Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আইএসে আইএম জঙ্গি, উদ্বিগ্ন এনআইএ

ভারতে এখনও ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা কোনও শাখা খুলতে পারেনি বলে দাবি করলেন জয়েন্ট ইনটেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান আর এন রবি। তাঁর কথায়, “আমাদের সৌভাগ্য যে আইএস-এর মতো জঙ্গি গোষ্ঠীকে এখনও পর্যন্ত ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এই উপ-মহাদেশের অন্য দেশগুলিতে তারা সক্রিয়। সেটাই যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ।”

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় ও সুরবেক বিশ্বাস
ভুবনেশ্বর ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৯
Share: Save:

ভারতে এখনও ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা কোনও শাখা খুলতে পারেনি বলে দাবি করলেন জয়েন্ট ইনটেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান আর এন রবি। তাঁর কথায়, “আমাদের সৌভাগ্য যে আইএস-এর মতো জঙ্গি গোষ্ঠীকে এখনও পর্যন্ত ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এই উপ-মহাদেশের অন্য দেশগুলিতে তারা সক্রিয়। সেটাই যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ।”

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দফতরে কর্মরত ও দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ওই আধিকারিক শুক্রবার ভুবনেশ্বরে বিদেশ মন্ত্রক আয়োজিত ভারত ও ভারত মহাসাগর শীর্ষক এক আর্ন্তজাতিক সম্মেলনের প্রধান বক্তা ছিলেন। সম্মেলনের মাঝখানে আইএস নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে আনন্দবাজারকে রবি বলেন, “ভারতে ওদের (আইএস) কাজকর্ম বা নতুন শাখা খোলার খবর এখনও আমাদের কাছে নেই। বরং, যে সব ভারতীয় আইএস-এর ডাকে সাড়া দিয়ে বাইরে গিয়েছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই দেশে ফিরে এসেছেন।”

জয়েন্ট ইনটেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান যে দিন এই দাবি করছেন, তার ২৪ ঘণ্টা আগেই ভারতীয় গোয়েন্দারা জেনেছেন, কর্নাটকের ভটকল শহরের এক যুবক আইএস-এর যোদ্ধা হিসেবে লড়াই করতে গিয়ে সিরিয়ায় নিহত হয়েছেন। বছর চল্লিশের ওই যুবকের নাম সুলতান আবদুল কাদির আরমার। গত ৬ মার্চ সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তে, কোবানি এলাকায় এক লড়াইয়ে আরমার মারা যায় বলে জেহাদি জঙ্গি সংগঠন আনসার আল-তৌহিদ ফি বিলাদ আল-হিন্দ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। ওই কট্টর জেহাদি সংগঠন গত বছর কয়েকটি ভিডিও টেপ প্রকাশ করে। যেখানে দেখা গিয়েছিল মুখোশ পরা আরমারকে, সে ভারতীয় মুসলমান যুবকদের পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানের জঙ্গি শিবিরে প্রশিক্ষণের আহ্বান জানিয়েছিল।

বস্তুত, কর্নাটকের উত্তর কানাড়া জেলার ছোট বন্দর শহর ভটকলের সঙ্গে ভারতের দেশজ জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম) প্রায় সমার্থক। কারণ, আইএম-এর দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াজ ও ইকবাল সেখানকারই বাসিন্দা। আজ পর্যন্ত আইএম-এর ওই দুই মাথা ধরা পড়েনি। আবার আইএম-এর প্রাক্তন ‘অপারেশনাল চিফ’ জারার আমহেদ সিদ্দিবাপ্পা ওরফে ইয়াসিনও ভটকল শহরের যুবক। ইয়াসিন ভটকল অবশ্য ২০১৩-র অগস্টে ধরা পড়েছে।

প্রসঙ্গত, ভটকল শহরেরই আর এক যুবক আনোয়ার হুসেন গত বছরের মাঝামাঝি আফগানিস্তানের কন্দহরে জেহাদি হিসেবে যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা যায়। সে দিক দিয়ে, গোয়েন্দা-তথ্য অনুযায়ী আরমারকে নিয়ে ভটকল শহরের দুই যুবক ভারতের বাইরে জেহাদে যোগ দিয়ে নিহত হল।

জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) ও ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-র গোয়েন্দাদের একাংশের সন্দেহ, ভটকল তো বটেই, সেই সঙ্গে আজমগড়, দ্বারভাঙা, রাঁচি, জয়পুর ও মুম্বই--- যে সব শহর থেকে আইএম-এর প্রধান মডিউল বা গোষ্ঠীগুলির সদস্যেরা উঠে এসেছে, সেখান থেকেই সাম্প্রতিক কালে ইরাক ও সিরিয়ায় গিয়ে আইএস-এ যোগ দেওয়ার হিড়িক শুরু হয়েছে।

এনআইএ-র বক্তব্য, বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় সন্দেহভাজন যে সব আইএম সদস্য কিছুকাল ধরে পলাতক, তাদেরই একাংশ আইএস-এ যোগ দিতে ইরাক ও সিরিয়ায় পাড়ি দিয়েছে।

এনআইএ-র এক কর্তা বলেন, “আমাদের হিসেবে, চাঁইদের বাদ দিয়েও অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন আইএম সদস্য পলাতক। গত দু’বছরের কয়েকটি নাশকতার ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ আমরা পেয়েছি। সম্ভবত এদের একটা বড় অংশই ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস-এর যোদ্ধা হিসেবে লড়াই করছে। আবার এদের বাইরেও অনেকে থাকতে পারে, যাদের কথা আমরা জানিই না।”

গোয়েন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ইদানীংকালে এ দেশ থেকে ইরাকে যেতে কয়েক হাজার ভিসার আবেদন জমা পড়েছে, যা গত কয়েক বছরের চেয়ে অস্বাভাবিক রকম বেশি। মুম্বইয়ের কল্যাণ এলাকার চার যুবক আইএস-এর আহ্বানে ইরাকে গিয়ে লড়াইয়ে সামিল হয়েছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দারা প্রমাণ পেয়েছেন।

জয়েন্ট ইনটেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান রবির বক্তব্য, “যা ঘটছে, তা অবশ্যই চিন্তার বিষয়।” রবি জানান, মালয়েশিয়া, মলদ্বীপেও আইএসআইএসের কাজ কর্ম শুরু হয়েছে। যা ভারতের পক্ষে বিপজ্জনক। সেই কারণেই এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আইএস-এর মোকাবিলায় কী ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত? গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক রবি বলেন, “আগাম গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের উপরেই সব চেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে জঙ্গি গোষ্ঠীর কাজকর্ম নিয়েও নজর রাখা হচ্ছে।” ইরাক, ইরানের মতো দেশের থেকেও আগাম গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার কিছু সরকারি ও বেসরকারি যোগাযোগ তৈরি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, বর্তমানে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস-এর যোদ্ধা হিসেবে যারা লড়াই করছে, তাদের একাংশ নিশ্চিত ভাবেই ভারতের মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু ও কর্নাটক থেকে গিয়েছে। আবার কলকাতার উত্তর প্রান্তের কৈখালির বাসিন্দা মেহদি মসরুর বিশ্বাসকে গত ডিসেম্বর মাসে কর্নাটক পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বছর চব্বিশের যুবক, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার মেহদির বিরুদ্ধে অভিযোগ, আইএস-এর সব চেয়ে প্রভাবশালী ট্যুইটার অ্যাকাউন্টটি তিনি তৈরি করেছিলেন ও বেঙ্গালুরুতে বসে সেটি চালাচ্ছিলেন। ইরাক ও সিরিয়ায় লড়াই করা আইএস-এর যোদ্ধাদের অন্তত চার-পাঁচ জনের সঙ্গে ট্যুইটারে, ই-মেলে মেহদির যোগাযোগ ছিল বলে কর্নাটক পুলিশের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE