শাসক দল? তারা আজ অন্তত রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টাই করে গেল!

এ দিন বিতর্ক শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সবাইকে চমকে দিয়ে সংবিধান রচনা ও দেশের সাংবিধানিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জওহরলাল নেহরুর অবদানের প্রসঙ্গ তোলেন। নেহরু নিয়ে বিজেপির এই সুর বদল অনেকেরই কানে লেগেছে। তবে একই সঙ্গে রাজনাথ বলেন, ‘‘সেকুলারিজম শব্দটির ইদানীং সব থেকে বেশি অপব্যবহার হচ্ছে। সে জন্য সামাজিক অশান্তি বাড়ছে। অম্বেডকর কিন্তু সংবিধানে এই শব্দ রাখেননি। পরে সংবিধান সংশোধন করে তা ঢোকানো হয়। তা ছাড়া সেকুলারিজমের অর্থ ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, পন্থ নিরপেক্ষতা (পথ নিরপেক্ষতা)।’’ রাজনাথের কথায় রে রে করে ওঠেন কংগ্রেস সাংসদরা। লোকসভায় কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে বলেন, ‘‘সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি রাখতে কারা বাধা দিয়েছিল, বলব নাকি!’’ রাজনাথ অবশ্য থামেননি। ঘুরিয়ে আমির খানকে কটাক্ষ করে তিনি
বলেন, ‘‘অম্বেডকর কিন্তু শত সমস্যাতেও এ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার কথা ভাবেননি!’’

বিতর্কে অংশ নিয়ে সনিয়া বলেন, ‘‘বাবাসাহেবই বলে গিয়েছিলেন, সংবিধান যতই ভাল হোক না কেন, তা বাস্তবায়ন যাঁরা করবেন, তাঁরা খারাপ হলে তো সংবিধান খারাপ বলেই প্রতিপন্ন হবে।’’ এ কথা বলেই শাসক বেঞ্চের দিকে শ্লেষের সুরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যাঁদের সংবিধানের মূল্যবোধের ওপর সামান্যতম আস্থা নেই, সংবিধান রচনায় যাঁদের কোনও ভূমিকা ছিল না, তাঁরাই এখন সংবিধানের নামে শপথ নিচ্ছেন! এর থেকে হাস্যকর আর কী হতে পারে!’’ দলিত হত্যা, দাদরি কাণ্ড নিয়ে শাসক দলের একাংশের নেতিবাচক মন্তব্যের সময় চুপ থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কৈফিয়ত চায় কংগ্রেস। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহের ইস্তফার দাবিও তোলে তারা।

সংসদে চুপ করে থাকলেও সেখানে ঢোকার আগে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমাদের সংবিধান হল একটা আশার আলো। রে অব হোপ (HOPE)। এইচ ফর হারমনি (সম্প্রীতি), ও ফর অপরচ্যুনিটি (সুযোগ), পি ফর পিপ্‌লস পার্টিসিপেশন (জনগণের প্রতিনিধিত্ব) এবং ই ফর ইক্যুয়ালিটি (সমতা)।’’ কাল জবাবি বক্তৃতা দেবেন তিনি। অনেকেই বলছেন, মোদীর আজ দিনভর সংসদে বসে থাকাটাও কৌশলগত। তাঁকে সামনে পেয়ে বিরোধীরা যে ভাবে আজ আক্রমণাত্মক হয়েছেন, তাতে অসন্তোষের হাওয়া অনেকটা বেরিয়ে গিয়েছে। অসহিষ্ণুতা নিয়ে এর পরেও বিতর্ক হবে। কিন্তু তখন ঝাঁঝ কমে যাবে। এ বারে সংসদে বিলগুলি পাশ করানোর চেষ্টা করবেন মোদী।

যদিও কংগ্রেসের বক্তব্য, আলোচনার বিষয়বস্তুর অভাব নেই। অসহিষ্ণুতা তো রইলই, মূল্যবৃদ্ধি, সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা নিয়েও বিতর্ক চাইবে কংগ্রেস। মল্লিকার্জুনের কথায়, ‘‘সংসদ চালাতে কংগ্রেসও আগ্রহী। কিন্তু সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী যেন ভুলে না যান যে, দম্ভ দেখিয়ে, বিরোধীদের গুরুত্ব না দিয়ে তা সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

constitution threat sonia gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE